ভোলায় জায়গা পায়নি খুনি মাজেদ, নারায়ণগঞ্জে কবরে জুতাপেটা

20

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি বরখাস্ত ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদের কবর ভোলার বোরহানউদ্দিনে তার পৈতৃক বাড়িতে দেওয়ার কথা থাকলেও ভোলার দুই সাংসদসহ স্থানীয় মানুষদের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে তার শ্বশুরবাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

তবে নারায়ণগঞ্জে তার কবর দেওয়ার খবর শোনার পর থেকেই স্থানীয় মানুষজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এমনকি রোববার সকাল থেকে কয়েকবার এই খুনির কবরে জুতাপেটা করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

এর আগে শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে ফাঁসি কার্যকরের পর রাত তিনটার আবদুল মাজেদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপরই ভোলায় কবর দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তার পরিবার।

গত বুধবার বিচারিক আদালত বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদের মৃত্যুর পরোয়ানা জারি করলে ওই দিনই কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন মাজেদ। বৃহস্পতিবার সকালে রাষ্ট্রপতি এই খুনির প্রাণভিক্ষার আবেদনের ফাইল খারিজ করে দেন।

এরপর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, ‘আবেদন খারিজের পর মাজেদের সঙ্গে আত্মীয়-স্বজনের সাক্ষাতের পর যেকোনো দিন দণ্ডাদেশ কার্যকর হবে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা আপিল বিভাগের সামনে বিচারাধীন নেই এবং আপিল করার যে সময়সীমা ছিল তাও অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে। এ কারণে আসামির আপিল করার সুযোগ নেই।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন এই মাজেদ। তখন তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন।

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ক্যাপ্টেন (অব.) আব্দুল মাজেদের পৈতৃক বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড় মানিকা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে। এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দার। তিনি একইসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউনে কর্মহীন জেলেদের জন্য আসা ত্রাণের চাল চুরি করে সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন এই চেয়ারম্যান। তাদের চাল চুরির সংবাদ করায় স্থানীয় এক সাংবাদিককে মারধরও করেছেন তারা।

এছাড়া আরও বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে- বঙ্গবন্ধুর এই খুনির নাতিকে বোরহানউদ্দিন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। তার দাদার কুকীর্তি জানার পর সেই কমিটি স্থগিত করা হলেও পরবর্তীতে প্রভাবশালীদের তৎপরতায় আবারও সেই কমিটি বহাল করা হয়েছিল।

ক্যাপ্টেন (অব.) মাজেদের নাতি বোরহানউদ্দিন উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের সেই সাধারণ সম্পাদকের নাম মুজিব উল্যাহ পলাশ বিশ্বাস। তাদের পরিবারের এক নারীও সরকারি চাকরিজীবী। পরে স্থানীয়দের প্রতিবাদ ও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি ক্যাপ্টেন (অব.) মাজেদের ফাঁসির পর তার মরদেহ ভোলার মাটিতে না পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আসনের এমপি আলহাজ্ব নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন।

এছাড়া বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন (অব.) মাজেদের ফাঁসির পর ভোলার বোরহানউদ্দিনের মাটিতে তার কবর দিতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) আসনের এমপি আলী আজম মুকুল। খুনি মাজেদের মরদেহ তার জন্মস্থান বোরহানউদ্দিনে দাফনের জন্য ভোলায় পাঠানো হলে করোনা পরিস্থিতি উপেক্ষা করে হলেও তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন এই সংসদ সদস্য।

ফেসবুকে দেওয়া বার্তায় এই দুই সংসদ সদস্য এমন মন্তব্য করেন। একই ধারাবাহিকতায় জেলা ছাত্রলীগও শনিবার বিকেলে খুনি মাজেদের কুশপুত্তলিকা দাহ করে ভোলার মাটিতে তার দাফন প্রতিহত করার অঙ্গীকার করেন।

সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর এখন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত আরও পাঁচ খুনি বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন: খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, এ এম রাশেদ চৌধুরী। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এরা সবাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা।

এর আগে এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন (আর্টিলারি) এর ফাঁসি ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি কার্যকর হয়।