পাহাড়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তৎপরতা বন্ধ হোক

69

দেশ যখন স্বাভাবিকভাবে উন্নয়নের মহাসড়কে চলছে, তখন হঠাৎ করেই পার্বত্য এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বান্দরবানের রুমা উপজেলায় মঙ্গলবার রাতে সোনালী ব্যাংকের ভল্টের তালা ভেঙে টাকা লুট করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। এ সময় বাধা দেওয়ায় পুলিশ, আনসার বাহিনীর সদস্যদের মারধর করে ১৪টি অস্ত্র, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় তারা। লুট করে যাওয়ার সময় রাস্তা থেকে অপহরণ করে ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকেও। শুধু তাই নয়, পরদিন অর্থাৎ বুধবার দুপুরেও থানচি উপজেলা শহরের সোনালী ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখায় ডাকাতি হয়েছে। এসব ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা নিছক অপরাধই নয়, এ ধরনের তৎপরতা পাহাড়ে শান্তি ও দেশের সার্বভৌমত্বের জন্যও হুমকিস্বরূপ।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের এপ্রিলে কেএনএফ বান্দরবানে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর কেএনএফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি এবং বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম উপজেলার সমন্বয়ে পৃথক রাজ্যের দাবি করে। সংগঠনটি মূলত বম জনগোষ্ঠীনির্ভর হলেও তাদের দাবি, তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি ও বান্দরবান অঞ্চলের ছয়টি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে। এ সংগঠনের সদস্যরাই এখন পাহাড়ে অশান্তির অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে। কেএনএফ সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর একের পর এক হামলা চালিয়ে চলেছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় তো বটেই, অনেক সময় পর্যটকদেরও অপহরণ করে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

আমরা মনে করি, পাহাড়ে সহিংসতার এক বড় কারণ সেখানে অস্ত্রের সহজলভ্যতা। বিস্তীর্ণ অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে অবাধে অস্ত্র প্রবেশ করছে। অরক্ষিত সীমান্ত সুরক্ষিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। স্মরণে আছে, ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নেওয়া হয়। যার ফলস্বরূপ ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তথা শান্তিবাহিনীর বিদ্রোহীরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের অস্ত্র সমর্পণ করে। এরপর দীর্ঘদিন পাহাড়ে শান্তি বিরাজ করেছে। বর্তমানে দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে যেসব সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে তৎপরতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাহাড়ি সংগঠনগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনে তাদের মধ্যে আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে। পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে কী কী বিষয় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাও খতিয়ে দেখা দরকার। পাহাড়ে শান্তির স্বার্থেই এমন সন্ত্রাসী সংগঠনকে শক্ত হাতে দমনের বিকল্প নেই।

সর্বোপরি বিরাজমান পরিস্থিতির ইতি টেনে এ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। সহিংসতা বন্ধে গৃহীত পদক্ষেপগুলো টেকসই করতে পাহাড়ে বসবাসকারী সব জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের পার্বত্য অঞ্চল ঘিরে পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে এনে পর্যটন খাতের সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।