লাইভ আত্মহত্যার মহামারি যেন ছড়িয়ে না পড়ে

58

ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস। আমাদের শোক ও গর্বের মাস। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সবকিছু যেন থমকে আছে। এরমধ্যেই আসলো আরেক দুঃখজনক সংবাদ। দেশে এই প্রথমবারের মতো ফেসবুক লাইভে এসে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে আবু মহসিন খান (৫৮) নামের ওই ব্যবসায়ী ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করেন। এসময় তিনি নিজে বন্দুক মাথায় ঠেকিয়ে গুলি চালান। পরে পুলিশ গিয়ে ওই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে। তিনি চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর।

মহসিন খান লাইভে এসে বলেন, আমি ঢাকায় থাকি, আমার বয়স ৫৮ বছর, কোনো একসময় আমি খুব ভালো ব্যবসায়ী ছিলাম। বর্তমানে আমি ক্যানসার রোগে আক্রান্ত। এখন আমার কোনো ব্যবসা বা কোনো কিছুই নেই। আজকের লাইভে আসার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমার অভিজ্ঞতা আপনাদের জানানো।

সেই অভিজ্ঞতার বিষয়ে নিজের জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানান। একাকীত্ব যে তাকে গ্রাস করেছে সেই হতাশার কথাও জানান এ ব্যবসায়ী। এছাড়া তিনি যাদের জন্য সবকিছু করেছেন তারাও যে তাকে ঠকিয়েছেন সেই দুঃখের কথা বলেন তিনি। নিজের প্রিয় বন্ধু, যাকে তিনি নিজে না খেয়ে খাইয়েছেন, সেই প্রিয় বন্ধুও ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে জানান আবু মহসিন খান।

এটা ঠিক যে, জীবনের চলার পথে হতাশা থাকবেই। নানাবিধ সমস্যাও থাকতে পারে। সেসব কাটিয়ে এগিয়ে চলার নামই জীবন। এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে না পারলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া দরকার। তাই বলে হতাশার কাছে আত্মসমর্পণ করে করে নিজেকে শেষ করে দেওয়া কোনো সমাধান নয়।

এই ব্যবসায়ীর লোমহর্ষক আত্মহত্যার ঘটনা থেকে নতুন প্রজন্মেরও শিক্ষণীয় রয়েছে। পিতামাতা নিজেদের সবটুকু দিয়ে সন্তানদের গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে নিজেরা প্রতিষ্ঠিত হলে বাবা-মায়েদের খোঁজখবর না রাখা থেকেই তাদের মধ্যে একাকীত্ব ও মানসিক যন্ত্রণা তৈরি হয়। এর প্রতিফলন এই আত্মহত্যা। সব বাবা-মা হয়তো এভাবে আত্মহত্যা করতে পারেন না, তবে একাকীত্ব ও অবহেলার যন্ত্রণা আসলে একই। এই প্রবণতা থেকে আমাদের বের হয়ে আসা জরুরি।

এভাবে আত্মহত্যার মহামারি ছড়িয়ে পড়বে না বলেই আমাদের আশাবাদ। সুস্থ, সুন্দর ও মানবিক বাংলাদেশ আমরা প্রত্যাশা করি।