আফগানিস্তানে গণমাধ্যমকর্মীকে হত্যার পর নারী চিকিৎসককে হত্যা

25
গবেষনা প্রতিবেদন
সম্পাদনা:জিয়াউদ্দীনচৌ: ( জেড সেলিম )
আফগানিস্তানে তিন নারী গণমাধ্যমকর্মীকে গুলি করে হত্যার দু’দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার এক নারী চিকিৎসককে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর জালালাবাদে এ ঘটনা ঘটে বলে খবর দিয়েছে এএফপি। তবে এখনো কেউ এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেনি।
প্রাদেশিক গভর্নর দপ্তরের মুখপাত্র জানান, ওই চিকিৎসক যে যানবাহনে চলাফেরা করতেন, তাতে চুম্বকীয় বোমা লাগিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তিনি একটি রিকশায় চলাফেরা করতেন বলে জানান তিনি। আফগানিস্তানে সাংবাদিক, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, মানবাধিকারকর্মী ও বিচারকদের ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনা সম্প্রতি বেড়ে গেছে। এতে অনেকে আত্মগোপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ কেউ দেশ ছেড়েই পালাচ্ছেন।
স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার পূর্বাঞ্চলীয় শহর জালালাবাদে পৃথক দুই হামলার ঘটনায় তিন নারী গণমাধ্যমকর্মী নিহত হন। কাজ শেষে হেঁটে বাসায় ফেরার পথে তাদের ওপর গুলি চালান হামলাকারীরা। তারা তিনজনই স্থানীয় এনিকাস টিভিতে ডাবিং বিভাগে কাজ করতেন।
সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসের স্থানীয় সহযোগী একটি সংগঠন ওই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বলেছে, ওই তিন সাংবাদিক আফগান সরকারের প্রতি অনুগত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলেন। তাই তাদের হত্যা করা হয়েছে।

‘আইএসআইএল’-এর উত্থানের ইতিহাস
১৬ জুন (রেডিও তেহরান): কয়েক বছর আগের একটি দৃশ্য হয়তো অনেকেরই মনে আছে। ওই দৃশ্যে দেখা যায় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সৌদি রাজার আয়োজিত এক ভোজসভায় তলোয়ার নিয়ে রাজার সঙ্গে নাচছেন। সেই তরবারি ছিল একটি বিশেষ অবস্থার প্রতীক ও আভাস।আজ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম জনগণ মুসলিম নামধারী একদল সন্ত্রাসীর হাতেই নিহত হচ্ছে! মৃত্যুর ব্যবসায়ীদের প্রেতাত্মারা সেখানে নিরপরাধ মানুষের মাথা দিয়ে ফুটবল খেলছে। হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে মুসলিম মেয়েরা কথিত জিহাদিদের হাতে!
 অবস্থায় প্রকৃত ইসলাম ও ধর্মান্ধদের সন্ত্রাসী ইসলামের পার্থক্য তুলে ধরা জরুরি হয়ে পড়েছে। পাশ্চাত্য প্রকৃত ইসলামী জাগরণকে সন্ত্রাসী ইসলামের মাধ্যমে প্রতিহত করতে চায় যাতে নিরাপদ থাকে বিশ্বব্যাপী তাদের লুণ্ঠন ও দখলদার ইসরাইলের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী তৎতপরতা। আর ইসলাম সম্পর্কে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে পারলে পাশ্চাত্যে অমুসলিমদের ইসলাম গ্রহণের হিড়িকও কমে আসবে বলে ইসলামের শত্রুরা আশা করছে।তথাকথিত মুসলিম সন্ত্রাস নিয়ে পাশ্চাত্য ও বিশেষ করে হলিউড নানা ছায়াছবিও নির্মাণ করছে। তবে পাশ্চাত্যের গোপন ও প্রকাশ্য-মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী দল ‘আইএসআইএল’ উত্থান কোনো চলচ্চিত্র নয় বরং বাস্তব ঘটনা।
সন্ত্রাসী দল আল-কায়দার নতুন সংস্করণ ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক এন্ড লিভান্ট বা সংক্ষেপে ‘আইএসআইএল’ একটি ওয়াহাবি-সালাফি জঙ্গি সংগঠন। গ্রুপটির নাম থেকেই বোঝা যায় উগ্র বা কথিত সালাফি ইসলামের ভিত্তিতে ইরাক ও আশশাম তথা বৃহত্তর বা প্রাচীন সিরিয়ায় (লেবানন ও ফিলিস্তিনসহ) একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা গ্রুপটির উদ্দেশ্য।অনেকেই মনে করেন আফগানিস্তানে সাবেক সোভিয়েত দখলদারিত্ব ও প্রভাব মোকাবেলার জন্য আমেরিকাই বিন লাদেনকে দিয়ে গঠন করেছিল আল-কায়দা ও আরো পরে গঠন করে তালিবান।
তালিবান ও আল-কায়দাকে দ্বিমুখী বা ত্রিমুখী কাজে ব্যবহার করেছে সিআইএ।
প্রথমতঃ ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে এক শ্রেণীর যুবককে শত্রুর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা,
