চেক প্রতারণার মামলায় সাংবাদিক দম্পতির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

21
A statue denounced by religious hardliners as "un-Islamic" is pictured on the grounds of the Supreme Court in Dhaka after it was reinstalled on May 28, 2017. Bangladesh on May 28 reinstalled a controversial statue deemed un-Islamic by religious hardliners on the grounds of the Supreme Court, just days after its removal had sparked angry protests by secular groups. / AFP PHOTO / - (Photo credit should read -/AFP via Getty Images)

চেক প্রতারণার মামলায় সাংবাদিক দম্পতি নাজমুল হোসেন ও তার স্ত্রী শারমিন সুলতানার বিরুদ্ধে মঙ্গলবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন ঢাকার একটি আদালত। ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ বইটির সম্পাদক ও রচয়িতা অমিতাভ দেউরীর দায়ের করা মামলায় আদালত এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। নাজমুল ও শারমিনের মালিকানাধীন ‘জার্নি মাল্টিমিডিয়া’ থেকে বইটির তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল। ওই বইয়ের রচয়িতা স্বত্ত্বের (রয়্যালটি) টাকা হিসেবে নাজমুল ও শারমিন যে চেক দিয়েছিলেন সেটি প্রতারণাপূর্ণ ছিল বলে ওই মামলায় অভিযোগ করেন সম্পাদক অমিতাভ দেউরী।

ওই মামলানর শুনানী নিয়ে মঙ্গলবার নাজমুল ও শারমিনকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আট নম্বর আদালতের বিচারক আরাফাতুর রাকিব।

জার্নি মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান শারমীন সুলতানা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হোসেন ব্যক্তিগত জীবনে স্বামী-স্ত্রী। তারা দুজনই দুটি টিভি চ্যানেলে কর্মরত।

চলতি বছরের ১৯ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এনআই অ্যাক্টের ১৩৮, ১৪০ ধারায় মামলাটি করেন বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা বইটির রচয়িতা ও সম্পাদক অমিতাভ দেউরী (মামলা নম্বর ২৬৩৯/২০২৩)। এই বইটির প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণের প্রকাশক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থাকলেও পরবর্তীতে জার্নি মাল্টিমিডিয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে বইটির ‘প্রকাশক’ বনে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।

মুজিব শতবর্ষে দেশের সমস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লাখ লাখ শিশু শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেবার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর ‘বঙ্গবন্ধু বুক কর্নার’ প্রকল্পের আওতায় ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ বইটির ৬৫ হাজার ৭০০ কপি কিনেছে। যার মূল্য বাবদ নাজমুল ও শারমিনের জার্নি মাল্টিমিডিয়া পেয়েছে ১১ কোটি দুই লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৫ টাকা। বইটি ক্রয়ে দুর্নীতি হয়েছে অভিযোগ ওঠার পর আইনজীবি সায়েদুল হক সুমন হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করেন। সেই রিটে পক্ষ হয়েছিলেন রচয়িতা অমিতাভ দেউরী। সেই রিট এখন আপিল বিভাগে বিচারাধীন। এর মধ্যেই বইটির কপিরাইট সনদ সংশোধন করা হবে এবং রচয়িতা অমিতাভ দেউরীকে এই অর্থের ৬ শতাংশ বাবদ ৬৬ লাখ ১৭ হাজার টাকা পরিশোধ করা হবে বলে গত মার্চে দুই পক্ষ একটি চুক্তি করেন। সেই চুক্তিতে বলা ছিল লেখক স্বত্বের অধিকার ও বাণিজ্যিক স্বত্বের ৬ শতাংশ অর্থ পাওয়া সাপেক্ষে অমিতাভ দেউরী পূর্বের সব অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেবেন। চুক্তি অনুযায়ী ৩৬ লাখ ১৭ হাজার ৬৩২ টাকার একটি চেক অমিতাভ দেউরীকে দেন নাজমুল। তবে সেই চেকটি অমিতাভ নগদায়ণ করতে পারেননি।

সম্পাদক অমিতাভ দেউরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ বইটির কপিরাইট সনদ সংশোধন করে রচয়িতা হিসেবে আমার নাম অন্তর্ভূক্ত করা হবে এই শর্তে আমি সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলতে থাকার মধ্যেই জার্নি মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করি। সেই চুক্তি অনুযায়ী বইটির লেখক স্বত্বের একাংশ হিসেবে নাজমুল আমাকে জার্নি মাল্টিমিডিয়ার নামে ৩৬ লাখ ১৭ হাজার ৬৩২ টাকার একটি চেক দেন। আমি আপিল বিভাগে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা সত্ত্বেও নাজমুলের দেওয়া সেই চেকটি নগদায়ন হয়নি। চেকটি নগদায়ন করতে না পেরে আমি একাধিকবার নাজমুল ও শারমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু তারা সেই চুক্তিকে অস্বীকার করে উল্টো ভয়-ভীতি দেখালে আমি আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হই।”

অমিতাভ দেউরী বলেন, “এর আগে নাজমুল আমার স্বাক্ষর জাল করে একাধিক কাগজপত্র সুপ্রিম কোর্টে পেশ করেন। এমনকী কপিরাইটের সরকারি আবেদনপত্রে নিজের অফিসের ঠিকানা ও ব্যক্তিগত ফোন নম্বরকে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের ঠিকানা ও ফোন নম্বর হিসেবে ব্যবহার করেন।”

আদালত সূত্র জানায়, গত ১৯ জুলাই মুখ্য মহানগন হাকিম আট নম্বর আদালতের বিচারক আরাফাতুর রাকিব ১২ সেপ্টেম্বর এই মামলার শুনানীর দিন ধার্্য করে বিবাদীদের আদালতে উপস্থিত হতে সমন জারি করেছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার শুনানীর দিন আসামিরা আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় বিচারক আরাফাতুর রাকিব তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।