৬০ বছরের মোস্তাফিজুরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে যুব মহিলা লীগ নেত্রী তামান্না আক্তার ফেন্সির (৩১)। এরপর গত ২০ নভেম্বর রাতে মোস্তাফিজুরকে বিয়ে করেন তামান্না। বিয়ের পর একটি তিন তারকা হোটেলে ফুলশয্যার কথা ছিল তাদের। কিন্তু ফুলশয্যার আগে বাড়িতে টাকা রেখে আসার কথা বলে পালিয়ে যান তামান্না। এমনকি বিয়ের ৪ দিনের মাথায় স্বামীকে তালাকও দেন তিনি।
ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহীতে। এ ঘটনায় গত ২৯ নভেম্বর নগরের চন্দ্রিমা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী মোস্তাফিজুর রহমান। রোববার (৮ ডিসেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছেন ফেন্সির সাবেক স্বামী ভুক্তভোগী মোস্তাফিজুর রহমান।
জানা গেছে, রাজশাহী নগরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড যুব মহিলা লীগের নেত্রী ও মেহেরচণ্ডী পূর্বপাড়ায় তামান্না আক্তার ফেন্সি (৩১) নগরের পদ্মা আবাসিকের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমানের (৬০) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর গত ২০ নভেম্বর রাতে তামান্না মোস্তাফিজুরকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর একটি তিন তারকা হোটেলে ফুলশয্যার কথা ছিল তাদের। কিন্তু ফুলশয্যার আগে বাড়িতে টাকা রেখে আসার কথা বলে কেটে পড়েন তামান্না। এর চার দিন পর তিনি তার স্বামীকে তালাকের নোটিশ পাঠান। এ ঘটনায় গত ২৯ নভেম্বর নগরের চন্দ্রিমা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সাবেক স্বামী ভুক্তভোগী মোস্তাফিজুর রহমান।
ভুক্তভোগী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্ত্রী অসুস্থ বলে আমি দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবছিলেন। তামান্না আক্তারেরও বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায় ১৪ বছর আগে। ১৩ বছর বয়সী তার একটি মেয়ে আছে। বছর দুয়েক আগে পরিচয়ের পর তামান্নাকে আমার ভালো লেগেছিল। এ জন্য বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু তামান্না আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
তিনি আরো বলেন, আমি এক বছর আগেই বিয়ের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তখন তামান্নাকে বিয়ের বাজার করতে এক লাখ টাকাও দিয়েছিলাম। ওই সময় টাকা নেয়ার পর বিয়ে করেননি তামান্না। এরপর বছরখানেক দুজনের কোনো যোগাযোগ ছিল না। কিছুদিন আগে আবার তামান্না যোগাযোগ শুরু করে। বিয়ে করবে ভেবে তার মনও নরম হয়ে যায়। তামান্না জানায়, তাকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হলে সে বিয়ে করবে। এই টাকা দিয়ে সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন বাজারে দোকান করতে চায়। তামান্নার প্রস্তাবে আমি রাজি হয়ে যায়।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এরপর গত ২০ নভেম্বর রাতে তামান্না আমাকে মেহেরচণ্ডী এলাকার একটি কাজী অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে নগদ তিন লাখ তিন হাজার টাকা দেনমোহরে বিয়ে করে। বিয়ের পর শহরের একটি তিন তারকা হোটেলে ফুলশয্যার কথা ছিল আমাদের। এ জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়ে একটি রুম বুক করি। কিন্তু হোটেলে ওঠার আগে তামান্না বলে, সে এতগুলো টাকা নিয়ে হোটেলে উঠবে না। টাকাটা বাড়িতে রেখে আসবে। আমি তাতে সম্মতি দিই। তাকে বাড়ি পাঠিয়ে আমি অপেক্ষা করতে থাকি। কিন্তু সে আর আসেনি। অসংখ্যবার ফোন দিলেও সে আমার ফোন ধরেনি। এরপর সম্প্রতি তামান্নার পাঠানো তালাকের নোটিশ হাতে পেয়েছি।
তামান্না এই তালাকে সই করেছে বিয়ের চার দিন পর, অর্থাৎ ২৪ নভেম্বর।
তবে যুব মহিলা লীগ নেত্রী তামান্না আক্তার ফেন্সি বলেন, বিয়ের পরই আমাকে দুই কাঠা জমি দেওয়ার কথা ছিল। ওই জমিতে একটি ফ্ল্যাটবাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ারও কথা ছিল। আর আমার ভবিষ্যতের জন্য ব্যাংকে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার মৌখিক প্রতিশ্রুতি ছিল। এসবের কিছুই দেননি মোস্তাফিজুর। তিনি আমাকে বাড়িও নিয়ে যাবেন না। আমার মেয়ের দায়িত্ব নেবেন না। তাই তার সঙ্গে আমার সংসার করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, দেনমোহরের ৩ লাখ ৩ হাজার টাকা বুঝে পেয়েছেন বলে স্বাক্ষর দিলেও বাস্তবে টাকা পাননি। কাজি অফিস থেকে বেরিয়ে মোস্তাফিজুর টাকা দেননি। এখন তিনি গালগল্প সাজিয়ে বলছেন। আমি পালিয়ে যাইনি। অফিস করছি। আমি যুব মহিলা লীগকে সমর্থন করতাম। তবে কোনো পদে ছিলাম না।
রাজশাহী মহানগর যুব মহিলা লীগের সভাপতি ইসমত আরা বলেন, মহানগরে ওয়ার্ড পর্যায়ে যুব মহিলা লীগের দীর্ঘদিন ধরে কোনো কমিটি নেই। তামান্না আক্তার ফেন্সি দলের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি ২৬ নম্বর ওয়ার্ড দেখাশোনা করতেন। মহানগর কমিটির কর্মসূচিতেও অংশ নিতেন।
চন্দ্রিমা থানার ওসি মতিয়ার রহমান বলেন, তামান্নার সঙ্গে কথা বলেছি। কী কী নাকি দেওয়ার কথা ছিল, মোস্তাফিজুর সেসব দেননি বলে তালাক দিয়েছেন বলে তামান্না আমাদের জানিয়েছেন। এখন বিষয়টা তো কোর্টের ব্যাপার। মোস্তাফিজুর আমাদের কাছে একটা অভিযোগ দিয়েছেন। আমি একজন এএসআইকে তদন্ত করতে দিয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।