দ্বিতীয়তঃ প্রথম এই উদ্দেশ্য হাসিলের পর তথা সরলমনা ধর্মান্ধ যুবকদের ব্যবহার করার পর ইসলামের নামে ধর্মান্ধতার বিস্তার ও জঙ্গিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে ইসলাম সম্পর্কে আতঙ্ক ও খারাপ ধারণা ছড়িয়ে দেয়া এবং
তৃতীয়তঃ এদেরকে সন্ত্রাসী তৎপরতায় ব্যবহার করে সেই একই সন্ত্রাস দমনের নামে দেশে দেশে হস্তক্ষেপ করতে সক্ষম হয় আমেরিকা
যাই হোক, ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন হামলার সময় সর্বপ্রথম গঠিত হয়েছিল ‘আইএসআইএল’ গ্রুপ। তখন গ্রুপটির নাম ছিল ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক।
২০০৬ সালের ১৫ অক্টোবর বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ‘আইএসআই’-এর আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের কথা ঘোষণা করা হয় এবং আবু ওমর আল বাগদাদি গ্রুপটির নেতা বলে জানানো হয়।
২০১০ সালের ১৯ এপ্রিল আবু ওমর নিহত হলে আবুবকর আল বাগদাদি এই জঙ্গি গ্রুপটির নতুন প্রধান হয় এবং মধ্যপ্রাচ্যে গ্রুপটির বিস্তার শুরু হয়।’নয়া বিন লাদেন’ নামে খ্যাত বাগদাদিকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য মার্কিন সরকার দশ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। বাগদাদি ২০০৫ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইরাকের উম্মে কাসর শহরে একটি মার্কিন কারাগারে বন্দি ছিল। ২০০৩ সালের আগেও সে আল-কায়দার সদস্য ছিল বলে মনে করা হয়। তাকেসহ হাজার হাজার চরমপন্থি বন্দীকে মুক্তি দেয়া হয় উম্মে কাসর শহরের ‘বুকা’ কারাগার থেকে। বাগদাদির আসল নাম ছিল আবু দায়া। ২০০৫ সালে তাকে হত্যা ও অপহরণসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ইরাকি নাগরিকদের অপহরণের পর আবু দায়া তাদের বিরুদ্ধে এক গাদা অভিযোগের ফিরিস্তি শুনিয়ে তাদেরকে প্রকাশ্যে ফাঁসি দিত।বাগদাদি ২০১১ সালে বাগদাদের একটি মসজিদ বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেয়। এ ছাড়াও সে ইরাকের সুন্নিদের প্রতিনিধি বা নেতা হিসেবে খ্যাত খালেদ আল ফাহদাওয়িকেও হত্যার জন্য অভিযুক্ত হয়।
ইরাকের কয়েকটি আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে দক্ষ বাগদাদি এখন ছায়ামূর্তির মত গোপনে বিচরণ করে এবং তার কর্মী ও ভক্তরাও খুবই কমই তাকে দেখতে পেয়েছে। সে প্রায় সব সময়ই তার মুখ ঢেকে রাখে যাতে কেউ তাকে চিনতে না পারে। আল-কায়দার অন্য যে কোনো নেতার চেয়ে আবুবকর বাগদাদি অনেক বেশি উগ্র চিন্তাধারায় বিশ্বাসী বলে জানা গেছে।সিরিয়ায় কট্টর ইসরাইল-বিরোধী আসাদ সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে পাশ্চাত্য, ইসরাইল এবং তাদের আঞ্চলিক সেবাদাস সরকারগুলোর মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী ও বিদ্রোহীদের মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু হলে ‘আইএসআই’ও বিদ্রোহীদের পক্ষে যোগ দিয়ে এ যুদ্ধে অংশ নেয়।গ্রুপটি পরে তার নাম পরিবর্তন করে বর্তমান নাম ধারণ করে।
সিরিয়ায় ২০১১ সালে গঠিত আন নুসরা ফ্রন্টও ‘আইএসআইএল’-এর একটি শাখা হিসেবে দেশটির সরকারি সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকে।২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে আবু বকর আল বাগদাদি এক অডিও বার্তায় জানিয়ে দেয় যে ‘জিবহাতুন নুসরা’ বা ‘আন নুসরা ফ্রন্ট’ ‘আইএসআই’-এর অর্থ ও সহায়তা নিয়েই গঠিত হয়েছে এবং এই দুই গ্রুপ একত্রিত হয়ে ‘আইএসআইএল’ নাম ধারণ করেছে।কিন্তু এই দুই গ্রুপের মধ্যে শুরু হয় ক্ষমতা নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব। দুই গ্রুপের সদস্যরা পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকলে উভয় গ্রুপের কাছে শ্রদ্ধেয় আল-কায়দার নেতা (আইমান আল জাওয়াহেরি) সিরিয়ার জন্য আন নুসরা ফ্রন্টকেই নিজের প্রতিনিধি বলে ঘোষণা করে এবং আন নুসরার নেতার আনুগত্য করতে বাগদাদিকে নির্দেশ দেয়।
