বিদেশি মিশনে কর্মরত বাংলাদেশিদের জন্য আছে সুখবর

বিদেশি মিশনগুলোতে কর্মরত বাংলাদেশিদের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বৈদেশিক ভাতা বাড়িয়েছে সরকার। নতুন হার কার্যকর হবে ১ জানুয়ারি থেকে। এই অর্থ পরিশোধ করা হয় বৈদেশিক মুদ্রায়।

জানা গেছে, বিশ্বের ৬০ দেশে বাংলাদেশের ৮২টি মিশন রয়েছে। সেখানে কর্মরতরা নিয়মিত বেতন ও ভাতার বাইরে বৈদেশিক ভাতা পান। দেশের ভেতরের হারের বেতন-ভাতায় বিদেশে খরচ মেটানো সম্ভব হয় না বলে বৈদেশিক ভাতা দেওয়া হয়। বর্তমান হারে বৈদেশিক ভাতায় তাদের পেছনে সরকারের ব্যয় হয় ১৬৫ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। নতুন করে ব্যয় বাড়বে ২৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার, যা ৩৩ কোটি টাকার বেশি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গত রোববার বৈদেশিক ভাতা বৃদ্ধির কথা জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। তার আগে গত বৃহস্পতিবার অর্থ বিভাগের এ–বিষয়ক উপস্থাপিত প্রস্তাব অনুমোদন করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

পররাষ্ট্রসচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে অর্থ বিভাগ বলেছে, ভাতা বৃদ্ধির আগে ২০১২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৬০ দেশের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে দেশগুলোর মুদ্রা বিনিময় হারের সমন্বয়করণ পদ্ধতি বিবেচনা করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগ ভাতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আধা সরকারি চিঠিতে জানানো অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে। ওই চিঠিতে বৈদেশিক ভাতা ও আপ্যায়ন ভাতা ১০০ শতাংশ এবং শিক্ষা ভাতা ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির দাবি ছিল। তবে অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এবং সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের লক্ষ্যে অর্থ বিভাগ শুধু বৈদেশিক ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাবই অনুমোদন করেছে। তা–ও কিছুটা কমিয়ে। আপ্যায়ন ভাতা ও শিক্ষা ভাতা আগের হারই বহাল থাকবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী সুদান, লেবানন, ইরান, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া, ভিয়েতনাম, নেপাল, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জর্ডান, ভুটান, মালদ্বীপ, মেক্সিকো, কুয়েত, সৌদি আরব, ফিলিপাইন, কাতার এবং সিঙ্গাপুর হচ্ছে এ শ্রেণিতে রাখা দেশ।

চীন, ইরাক, বাহরাইন, ওমান, পাকিস্তান, রোমানিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, যুক্তরাজ্য, আলজেরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, বেলজিয়াম নেদারল্যান্ডস, থাইল্যান্ড, মরিশাস, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, মরক্কো এবং ব্রুনেই দারুসসালামকে রাখা হয়েছে বি শ্রেণিতে। বাকিরা সি শ্রেণিতে স্থান পেয়েছে।

তথ্য–উপাত্তে দেখা যায়, অর্থ উপদেষ্টা মাঝামাঝি একটি পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি এ শ্রেণিতে রাখা দেশের জন্য ৩০ শতাংশ, বি শ্রেণির জন্য ২৫ শতাংশ এবং সি শ্রেণির জন্য ২০ শতাংশ পর্যন্ত ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। এতে বাড়তি ব্যয় হবে ২৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ, পরিমাণে যা ২৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার।

মিশনগুলোতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাইরে অন্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও প্রেষণে নিয়োজিত আছেন। তাদের জন্যও এ হার প্রযোজ্য হবে এবং তাদের জন্য বাড়তি ব্যয় হবে বছরে ৬ কোটি টাকা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে শিক্ষা ভাতা একবার বাড়ানো হয়েছিল। তাই এটা নিয়ে তারা কিছু বলতে চায় না। আর বৈদেশিক ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাবও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করেছিল ২০১৮ সালে। এত বছর তা অনুমোদন পায়নি।

নতুন হারে নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বৈদেশিক ভাতা পাবেন বছরে ৩ হাজার ১৯৩ ডলার (৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা)। সর্বনিম্ন স্তরের একজন কর্মচারী পাবেন ৭২২ ডলার (৮৭ হাজার টাকার বেশি)।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, এখন রাজস্ব আদায় কম। এসব সিদ্ধান্ত আগামী বাজেটের সময় নেওয়া যেত।