নারীদেরই নিজের অধিকার আদায় করে নিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

21

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের নারী সমাজকে নিজের অধিকার আদায়ে যোগ্যতর হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের এই সমাজকে যদি আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, তাহলে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলে এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি নারীদের একটা কথাই বলবো- অধিকার দাও, অধিকার দাও বলে চিৎকার করা, বলা আর বক্তৃতা দেওয়া- এতে কিন্তু অধিকার আদায় হয় না। অধিকার আদায় করে নিতে হবে। অধিকার আদায়ের মত যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। সেই যোগ্যতা আসবে শিক্ষা-দীক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। যে কারণে দেশ স্বাধীন হবার পরই এদেশে নারী শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং অবৈতনিক করে দেন জাতির পিতা।

সোমবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী মিলনায়তনে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ২ কোটি ৫ লাখ ছেলে-মেয়েকে বৃত্তি-উপবৃত্তি দিচ্ছে যার মধ্যে বেশির ভাগই নারী। সমাজকে যদি গড়ে তুলতে হয় তবে, নারী-পুরুষ সকলকেই শিক্ষা দিতে হবে। যে কারণে আমরা প্রতিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।

শেখ হাসিনা অতীত স্মরণ করে বলেন, ’৯৬ সালে সরকারে এসে দেখেছেন কোন নারীই ডিসি, এসপির কোন পদ পেত না, উপজেলায় কোন ইউএনওর পদ পেত না কিন্তু তার সরকার ক্ষমতায় আসা পর থেকে এখন সকল পদে নারীরা আসীন হয়েছেন।
জাতীয় সংসদের স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদীয় উপনেতা সবাই মহিলা। এটাই বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় অর্জন। অতীতে ধর্মের নাম নিয়ে বা সামাজিকতার কথা বলে নারীকে পশ্চাৎপদ করে রাখার অপচেষ্টা সমাজ থেকে দূর হয়েছে।

বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে জীবন সংগ্রামে জয়ী নারীদের সম্মাননা দেয়ার জন্য বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য প্রতি বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ৫ জন ‘জয়িতা’কে জাতীয় পর্যায়ে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

এবারেও ৫ জনকে জয়িতা সম্মাননায় ভূষিত করা হয়েছে। তারা হচ্ছেন- অর্থনৈতিকভাবে সফল নারীর ক্যাটাগরিতে হাছিনা বেগম নীলা, শিক্ষা ও চাকরির সাফল্যের ক্যাটাগরিতে মিফতাহুল জান্নাত, সফল জননী নারী ক্যাটাগরিতে মোসাম্মাৎ হেলেন্নেছা বেগম, নির্যাতিতা-বিজয়ী নারী ক্যাটাগরিতে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা রবিজান এবং সমাজ উন্নয়নে অসমান্য অবদানের জন্য অঞ্জনা বালা বিশ্বাস।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফহিলাতুননেসা ইন্দিরা বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার হিসেবে এক লাখ টাকার চেক, সম্মাননা ক্রেস্ট এবং সনদ তুলে দেন।

মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুননেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য দেন। জয়িতা পদক প্রাপ্তদের পক্ষে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন জয়িতা হাছিনা বেগম নীলা।

মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, পদস্থ সামারিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশন ও দূতাবাসের প্রতিনিধি এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা পর্বের মাঝে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।