‘আইএসআইএল’-এর যোদ্ধারা গত দশই জুন ইরাকের নেইনাভা প্রদেশের প্রধান শহর মসুলের বেশিরভাগ এলাকা দখল করে নেয়। শহরটি জনসংখ্যার দিক থেকে ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এ ছাড়াও তারা দখল করে ফাল্লুজা ও সাদ্দামের জন্মভূমির শহর তিকরিত। তিকরিত সালাহউদ্দিন প্রদেশের প্রধান শহর।সর্বশেষ খবর অনুযায়ী সরকারি ও গণবাহিনীর হামলার মুখে এইসব অঞ্চলের বহু স্থান থেকে বিতাড়িত হয়েছে ‘আইএসআইএল’-এর সেনারা।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকিসহ অনেক কর্মকর্তা বলেছেন, ইরাকের একদল সেনা কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ায় এক ষড়যন্ত্রমূলক সমঝোতার আওতায় এই প্রদেশের ৫০ হাজারেরও বেশি সরকারি সেনা কোনো ধরনের বাধা না দিয়েই সন্ত্রাসীদের কাছে শহরটির প্রধান সরকারি ভবন, অস্ত্রাগার, ব্যাংক ও কারাগারগুলোর নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়।
২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে ‘আইএসআইএল’ সিরিয়ার রাক্কা শহরে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী কথিত ফ্রি-সিরিয়ান আর্মির সেনাদের বিতাড়িত করে। সেখানে জঙ্গি এই গ্রুপ একটি স্থায়ী ঘাঁটিও গড়ে তোলে। রাক্কার জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় নানা ধরনের কঠোর ও চরমপন্থার শাসন। ফলে সেখানে প্রায়ই প্রকাশ্যে ঘটেছে হত্যাযজ্ঞ ও নানা ধরনের কঠোর শাস্তি যার শিকার হয়েছে নিরপরাধ বেসামরিক সিরিয় জনগণ।২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সমর্থক ‘সিরিয় মানবাধিকার পর্যবেক্ষক’ সংস্থা বা এসওএইচআর বলেছে: ‘আইএসআইএল’ হচ্ছে উত্তর সিরিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী গ্রুপ।
‘আইএসআইএল’-কে আমেরিকা ও ইসরাইল ছাড়াও অর্থ, অস্ত্র, রসদ ও গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহায়তা দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি সরকার।মসুলে এই জঙ্গি দলটির অভিযানের পর ইরাকি কর্মকর্তারা সৌদি ও তুর্কি গোয়েন্দা সংস্থাকে এবং ইরাকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট তারিক আল হাশিমিকে এই অভিযানের নেপথ্য পরিচালক বলে অভিযোগ করেছে। হাশিমি ‘আইএসআইএল’-এর উত্থানকে ইরাকি জনগণের স্বপ্নের বিপ্লব বলে দাবি করেছেন। ইরাকের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে এক মহাষড়যন্ত্রের আওতায় অস্থিতিশীল করার জন্যই সন্ত্রাসীরা ইরাকে প্রকাশ্য যুদ্ধ শুরু করেছে।
একদল বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ইরাকে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ও সাম্প্রতিক নির্বাচনে বিপুল ভোটে পুনরায় জয়ী হওয়া নুরি আল মালিকির রাজনৈতিক জোটকে ক্ষমতাচ্যুত করার এক মহাষড়যন্ত্র করছে দেশী-বিদেশী কয়েকটি চক্র। আর এইসব চক্রের মদদদাতারা হল ইসরাইলি, মার্কিন, তুর্কি, কাতারি ও সৌদি সরকার। তারা ইরাকে সিসির মত কোনো ব্যক্তিকে ক্ষমতায় বসাতে চান। এই সরকারগুলো ইরাকের আগে সিরিয়ায়ও বিনা অপরাধে বেসামরিক সাধারণ মুসলমানদেরকে কাফির বলে হত্যা করতে অভ্যস্ত ওয়াহাবি-সালাফি মতবাদে বিশ্বাসী আইএসআইএল ও আলকায়দাসহ বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী দলকে অস্ত্র, অর্থ, প্রশিক্ষণ ও গোয়েন্দা সহযোগিতাসহ সব ধরনের সহায়তা দিয়ে এসেছে।
‘আইএসআইএল’-এর কিছু বৈশিষ্ট্য:
১.তাদের বেশিরভাগই হচ্ছে বহিরাগত অর্থাৎ বিদেশী এবং তাদের খুব কম সংখ্যকই ইরাকের অধিবাসী। আর এদের প্রতি রয়েছে সৌদি দরবারি ওয়াহাবি মুফতিদের সমর্থন। ওয়াহাবিদের মতে তারা নিজেরা ও হাম্বলী মাজহাবের অনুসারী ছাড়া হানাফি ও অন্য মাজহাবগুলোর সব ইমাম ও তাদের অনুসারীরা সবাই কাফির এবং এদের হত্যা করা বৈধ। অর্থাৎ সুন্নিদের তিন মাজহাব ও শিয়া মাজহাবের অনুসারীরা সবাই কাফির এবং এদের হত্যা করা বৈধ। ‘আইএসআইএল’-এর সন্ত্রাসীদের প্রত্যেককেই প্রতি মাসে ১০০০-১৫০০ ডলার বেতন দেয়া হয়। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত ও আরব আমিরাত যোগান দিয়ে যাচ্ছে।
২. এইসব সন্ত্রাসীরা যে সব অঞ্চল দখল করেছে সেখানেই নৃশংস ও জঘন্য হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কাউকে এরা রেহাই দেয়নি। শুধু তাই নয় এর আগে সিরিয়ায় দেখা গেছে, এইসব সন্ত্রাসীরা মানুষ হত্যা করে নিহতদের বুক ও পেট চিড়ে হৃদপিণ্ড, কলিজা ইত্যাদি বের করে এনে চিবিয়ে খেয়েছে এবং এ সব দৃশ্যের সচিত্র ভিডিও ফুটেজও এরা প্রকাশ করেছে ইন্টারনেটে।
