যশোরে এবার লক্ষ্যমাত্রারও বেশি পাটের আবাদ হয়েছে। সোনালী ফসল পাট নিয়ে কর্মযজ্ঞ চলছে গ্রামীণ জনপদে। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে পাট ঘরে তোলার কাজে নেমেছেন কৃষক। বসে নেই কৃষাণীরাও। তারাও এই কাজে কোমর বেঁধে নেমেছে। যশোরের ফসলের মাঠসহ প্রাকৃতিক জলাধার খাল, বিল, বাওর ও নদীতে এমন দৃশ্য এখন সচরাচর। ফলে লকডাউনে স্থবির কৃষির নির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা ঘুরতে শুরু করেছে।
যশোরের বিভিন্ন ফসলের মাঠ, বিল ও বাওড়ের পাড় ঘুরে দেখা যায়, পাট কেটে জাগ দেয়ার জন্য পানিতে ডুবিয়ে রাখছেন কৃষক। আর যাদের জাগ দেয়ার পালা শেষ তাদের পাটের আঁশ ছাড়িয়ে পানিতে ধুঁয়ে আটি বাঁধা হচ্ছে। তারপর সেগুলো পাওয়ার ট্রিলারের টলিতে চাপিয়ে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন কৃষক। আর পাটের এই আঁশ ছাড়ানোর কাজে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও হাত লাগাচ্ছেন। অনেকে আবার নৌকা যোগে ছাড়ানো আঁশ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
কৃষক বলছেন, এবার পাটের যথেষ্ট ভাল ফলন হয়েছে। এখন বাজার দাম ঠিকঠাক মিললেই হলো। আর তেমনটি হলে লাভবান হবেন।
জেলার কৃষি বিভাগ সূত্র বলছে, যশোরে এবার লক্ষ্যমাত্রারও বেশি পাটের আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে আট উপজেলায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়, ২৫ হাজার ৩০০ হেক্টর। কিন্তু আবাদ হয়েছে তার চেয়েও বেশি। এবার মোট ২৬ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে পাটের চাষাবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে পাটের আবাদ হয়েছিল ২৩ হাজার ৫৬৫ হেক্টর। ফলে তথ্য পরিসংখ্যান বলছে, লাভজনক হয়ে ওঠায় যশোরে পাটের চাষাবাদ ও উৎপাদন ধারাবাহিক বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যশোর সদরের চাঁচড়ার রূপদিয়া গ্রামের কৃষক আদিত্য বিশ্বাস জানান, এবার আড়াই বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। বিঘা প্রতি ৮ থেকে ১০ মণ মত পাটের ফলন পাবেন বলে মনে করছেন তিনি।
কৃষক সঞ্জয় সরকার জানান, ২ বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। যারা ইতিমধ্যে পাট বিক্রি করেছেন তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন, ছোট থাকতে কাটা পাটের মণ প্রতি দাম মিলেছে ১ হাজার ৭শ’ টাকা থেকে ১ হাজার ৮শ’ টাকা। আর এখন যেসব পাট উঠছে সেগুলোর সর্বনিম্ন দাম ২ হাজার ৪শ’ টাকা। তিনি দাবি করেন, দামের পতন না হলে মোটামুটি লাভবান হবেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে লাভবান হয়েছেন যশোরের কৃষক। বর্তমানে পাটের বাজার দর ভালো যাচ্ছে। এখন আরো ভালো পাট উঠছে। তাই দামও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
যশোরে সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তার কার্যালয়ের জেলা বাজার কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান জানান, জেলার হাট-বাজারে ইতিমধ্যে পাট কেনাবেচা শুরু হয়েছে গেছে। বর্তমানে মানভেদে পাটের দাম ২ হাজার ২শ’ থেকে ২ হাজার ৪শ’ টাকার মধ্যে।