ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বোচাপুুকুর এলাকায় সুগারমিলের খেজুর বাগানের গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করে প্রাকৃতিক পরিবেশে গাছিরা তৈরী করছে খেজুর গুড়। ইতিমধ্যে খেজুরের রস ও রস দিয়ে তৈরীকৃত এ গুড় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ।
প্রাকৃতিক পরিবেশে গুড় তৈরী দেখতে, রস ও গুড় নিতে স্থানীয়রা সহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শতশত ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন এখানে। রসের স্বল্পতার কারণে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদন হচ্ছেনা গুড়।
ঠাকুরগাঁও সুগার মিলের মোহন ইক্ষু খামারের পার্শ্বে খেজুর বাগানটি মিল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে রাজশাহী জেলা থেকে ৭ জন গাছি ২২ হাজার টাকায় লিজ নেয়। সর্বসাকুল্লে গাছিরা বাগানে খরচ করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। বাগনে মোট হাজারেরো বেশি খেজুর গাছের মধ্যে প্রতিদিন ৬’শ থেকে সাড়ে ৬’শ গাছ থেকে গড়ে ৫’শ লিটার রস সংগ্রহ করা হয়। এতে গড়ে ৮০ কেজি করে গুড় তৈরী হচ্ছে। গুড় ও রস বিক্রয় করে গাছিরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
গাছি রবিউল ইসলাম জানান, প্রাকৃতিকভাবে ও নির্ভেজাল গুড় তৈরী করায়এখানকার গুড় ও রসের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। আমাদেরকে বাজারে নিয়ে গুড় বিক্রয় করার প্রয়োজন হয় না। সরজমিনেই এসে ক্রেতারা রস ও গুড় ক্রয় করে নিয়ে যায়। অনেকে এক সপ্তাহ আগেই রস ও গুড় নেওয়ার জন্য অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখলেও তাদের আমরা ঠিকভাবে রস ও গুড় দিতে পারছিনা। গাছ থেকে রস কম উৎপাদন হওয়ার কারণে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছেনা।
এছাড়াও রাতের অন্ধকারে দূর্বিত্তরা এসে আমাদের রসের হাড়ি চুড়ি করে নিয়ে যাচ্ছে ও হাড়ি ভেঙ্গে দিয়ে যাচ্ছে। এতে আমরা যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।
বাগানে খেজুরের রস ও গুড় কিনতে আসা কয়েকজন ক্রেতা জানান, প্রাকৃতিকভাবে ও ভেজাল মুক্ত হওয়ায় এখানকার রস ও গুড় অনেক সুস্বাদু তাই এর চাহিদা অনেক বেশি।
পঞ্চগড় জেলা থেকে আগত একদল তরুণ জানান, পঞ্চগড় থেকে ভোর ৬ টায় মটরসাইকেল নিয়ে রওনা দেন তারা খেজুরের রস খাওয়ার জন্য। এখানে এসে খুব কষ্টে দুই হাড়ি রস ৭’শ টাকায় ক্রয় করে খান। তবে তাদের চাহিদা অনুযায়ী রস খেতে না পারলেও বাগানের পরিবেশ তাদের মুগ্ধ করেছে।
অন্যদিকে শীতকে উপেক্ষা করে পরিবারের শিশু ও বড়দের সাথে নিয়ে স্বপরিবারে প্রাকৃতিকভাবে খেজুরের গুড় তৈরির দৃশ্য দেখতে অনেক দুর-দূরান্ত থেকে মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল যোগে শতশত মানুষ ছুটে আসছেন এখানে। এমনি কয়েকজন দর্শনার্থী জানান, এখানকার পরিবেশ অনেক সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর। এখানে স্বানন্দে প্রাকৃতিকভাবে গুড় তৈরির দৃশ্য উপভোগ করছেন এবং রস ও গুড় ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে সরকারি ও প্রশাসনিকভাবে যদি কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় তাহলে ঠাকুরগাঁওয়ের জন্য একটি ভালো অবস্থান তৈরি হবে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, বর্তমানে পর্যাপ্ত পরিমাণে খেজুরের রস হচ্ছেনা। ভবিষত্যে যাতে চাহিদা অনুযায়ী রস ও গুড় উৎপাদন করা যায় এবং গাছ পরিচর্যার ও গাছিদের সার্বিক সহযোগিতার ব্যাপারে সুগারমিল কর্তৃপক্ষ ও কৃষি কর্মকর্তার সাথে কথা বলা হয়েছে। কীভাবে রস ও গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় সে ব্যাপারে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি আগামীতে চাহিদা অনুযায়ী গুড় উৎপাদন করা যাবে।