‘আইএসআইএল’-এর সেনারা এরিমধ্যে তাদের দখলকৃত অঞ্চলে হাজার হাজার বন্দী সেনাকে নির্মমভাবে হত্যা করে সেসবের ছবি ইন্টারনেটে পোস্ট করেছে। তাদের সেনারা নানা অঞ্চলে ইরাকি নারীদের ধর্ষণ করেছে বলেও খবর এসেছে। ‘আইএসআইএল’-এর আধ্যাত্মিক উৎসাহদাতা ওয়াহাবি মুফতিদের ফতোয়া অনুযায়ী বিজিত অঞ্চলের নারীদের স্ত্রীর মত ব্যবহার করা হালাল বা বৈধ।
এরিমধ্যে মসুলে জোর করে নারীদের বিয়ের অথবা ধর্ষণের ঘটনার পর চার জন নারী আত্মহত্যা করেছে বলে খবর দিয়েছে জাতিসংঘ।
ইরাকে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা বিদেশি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী দল আইএসআইএল মসুলে ১২ জন সুন্নি আলেমকে হত্যা করেছে।
দলটির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় এই ১২ জন সুন্নি আলেমকে তারা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে বলে গত শনিবার আল ইরাকিয়া টিভি খবর দিয়েছে।
অন্য এক ঘটনায় আইএসআইএল-এর সন্ত্রাসীরা মসুলের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমামকে হত্যার পর তার লাশকে টুকরো টুকরো করে। তাদের দৃষ্টিতে ওই ইমামের অপরাধ ছিল এটা যে তিনি তাদের দলে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। স্থানীয় আলেমরা এই নৃশংস ঘটনা ঘটার কথা জানিয়েছেন।
৩. ‘আইএসআইএল’-এর সন্ত্রাসীরা ইসলামসহ নানা ধর্মের অনুসারীদের পবিত্র স্থানগুলোকে ধ্বংস করছে এবং লুটপাট ও নির্বিচার গণহত্যায় লিপ্ত হচ্ছে।অথচ পবিত্র ধর্ম ইসলাম যুদ্ধ-কবলিত অঞ্চলে বেসামরিক পুরুষ, নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের হত্যা তো দূরের কথা সেখানকার গাছপালা, ফসল, ক্ষেত-খামার, পশু, পানি ও পরিবেশের ক্ষতি করাকেও নিষিদ্ধ করেছে।এমনকি ইসলামী নীতি অনুযায়ী যুদ্ধ-বন্দী বা আত্মসমর্পণকারী ব্যক্তিকেও হত্যা করা নিষিদ্ধ। আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি ছাড়াও জাহেলি যুগেও আত্মসমর্পণকারী ব্যক্তিকে হত্যা করা কাপুরোষোচিত কাজ বলে বিবেচিত হত।
ইসলাম যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত কাফির বা অবিশ্বাসী ব্যক্তির লাশকে বিকৃত করাও নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু ‘আইএসআইএল’-এর সন্ত্রাসীরা যুদ্ধে নিহত সেনাদের লাশ বিকৃত করা, গাড়ী-চাপা দেয়া ও পদদলিত করা ছাড়াও নিহতদের মাথাকে ফুটবল বানিয়ে ক্রীড়া-কৌতুক করার মত পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠেছে।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, কেউ যদি একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে তাহলে সে যেন গোটা মানব জাতিকে হত্যা করলো।
৪. ‘আইএসআইএল’-এর সন্ত্রাসীদের অনেকেই আরব দেশগুলোতে হত্যাকাণ্ড ও ডাকাতির মত সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িত হওয়ায় তাদের মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মত কঠোর শাস্তি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিদেশে গিয়ে কথিত জিহাদের নামে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোর শর্তে এদের মুক্তি দেয়া হয়েছে।
৫. এই সব তাকফিরি সন্ত্রাসী যারা নিজেদেরকে জিহাদি বা মুজাহিদ বলে দাবী করে তারা ফিলিস্তিন দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের দিকে ভুলেও একটি গুলিও ছুঁড়েনি।একজন ইসরাইলি সেনাকেও হত্যা করে নি। অথচ এ সব সৌদি-কাতারি-তুর্কি-মার্কিন-ইঙ্গ-ফরাসি-জার্মান সমর্থনপুষ্ট তাকফিরি ( সালাফী ) ওয়াহাবি সন্ত্রাসীরা যেমনিভাবে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরাকে (ওয়াহাবি নয় এমন) লক্ষ লক্ষ নিরীহ মুসলমানকে হত্যা করছে ঠিক সেভাবে তারা সিরিয়ায়ও যারা ওয়াহাবি মতাবলম্বী নয় তাদের মধ্য থেকে গত তিন বছরে হাজার হাজার মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে!
৬.এইসব বিদ্রোহী ও তাকফিরি ওয়াহাবি (সালাফি) সন্ত্রাসী গ্রুপ ও সংগঠন যেমন সৌদি-কাতারি-তুর্কি- শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক সমর্থিত ও সাহায্যপ্রাপ্ত ঠিক তেমনি তারা সাম্রাজ্যবাদী বিধর্মী পাশ্চাত্য কর্তৃকও সমর্থিত ও সাহায্যপ্রাপ্ত!
