পটুয়াখালীর বাউফলে এক গৃহবধূকে ভাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে পটুয়াখালী আদালতে মামলা করেন ওই গৃহবধূর স্বামী। এ ঘটনায় বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই যুবলীগ নেতা বাদী হয়ে গতকাল বুধবার (৩জুলাই) বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে কালবেলার সাংবাদিক সহ চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। বিবাদীরা হলেন দৈনিক কালবেলার বাউফল উপজেলা প্রতিনিধি জি এম মশিউর রহমান মিলন, বাউফল প্রতিদিন ডটকম অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক মো. এনামুল হক এনা, বেসরকারি টেলিভিশন সময় টিভির ষ্টাফ রিপোর্টার মো. মনির হোসেন ও দৈনিক ভোরের আকাশের বাউফল প্রতিনিধি মো. ফিরোজ। আদালত বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্ত করার দায়িত্ব দিয়েছেন।
মামলার এজাহারের সূত্র ধরে “অন্যের বউ ভাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা” শিরোনামে দৈনিক কালবেলায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এদিকে সংবাদ প্রকাশ করায় চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলা করায় প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা।
এই মামলার সূত্র ধরে জনকণ্ঠ, কালবেলা, ভোরের কাগজ, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, সময়টিভিসহ অনেক পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
ওই যুবলীগ নেতার নাম মো. আরিফুজ্জামান খান রিয়াদ (৪৩)। তিনি বাউফল পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগান্তর পত্রিকার বাউফল ষ্টাফ রিপোর্টার।
ভাগিয়ে নেওয়া ওই নারীর স্বামী বলেন, যুবলীগ নেতা রিয়াদ খান বিভিন্ন অপকৌশলে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিষয়টি তাঁর শশুর-শাশুড়িসহ এলাকার সবাই জানে। সর্বশেষ গত ১৩ জুন ভোর রাতে তার স্ত্রীকে রিয়াদের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় তাঁর শাশুড়ি দেখতে পান। পরে রিয়াদ খান তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে রিয়াদ খানকে প্রধান আসামি করে দুই ব্যক্তির নামে ২৬ জুন পটুয়াখালী জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতে মামলা করেন। আদালত বাউফল থানার ওসিকে আগামী ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
ভাগিয়ে নেয়া ওই নারীর বাবা মো. আনোয়ার হোসেন খান ন্যায় বিচার চেয়ে বলেন, আমার মেয়েকে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে ভাগিয়ে নিয়ে গেছে। রিয়াদ আমার পরিবার ধ্বংস করে দিয়েছে। রিয়াদের কারণে সমাজে মুখ দেখানোর অবস্থা আমার নেই।
বাউফল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আদালতে মামলা হয়েছে সেই সূত্র ধরে এবং ভুক্তভোগি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সেই ঘটনায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলা এটা খুবই দুঃখজনক। তিনি এই হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
বাউফল প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান বাচ্চু মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে বলেন, সাংবাদিকদের হয়রানি করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই মামলা করা হয়েছে।
টেলিভিশন জার্নালিস্ট ফোরাম পটুয়াখালীর সভাপতি কাজল বরন দাস বলেন, সাইবার ট্রাইবুনালে মামলা দিয়ে সাংবাদিকদের হয়রানি করে সত্য প্রকাশ করা থেকে সাংবাদিকদের বিরত রাখা যাবে না। তিনি নিন্দা জানিয়ে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
এবিষয়ে যুবলীগ নেতা আরিফুজ্জামান খান রিয়াদ মুঠোফোনে বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। এ কারণে তিনি সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা করেছেন। তাঁরাতো (সাংবাদিক) মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সংবাদ প্রকাশ করেছেন। তাহলে মিথ্যা তথ্য হল কিভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই মামলাও মিথ্যা। পারিবারিক কলহের জেরে তাঁর (রিয়াদ) বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। তাঁকে হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি কোনো নারীকে ভাগিয়ে নেননি।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শোনিত কুমার গায়েন বলেন, ওই নারীর স্বামীর আদালতে দায়ের করা মামলার কপি গতকাল (বুধবার) পেয়েছেন। সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার খবর শুনেছেন। তবে তাঁর কাছে এখনও ওই মামলার কপি এসে পৌঁছায়নি। তিনি আরও বলেন, এতটুকু বলতে পারি মামলা দিয়ে কাউকে হয়রানি করার কোনো সুযোগ নাই। দুটি মামলাই অধিকতর গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে সঠিক পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করা হবে।