জীবিকার তাগিদে দেশ থেকে প্রতিবছর বহু মানুষ বিদেশে পাড়ি জমায় কিন্তু যাওয়ার সময় দালালদের মাধ্যমে অনেকে প্রতারিত হন। উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিবছর শত শত তরুণ-যুবকের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে দালালচক্র। হাতিয়ে নেয় বিপুল পরিমাণ অর্থ। জানা যায়, দেশে নির্ধারিত ব্যয়ের কয়েক গুণ বেশি টাকা খরচ করে দালালের মাধ্যমে বিদেশে যাচ্ছেন ৫২ শতাংশ অভিবাসী। দালালের খপ্পরে পড়ে টাকা দিয়ে অনেকে বিদেশেও যেতে পারেন না-প্রায়ই এমন খবর শোনা গেলেও বিদেশযাত্রায় দালালনির্ভরতা কমছে না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত আর্থ-সামাজিক ও জনমিতিক জরিপ প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিদেশে যাওয়া ব্যক্তিদের ৫২.০৩ শতাংশ দালালকে টাকা দিয়েছে। এই হার শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে বেশি। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দালালের প্রলোভনে পড়ে লাখ লাখ টাকা খুইয়ে সর্বস্বান্ত মাদারীপুর জেলার অনেক যুবক। তাঁদের পাসপোর্ট নিয়ে দেওয়া হয় ইতালির ভিসা, এমনকি বিমানের টিকিটও অগ্রিম কাটা হয়। কিন্তু ইমিগ্রেশনে গিয়ে যুবকরা জানতে পারেন সবই ভুয়া। এই দালালচক্র বৈধ অভিবাসনকেও ঝুঁকিতে ফেলছে। ইউরোপের দেশগুলো সেখানে থাকা অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশকে নিয়মিত চাপ দিয়ে যাচ্ছে। আবার পথে যারা ধরা পড়ছেন, তাঁদেরও ফিরিয়ে আনতে হচ্ছে। ভোগান্তি কমাতে নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও সরকারিভাবে খুব বেশি মানুষ বিদেশে যাচ্ছে না।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় মধ্যস্বত্বভোগী বা দালালদের সম্পৃক্ততা দরিদ্র কর্মীদের খরচ বাড়িয়ে দেয়। ইতালি যাওয়ার জন্য দালালদের হাতে টাকা তুলে প্রতারিত হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। লোভে পড়েই যুবকরা বারবার প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। মূলত সচেতনতার অভাবেই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হওয়া থেকে তরুণদের রক্ষা করতে হবে। এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালাতে হবে। ২০২১ সালে দেশের ১৫টি জেলায় ১৮টি চক্র বা সিন্ডিকেটকে শনাক্ত করা হয়। এমন আরো অনেক দালালচক্র সারা দেশে সক্রিয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অভিযানে কিছু দালাল ধরা পড়লেও মূল হোতারা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। কাজেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে। নিতে হবে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা। একই সঙ্গে দেশে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। বৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ বাড়াতে হবে।