৭.এরা সবাই অত্যন্ত নিষ্ঠুর, হিংস্র ও পাশবিক চরিত্রের বরং পশুর চেয়েও অধম।কারণ, এদের অনেকেই বন্দীদের হত্যা করে তাদের দেহ চিড়ে ফেঁড়ে হৃদপিণ্ড কলিজা ইত্যাদি চিবিয়ে খেয়েছে যা আমরা আগেও উল্লেখ করেছি।
৮.এদের প্রতি আপামর ইরাকি ও সিরিয় জনগণের কোনো সমর্থন নেই।
৯.এদের নিজেদের মধ্যেও কোন ঐক্য নেই ,আর এ কারণে এরা প্রায়ই পরস্পর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। আর খোদা না করুক এরা কোথাও ক্ষমতাসীন হলে এই সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর মধ্যে আরও সর্বাত্মক,ব্যাপক ও মারাত্মক স্থায়ী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও গৃহযুদ্ধ চলতেই থাকবে। এরা সিরিয়ায় সাহাবিদের মাজার ধ্বংস করেছে। ইরাকেও নবী বংশের দুই ইমাম তথা বিশ্বনবী (সা.) আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম হাসান আসকারী (আ.) ও ইমাম আলী নাকী (আ.)’র মাজারের গম্বুজ ধ্বংস করেছিল। এরা বিশ্বনবীর নাতি ও কারবালা বিপ্লবের মহানায়ক হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)’র মাজার ধ্বংসের প্রতিজ্ঞা করেছে। এরাই সিরিয়ায় হযরত ইমাম হুসাইন-আ.’র বোনের মাজারে হামলা করেছে, তিন-চার বছরের শিয়া মুসলিম শিশুকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে, দুই কুর্দির গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগে-থেকে জ্বালানো আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে ও তার ভিডিও প্রচার করেছে, গর্ভবতী শিয়া মুসলিম নারীর পেট চিরে শিশু বের করে উভয়কে হত্যা করেছে, বন্দী শিশুকে দিয়ে যুবক বন্দীকে হত্যা করে তার ভিডিও প্রচার করেছে, কিশোরদের ধরে এনে হত্যা করেছে এবং বহু বেসামরিক লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করে তাকফিরি-ওয়াহাবি ইসলামের কথিত বীরত্বের ভিডিও প্রচার করেছে। এইসবই ইরাক ও সিরিয়ায় যুদ্ধরত সন্ত্রাসীদের পাশবিকতার আরো কিছু প্রমাণ। #
ইহুদি দম্পতির সন্তান
তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসআইএল-এর নেতা ও স্বঘোষিত খলিফা আবুবকর বাগদাদির প্রকৃত নাম ‘শামউন ইয়লুত’ এবং সে ইহুদী বাবা-মায়ের সন্তান বলে জানা গেছে।আমেরিকার জাতীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থা এনএসএ’র সাবেক কর্মকর্তা এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা দলিল-দস্তাবেজ থেকে এই তথ্য বেরিয়েছে।
মুসলমানদেরকে ও বিশেষ করে সুন্নি সম্প্রদায়ের মুসলমানদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করার জন্যই কথিত এই খলিফা আবুবকর নামটি বেছে নিয়েছে নিজের জন্য।চাঞ্চল্যকর এই খবরটি পরিবেশন করেছিলো লেবাননের দৈনিক আদদিয়ার।

এর আগে এনএসএ’র সাবেক কর্মকর্তা এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা দলিল-দস্তাবেজ থেকে এই তথ্য জানা গেছে যে,ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ কথিত আবুবকর বাগদাদিকে এক বছর ধরে ধর্মীয় ও সামরিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং জিহাদ ও ইসলামের নামে ইসরাইলের নিরাপত্তার বিরোধী দেশগুলোতে সন্ত্রাস সৃষ্টির জন্যই ব্রিটেনের গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-সিক্স, ইসরাইলের মোসাদ ও মার্কিন এনএস’র তত্ত্বাবধানে জন্ম দেয়া হয়েছে আইএসআইএল।

আসলে কোনটি সত্য
বিশ্বে ত্রাস সৃষ্টিকারী দল ইসলামিক স্টেটের নেতা আবু বকর আল বাগদাদি নাকি আরো দশ পাঁচ জন ছাপোষা মানুষের মতই সাধাসিধে জীবনযাপন করতেন। ইরাকের এক প্রশাসনিক দপ্তরের কর্মচারী হিসেবে দিন গুজরান করছিলেন তিনি। সে সময় একবার বিনা অপরাধে আরো অনেক নিরীহ ইরাকির সঙ্গে আটক হন তিনি। দশ মাস জেল খাটেন কোনো অপরাধ না করেই। এরপরই নাকি বদলে যান এক সময়ের লাজুক তরুণ বাগদাদি। অথচ একসময় ভালো ফুটবল খেলোয়ার হিসেবেও নাম ছিল আজকের দুনিয়ায় মোস্ট ওয়ান্টেড এই সন্ত্রাসী।
