শহীদ জিয়া নাম পরিবর্তন করেও এমপিও ভূক্ত হয়নি মুক্তিযোদ্ধা মহাবিদ্যালয়

মাসুম বিল্লাহ , কেশবপুর প্রতিনিধিঃ

যশোরের কেশবপুরে শহীদ জিয়া নাম পরিবর্তন করেও মুক্তিযোদ্ধা মহাবিদ্যালয় দীর্ঘ ২৭ বছরেও এমপিও ভূক্ত না হওয়ায় খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। প্রতিষ্ঠানে আসবাবপত্র বলতে কিছুই নেই। স্যাঁত স্যাঁতে মেঝে, ব্যবহারিক শিক্ষা উপকরণ ছাড়াই জ্বরাজীর্ণ শ্রেণিকক্ষে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। এরপরও এমপিও ভূক্তির আশায় হাল ছাড়েনি শিক্ষক কর্মচারীরা। অন্য চাকরীর বয়স না থাকায় শিক্ষক-কর্মচারী পরিবারগুলো বর্তমান মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
জানাগেছে, ১৯৯৭ সালে কেশবপুর শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে কেশবপুর-সাগরদাঁড়ী সড়কের বুড়িহাটি গ্রামে ১০৮ শতক জমির ওপর এলাকাবাসির উদ্যোগে শহীদ জিয়া মহা বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। মহা বিদ্যালয়টি ধরে রাখার স্বার্থে এলাকাবাসি ও শিক্ষকদের অনুুদানেই চলতে থাকে এর শিক্ষা ব্যয়। ২০০৬ সালে মহা বিদ্যালয়টি (স্বীকৃতি) লাভ করে। এরপর ২০১০ সালে  তৎকালীন সভাপতি আওয়ামীলীগ নেতা মাস্টার মোসলেম উদ্দিন ও অধ্যক্ষ অসীম কুমার ঘোষ শহীদ জিয়া মহাবিদ্যালয় নাম পরিবর্তন করলে এমপিও ভুক্ত হবে এমন কথা বলে নাম পরিবর্তন করার চেষ্টা করে। এতে বাধা দিলে ওই সময় স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মিদের আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের সাথে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে কয়েক জন বিএনপির নেতা-কর্মি আহত হয়। এরপর বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে বাড়ি ছাড়া করে শহীদ জিয়া মহাবিদ্যালয় নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযোদ্ধা মহাবিদ্যালয় নাম দেয়া হয়। দীর্ঘদিনে এমপিও ভূক্ত না হওয়ায় এলাকাবাসি সহযোগিতা বন্ধ করে দিলেও শিক্ষকরা হাল ছেড়েনি।
প্রতিষ্ঠানটির অফিস সূত্রে জানা গেছে, মহাবিদ্যালয়টি বর্তমানে ১৮ জন শিক্ষক ও ৪ জন কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। প্রতিষ্ঠার সময় ইটের গাথুনির টিনের ছাউনির ১০ কক্ষ বিশিষ্ট দুটি ঘর নির্মাণ করা হয়। প্রয়োজনীয় কোন আসবাবপত্র নেই। এ কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘ দিনেও এমপিও ভূক্ত না হওয়ায়  শিক্ষাক কর্মচারীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবতার জীবনযাপন করছেন।
মহা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইদ্রিস আলী বলেন,  দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানটি সংস্কার না হওয়ায় ভেঙেচুরে পড়ার উপক্রম হয়েছে। স্যাঁত স্যাঁতে মেঝে, আসবাবপত্র বলতে কিছুই নেই।  এ কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে।এরপরও দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকরা বেতন ভাতা না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটলেও শিক্ষার্থীদের সাফল্যে তারা সনÍুষ্ট।
প্রভাষক শিরীন আরা পারভীন বলেন, বাড়ির কাছের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচিয়ে রাখতে জীবনের মূল্যবান সময়গুলো এ প্রতিষ্ঠানে কাটিয়ে দিয়েছি। নিজের সংসারের খরচ যোগানোর পাশাপাশি বিদ্যালয়টিতে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে গিয়ে বর্তমান আমার বাস্তভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই। সরকারি চাকরীর বয়স না থাকায় অন্য প্রতিষ্ঠানে যাওয়ারও সুযোগ নেই।
অধ্যক্ষ শেখ আব্দুর রহমান  বলেন, এমপিও ভূক্তির আশায় এখনও শিক্ষকরা এ প্রতিষ্ঠান আকড়ে বসে আছেন।  ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ১১ জন শিক্ষর্থী পরীক্ষা দেয়। তার মধ্যে ১০ পাশ করে। প্রতিষ্ঠানটি বাড়ি সংলগ্ন হওয়ায় অনেক দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েরা এখানে লেখাপড়া করে। বেতনের আশায় এই প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষক কর্মচারীদের কেটে গেছে দীর্ঘ ২৭ বছর। শিক্ষকরা বেতন ভাতা না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বর্তমান মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। দরজা জনালা না থাকায় চেয়ার বেঞ্চ চুরি হয়ে যাচ্ছে।