যানজট যেন নিত্যসঙ্গী;অসহনীয় দুর্ভোগে কালকিনিবাসী

রকিবুজ্জামান, মাদারীপুর প্রতিনিধিঃ

মাদারীপুরের কালকিনিতে দিন দিন বেড়েই চলেছে যানজট। এতে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে উপজেলাবাসীর। প্রতিনিয়ত অটোরিকশা সহ বড় বড় বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি ও নির্দিষ্ট কোন স্ট্যান্ড না থাকায় এসব যানবাহন সড়কে যত্রতত্র দাঁড় করিয়ে রাখায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এছাড়া উপজেলার দশটি ইউনিয়নের মধ্যে নয়টি ইউনিয়নে যেতে কালকিনি পালরদী নদীর উপর নির্মিত সরু ব্রীজ পার হতে গিয়ে সেখানেও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে প্রতিদিন অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন হাজারও মানুষ।

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালকিনি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে হতে শুরু করে পালরদী নদী ব্রীজের পূর্বপাড়ে প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তায় তীব্র যানজটে আটকে আছে যানবাহন। এতে এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে প্রায় এক ঘন্টা লেগে যাচ্ছে পথচারীদের। উপজেলার ব্যস্ততম এই ব্রীজের সড়কের উপর যত্রতত্র অটোরিকশা ও বাস দাঁড় করিয়ে রাখায় এ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

এনায়েতনগর ইউনিয়নের বাসিন্দা হালিমা আক্তার বলেন,”অসুস্থ রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাব, কিন্তু এক ঘন্টা ধরে এক জায়গাই আটকে আছি।যানজটে থেকে থেকে রোগী আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে।”

উপজেলার শিকারমঙ্গল ইউনিয়নের বাসিন্দা ব্যবসায়ী লাবলু মিয়া বলেন,”প্রতিদিন ব্রীজ পাড় হয়ে কালকিনি বাজারে আসতে হয়। যানজটের কারণে দুর্ভোগের কোনো সীমা থাকে না।দ্রুত এই ব্রীজটি প্রশস্ত করার প্রয়োজন।”

সুমন মিয়া নামের এক অটোরিকশা চালক জানান,”আগে সারাদিন ইজিবাইক চালিয়ে ৭-৮ শত টাকা রোজগার করতাম।এখন যানজটের কারণে ৫ মিনিট চালালে ২০ মিনিট আটকে থাকতে হয়।এতে দিন শেষে ৪-৫ শত টাকাও হয় না। দুপুরের পরই ব্যাটারি চার্জ শেষ হয়ে যায়।”

বেশ কয়েকজন এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,”মূলত তিন কারণে উপজেলায় যানজট বেড়েছে। এগুলো হচ্ছে অতিরিক্ত সংখ্যক অটোরিকশা ও বাস চলাচল,নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড না থাকায় যততত্র এসব যানবাহন রেখে যাত্রী ওঠানো-নামানো এবং নয়টি ইউনিয়নের জনগনের উপজেলায় প্রবেশে একমাত্র সেতুটি সরু হওয়া। এসব কারণে উপজেলার থানার মোড় সহ এর আশেপাশের সড়ক এবং মাছবাজার সংলগ্ন ব্রীজ রোডে সব সময় যানজট লেগেই থাকে।বিশেষ করে সকাল ও বিকেল বেলা যানজটের পরিমাণ অতিরিক্ত আকার ধারণ করে।এতে প্রতিদিনই ভোগান্তি পোহাতে হয় এ সড়কে চলাচলকারী মানুষদের।অনেক সময় অসুস্থ রোগী নিয়ে হাসপাতালে ঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পারায় রোগীও মারা যায়।”

কোন প্রকার নিবন্ধন দরকার না হওয়ায় বর্তমানে কতগুলো অটোরিকশা কালকিনিতে চলাচল করে, সে হিসাব কারো জানা নেই। তবে অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন উপজেলায় প্রায়য় ১ হাজারের বেশি অটোরিকশা চলাচল করে।

কালকিনির যানজট সমস্যার সমাধানে অটোরিকশা বন্ধ করা না গেলেও দিন রাত পালাক্রমে অটোরিকশা চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। যাঁরা দিনে চালাবেন, তাঁরা রাতে চালাতে পারবেন না।পাশাপাশি সড়কে চলতে পৌরসভা হতে নিবন্ধন করতে হবে সবাইকে।এতে যানজট অনেকটা কমবে বলে ধারণা সচেতন মহলের।

পথচারীরা জানান,”পুরো সড়ক জুড়ে যানজটের পাশাপাশি ফুটপাত গুলোতে দোকান তৈরি করার ফলে পায়ে হেটে চলাচল করাও এখন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।গত ৫ আগস্টের পর কিছুদিন ছাত্ররা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেছিল। তখন যানজট কিছুটা কম ছিল।কিন্তু এখন যানজট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।”

এসব বিষয়ে কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা ও পৌর প্রশাসক উত্তম কুমার দাশ বলেন, “যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলোচনা করে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে।এছাড়া উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ হতেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে যাতে ট্রাফিক পুলিশ দেয়া হয় সে বিষয়েও পুলিশের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।