গণমাধ্যমের কল্যাণে আজকে আমরা ইসলামিক স্টেট দলের নেতা বলতে জানি আল বাগদাদিকে। তবে এটি তার আসল নাম নয়। তার কাগুজে নাম ইব্রাহিম আওয়াদ ইব্রাহিম আল বদর। ইরাকে মার্কিন দখলদার অভিযানের সময় ২০০৪ সালে আমেরিকান সেনাদের হাতে তিনি বন্দী হয়েছিলেন। বন্ধু নুমান নেসায়িফকে ধরার জন্য ফজুল্লাহ শহরে চালানো এক অভিযানের সময় তিনি ধরা পড়েন। এরপর টানা দশ মাস দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় কারাগারে আটক ছিলেন। তখন তার বিরুদ্ধে কোনো বেআইনী কাজকর্মে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কারাগারে তার পেশার স্থলে লেখাছিল প্রশাসনিক কর্মচারী। হয়তোবা ইরাকে মার্কিন বিমান হামলা না হলে আজকের বাগদাদির উত্থানই হতো না।
ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্টের করা অনুরোধের প্রেক্ষিতে প্রকাশিত তথ্যে তার জন্মতারিখ নিয়েও রয়েছে মতভেদ। ধারণা করা হয়ে থাকে, বাগদাদির বয়স ৪৩। তিনি বিবাহিত এবং তার একটি ছেলে আছে। মেধাবি ফুটবলার হিসেবেও যথেষ্ট খ্যাতি ছিল ইসলামিক স্টেটের এই নেতার। একসময়ে তার সঙ্গে ফুটবল খেলেছেন এমন এক ব্যক্তি তার সম্পর্কে বলেছেন, ‘তিনি ছিলেন আমাদের দলের মেসি।’ যুবক বয়সে কিছুটা লাজুক আর সাধাসিধে ছিলেন বাগদাদি। আর দশজন সাধারণ মানুষের মত ছিলেন ধর্মানুরাগী। চরমপন্থি আর বিপজ্জনক দলটির নেতৃত্ব দেয়ার আগে তিনি ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করতেন। ইতোমধ্যে ইরাক, সিরিয়া এবং লিবিয়ার হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে এই জঙ্গি গোষ্ঠিটি। অনেক নিরীহ মানুষের শিরশ্ছেদ করে সেগুলোর ভিডিও চিত্র প্রকাশ করছে তারা। দলটির এসব বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গোটা বিশ্ব চমকে উঠেছে। ধারণা করা হয়ে থাকে, ৩০ হাজারের বেশি সেনাকে হত্যা করেছে এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি। ৭০ জনের বেশি মানুষকে জীবিত অবস্থায় পুড়িয়ে মেরেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ‘বিশেষভাবে মনোনীত বিশ্ব সন্ত্রাসী’দের তালিকায় থাকা বাগদাদির মাথার দাম ধরা হয়েছে ১ কোটি ডলার। গত জুলাইয়ে প্রথমবারের মত একটি প্রচারমূলক ভিডিওতে আত্মপ্রকাশ করেন বাগদাদি। কালো পোশাক পরিহিত ওই নেতা মসুলের এক মসজিদে খুৎবা দিচ্ছিলেন। ওই ভিডিওতে তিনি নিজেকে মুসলিম বিশ্বের খলিফা হিসেবে দাবি করেছেন।
যেভাবে নারী সদস্য সংগ্রহ করে আইএস:
পশ্চিমের যেসব দেশ থেকে বেশিরভাগ নারী আইএসে যোগ দেওয়ার জন্য দেশ ছাড়েছে, সেগুলো হলো ফ্রান্স, ব্রিটেন, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম ও স্পেন।ইসলামিক স্টেটও অবশ্য নারীদের তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। এ কাজে তারা বিভিন্ন বই-পুস্তক প্রকাশনা, সেগুলো প্রচারের কার্যক্রম চালু করেছিল।এ ছাড়া তারা অনলাইন ফোরাম গঠন করে নারীদের জিহাদের প্রতি আকৃষ্ট করার জোর চেষ্টা করে।অনলাইনের মাধ্যমেই নারী সদস্য সংগ্রহ করে আইএস।এ পর্যন্ত কতজন নারী তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ইরাক ও সিরিয়ায় গেছে, তার প্রকৃত সংখ্যা জানা যায়নি।তবে বিশ্লেষকদের অনুমান, কেবল পশ্চিমা দেশগুলো থেকেই শতকরা ১০ ভাগ নারীকে রিক্রট করা হয়েছে।কিংস কলেজ লন্ডনের প্রতিরক্ষাবিষয়ক বিভাগের প্রফেসর ক্যাথারিন ই ব্রাউন বলেন, দুই রকম কারণে আইএসে নারীদের যোগদানের প্রবণতা বাড়ছে। একটি হলো আদর্শগত, অন্যটি স্রেফ রোমাঞ্চ। আইএস যোদ্ধাদের বিয়ে করার জন্য অনেক মেয়ে নিজের দেশ ছাড়ছে। তিনি বলেন, এখানে একটা জিনিস নতুন করে দেখা হচ্ছে।
এছাড়া যে ৭টি কারণে আইএসের মায়াজালে তরুণ-তরুণীরা:
