চীন থেকে আনা বাংলাদেশিদের সঙ্গে সাক্ষাত নিষিদ্ধ

চীনের উহান প্রদেশ থেকে যেসব বাংলাদেশি ফিরবেন তাদের আত্মীয়-স্বজনকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব নির্দেশনা মেনে চলতে এবং তাদের সাথে দেখা না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

শুক্রবার করোনা ভাইরাস ইস্যুতে চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হয়েছে জানিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

ওই স্ট্যাটাসে শাহরিয়ার আলম বলেন: ‘‘ইচেং এর ছাত্রদের সাথে আমার কথা হয়েছে, সেখানে প্রায় ১৫০ জন রয়েছে। জায়গাটা উহান থেকে দূরে কিন্তু রেডজোনের মধ্যে। তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থার চেষ্টা করছি আমরা।

স্যানডং বেইজিং এর কাছে হওয়াতে আমরা ট্রাভেল এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছি। অনেকে নিজেদের আয়োজনে ফেরা শুরু করেছেন। বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের সার্ভিস কমে যাওয়াতে বুকিং পেতে সময় লাগছে। ইনশাআল্লাহ আমরা সবাইকেই নিরাপদে রাখবো।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দপ্তরগুলো দক্ষতার সাথে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই আয়োজনগুলো করেছেন, তাদের উপর বাড়তি চাপ দেবেন না এবং আপনাদের পরিবারের সদস্যদের উপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ প্রয়োগ করবেন না। সরকার প্রয়োজনীয় কয়েকদিন তাদের সার্বিক সেবা প্রদান করবে।

সাংবাদিক ভাইবোনদেরও অনুরোধ করবো কোয়ারেন্টাইন এলাকায় সংবাদ সংগ্রহের নামে ভীড় না করার জন্য। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা পৃথিবীর ব্যাপী সতর্কতা জারি করেছে। আমাদের সকলকে দ্বায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। আমরা নিরাপদে থাকি সকলকে নিরাপদে থাকতে সহযোগীতা করি।’’

এর আগে শুক্রবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন: চীনের উহান প্রদেশ থেকে ৩৬১ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনছে সরকার। দেশে ফিরিয়ে এনে তাদেরকে এয়ারপোর্ট এর বিপরীত দিকে আশকোনাস্থ হজ ক্যাম্পে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হবে। সেসময় তাদের সঙ্গে পরিবারসহ কেউই দেখা করতে পারবেন না।

বিমানের বিশেষ ওই ফ্লাইটে অ্যাম্বুলেন্স এর সকল সুযোগ সুবিধাও থাকবে। ওই ৩৬১ জনকেও প্রটেক্টেড অবস্থায় বাংলাদেশে নিয়ে আসা হবে। এমনকি হজ ক্যাম্পে তাদেরকে আলাদা ভাবে নিয়ে রাখা হবে। হজ ক্যাম্পে তাদেরকে ১৪ দিন রাখা অবস্থায় যদি কেউ অসুস্থ হয় তাহলে চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ড এবং মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা প্রদানের জন্য পুলিশ ও সেনাবাহিনী সর্বদা মোতায়েন থাকবে।

পর্যবেক্ষণের ১৪ দিনের মধ্যে আত্মীয়-স্বজনদের এসে দেখা করতে না চাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন: বিদেশ ফেরত দেখার জন্য আত্মীয়-স্বজনরা ব্যাকুল হবে সেটাই স্বাভাবিক। আমি অনুরোধ করবো কেউ তাদের সাথে দেখা করতে চাইবেন না, তারা কেউ কারো সাথে দেখা করতে পারবেন না।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন আত্মীয়স্বজনদের উদ্দেশে একই মন্তব্য করে বলেন: চীন ফেরত এই বাংলাদেশিদের সঙ্গে স্বজনরা দেখা করার জন্য যেন উঠে পড়ে না লাগে। সেদিকে আপনারা লক্ষ্য রাখবেন। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সংবেদনশীল। তিনি এই ভাইরাসে আক্রান্তদের কথা শুনে শুনে অনেক আগে থেকেই বলছেন বাংলাদেশীদের ফেরত নিয়ে আসতে। এর আগে চীন সরকার আমাদেরকে বলেছিল ১৪ দিনের আগে তাদেরকে ফেরত দেওয়া যাবে না। অবশেষে গতকাল সন্ধ্যায় তারা জানিয়েছে তাদেরকে ফেরত দেওয়া সম্ভব। সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দিয়েছেন তাদেরকে ফেরত আনতে।

তিনি বলেন: ৩৬১ জন এর মধ্যে রয়েছে ১৯টি পরিবার, ১৮ জন শিশু এবং দুটি শিশু রয়েছে যাদের বয়স দুই বছরের নিচে। আমরা খুব অল্প সময়ে সব কিছু প্রস্তুত করেছি। এর থেকেই আমরা বুঝতে পারছি যে বাংলাদেশের ক্যাপাসিটি আছে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য। গতকাল সন্ধ্যায় আমাদের আনার সিদ্ধান্ত হয় এবং আমরা যে প্রক্রিয়ায় সফল হচ্ছি।