১. সামাজিক গণমাধ্যমে ভুয়সী প্রচারণা ও প্রপাগান্ডা : সামাজিক গণমাধ্যমে আইএস এর আলাদা মিডিয়া উইং আছে। খুবই বিচক্ষনতার সাথে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে থাকে সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়ে।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে তারা তাদের সদস্য সংগ্রহ করে থাকে।ভয়ংকর ও দুর্বিষহ ধারণা মানুষের মাঝে জন্ম দেয়া তাদের উদ্দেশ্যে।যেভাবে ২০০৯ সালে পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যাকায় তালেবানরা সংগঠিত হয়েছিল।বিভিন্ন মিডিয়ার প্রচারনা ও প্রপাগান্ডা আইএস কে আরও উজ্জীবিত করে তোলে ।মিডিয়া তার টিআরপি নিয়ে ভাবে ।আর এইসব দলগুলো তখন লাভ করে প্রসারতায়।
২. আইডেন্টিটি ক্রাইসিস: তরুণরা কৌতূহলী।তাদের কৌতূহলের শেষ নেই।কেউ নামে ধার্মিক।তারা ধর্মে-কর্ম থেকে দূরে থাকেন ।ধর্ম সম্পর্কে তাদের মনের মত উপযুক্ত উত্তর খুঁজেন।সাধারণ উত্তর হলেও এরা তৃপ্ত থাকেন সেই উত্তরে।তারপরেও, সেই উত্তরের পিঠে তারা পাল্টা প্রশ্ন তুলে ধরেন না।কিন্ত এর মাঝে আরেক প্রকার তরুণ আছে।যারা উত্তর খুঁজে বেড়ান ।সাধারণ উত্তর এদের মন জয় করে নিতে পারে না।আরও গ্রহণযোগ্যে উত্তর এদের চাই ।আরও নিখুঁত উত্তরের পিছে খুঁজে চলেন। সেই সংশয়ের তারা মনের অজান্তে জড়িয়ে পরেন। ভ্রান্ত পথে পা বাড়ান।বিশেজ্ঞরা মনে করেন, ইন্টারনেট জেনারশনরা যা দেখে তাই বিশ্বাস করে। এরা হল ইন্টারনেটের প্রথম জেনারেশনের গিনিপিগ।এরা যে ধর্মটা ধারণ করে, মিডিয়ার সাথে যখন বাস্তবতার মিল খুঁজে পায় না। তখন তাঁরা হারিয়ে ফেলে তাদের বিশ্বাস । তাদের নিজস্বতা ।বিশ্বাসের সাথে যখন বাস্তবতার মিল নেই তখন অনেকে ভোগেন অস্তিত্ব সংকটে ।তখন জড়িয়ে পড়েন কোন উগ্রপন্থী দলে।
৩. একাকীত্বতা ও চরম হতাশা: তরুণরা বেশী প্রভাবিত হয় কাছের মানুষ দ্বারা।পারিবারিক যোগাযোগ ও একক পরিবারের সন্তানরা বেশী একাকীত্বে থাকে । একটা রুম । প্লে স্টেশন। গেইমস।আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি বা টকিং টমের মত গেম সাধারণ তবে বিধ্বংসী আপ্সগুলো দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে মানব মনে। কাজের চাপ, সামাজিক, পারিবারিক, ব্যাক্তিগত ও অন্যান্য বৈরি মানসিক হতাশা থেকে মুক্তি চায় ।জীবনে চায় অ্যাডভেঞ্চার । নতুন কিছু করতে চায় ।কোন কিছু না পারার যন্ত্রণা দেয়। সেই হতাশার সুযোগ নেয় চারপাশে ছড়িয়ে থাকা দুষ্ট মনের মানুষগুলো। সত্য উদাহরণের আলোকে, “ … দেখো ছেলে তুমি খারাপদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।আমাদের চমৎকার দেশটাতে চলে আসো। এখানে তুমি অনেক সুন্দরী রমণী পাবে। তোমার দাস হয়ে থাকবে। তোমাকে সেবা করার জন্য অপেক্ষা করছে ।কেন ঘরে বসে আছো ।তোমাকে যারা চাকর বানাতে চায় কেন তাদের চাকর হয়ে থাকবে। আমাদের সাথে এসো ।জীবনে বৈচিত্র পাবে।হিরোর মত বাঁচো।যেখানে আছে সুন্দরী রমণী।সুস্বাদু খাবার। সবার উপরে থাকবে তোমার ইচ্ছার প্রাধান্যে ।অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। আর অনৈতিক কোন কাজ আমরা তো করি না।” মেয়েদের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনি করে প্রলোভন দেখানো হয়ে থাকে।
৪. উপযুক্ত কাজের অভাব : বিশ্বের সব দেশেই বাড়ছে শিক্ষিত বেকারত্বের সংখ্যা।যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কাজের অভাব দেখা যাচ্ছে। সাচ্ছন্দ্যেময় জীবনের বড্ড অভাব। অর্থনৈতিক মুক্তি মিলছে না। মিলছে না দৈনন্দিন জীবনের খরচ। নিজের স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ অনেকে বেকার যুবক ।সামাজিকভাবে তুলনা করে নিজেকে আরও ছোট মনে করতে থাকে নিজেকে।তখনি এসে ভুল পথে পা বাড়ায় শিক্ষিত, মেধাবী তরুণ তরুণীরা। অনেকে তাদের সৃজনশীলতার মূল্যে দেয় না। ঝড়ে পরে সে সব মেধাবীরা। আন্তর্জাতিক অপরাধ সংস্থা দেখেছে গ্রীস, ফ্রান্স, ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীতে যোগদানের প্রবণতা বেড়েছে। দর্শনশাস্ত্রে আছে, মেধাবীরা শয়তান হলে হয় ভয়ংকর।
৫. বৈশ্বিক ক্রোধ ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা : বিশ্বে একটা ক্রোধ প্রজাতি গড়ে উঠছে। এরা মনে করেন নিজে যা করবেন তাই ঠিক। আপনি যেমনটা চান তাই অন্যকে করতে হবে । আপনার বিপরীতে কেউ কিছু করতে পারবে না। আপনি যখন আরেকজনের ব্যাক্তি স্বাধীনতাকে খর্ব করবেন ।তখন বেড়ে উঠবে ক্রোধ । জেগে উঠবে প্রতিহিংসা । ধর্ম নিয়ে অনেকে কটু কথা, তীব্র, তিক্ত কথা বলেন। অনেকে ধর্মকে হেয় করেন। বৈষম্যে, তুচ্ছ, তাচ্ছিল্যে করেন।অনেকে এর বিপরীত কথা বলতে গিয়ে আরও বেশী মানসিক ভারসাম্যে হারিয়ে ফেলেন। প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আস্থা হিসেবে খুঁজে পান নিষিদ্ধ সংগঠনের ।আর তখনি ভুল করে ফেলেন তারা। বিচ্ছিন্ন সংগঠনগুলোর অর্থনৈতিক শক্তির বলয় বেশ সবল। আকর্ষণীয় অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেখে অনেক সুন্দরী রমণী, তরুণ, তরুণী এদের দলে আসছে। এরাও নিজ দলে ভিড়িয়ে নিচ্ছে যে কোন উপায়ে। এই সংগঠনের নিয়ন্ত্রনে আছে ব্যাংক। এরা তেল বিক্রি করে অর্থ আয় করে। জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে। অর্থ যোগানের আছে আরও অভিনব উৎস । আর তাই মধ্যপ্রাচ্যে, ইউরোপের বিভ্রান্ত মানুষের এত প্রবল আগ্রহ আইএস যোগদানের জন্য।
৬. উদ্দেশ্যহীন জীবন: আইএস দল কোন মিশনে যাওয়ার আগে তাদের ক্যাপটোগেন পিল খাইয়ে নেয়া হয়। যার ফলে কোন স্বাভাবিক মানবিক চেতনা কাজ করে না। এরা নিজেদের বাক-স্বাধীনতার মুক্তির আলোকে পথ খুঁজেন। ধংস করে তা অর্জন করতে চান। ইউরোপের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, মধ্য প্রাচ্যের অবিরাম যুদ্ধ, দাঙ্গার ও মূল কারণ এই দলে যোগ দেয়ার। অনেকের জীবনে বেঁচে থাকার আশা যেখানে মূল্যহীন। তাদের দিক ভ্রান্ত করে বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীদের দলে ভিড়িয়ে আনা আরও বেশী সহজ। হতাশা এসব ছেলেদের পথভ্রষ্টের অন্যতম কারণ। পারিবারিক অশান্তি, মতের অমিল এমনকি কখনও কখনও প্রেম ভালোবাসায় ব্যর্থ হওয়ার পর অনেকেই হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। এ সুযোগে বন্ধু বান্ধবের প্রলোভনে নাম লেখায় মাদকের মত মৃত্যুপুরীতে। ধীরে ধীরে মাদকের কাছে হার মানতে থাকে এ ধরণের ছেলেদের সব চাহিদা ও জীবনের অন্যান্য চাওয়া পাওয়া। হতাশা কাটাতে যে মাদকের আশ্রয়ে শান্তি খুঁজতে চায় এসব তরুণরা সেই মাদকই তরাণ্বিত করে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠিগুলোকে কাছে ডাকতে। অনেক পরিবারের অভিভাবকগণ নিজেদের ব্যবসা বানিজ্য বা অন্যান্য কাজে এত বেশি ব্যস্ত থাকেন যে, সন্তানদের খোঁজ খবর রাখার সুযোগ পান না। ফলে এসব পরিবারের সন্তানরা বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে উঠতে পারে এবং সন্তানরা অভিভাবকদের অজান্তেই দুষ্ট চক্রের কবলে পড়ে ক্রমে মাদকাসক্ত হতে পারে।
৭. মাদক: বেসরকারী স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অনেক ছাত্র মাদকের মায়াজালে জড়িয়ে পড়ছে। একটা পর্যায়ে টাকা পয়সা ঘাটতি হওয়ায় ভিন্ন পথে পা বাড়াতেও পিছুপা হচ্ছেন না তারা। এ সুযোগে অক্টোপাসের মত জাল বিস্তার করে জঙ্গিগোষ্ঠি গুলো। প্রথমে বিভিন্ন মেসেজ ও ফেইসবুক চ্যাটের মাধ্যমে এসব তরুণদের উৎসাহিত করে। হতাশা কাটাতে নিজেরাই তাদের মাদকের ব্যবস্থা করে। এমনকি করে কাউন্সিলিং। একটা পর্যায়ে মাদকের দাস হয়ে পরে তরুণরা। তখন জঙ্গিরাও মোটিভেট করে এসব তরুণদের। অর্থাৎ সেই মাদকই তাদের জঙ্গি হওয়ার পথকে মসৃণ করে।