ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন পদস্থ কর্মকর্তার অনৈতিক তৎপরতার অভিযোগের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রচারের পর অন্তত ১০ জন সাংবাদিককে তদন্ত কমিটিতে তলব করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) দপ্তর থেকে কয়েকদিন আগে পাঠানো এক চিঠিতে ‘সুষ্ঠু অনুসন্ধানের নিমিত্তে’ নির্ধারিত সময়ে ১০ জন সাংবাদিককে হাজির হতে বলা হয়।
ডিএমপি কমিশনার মূলত একজন কর্মকর্তাকে দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে তাকে ডিএমপি থেকে সরিয়ে দিতে পুলিশ সদর দপ্তরে চিঠি দিয়েছিলেন। সেই চিঠি গণমাধ্যমের কাছে আসলে তা প্রকাশ হবে এটাই স্বাভাবিক। সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন।
ডিএমপি কমিশনারের সেই চিঠি যদি মিথ্যা হতো তাহলে সাংবাদিকদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া যেত। কিন্তু সেই চিঠিকে মিথ্যা বলে এখনও কোনো পক্ষ দাবি করেনি। চিঠির বিষয়বস্তু সত্য হলে কোন যুক্তিতে ডিএমপি’র তদন্ত কমিটি সাংবাদিকদের তাদের কাছে হাজিরা দিতে বলে? এটা কি তারা বলতে পারে? আমরা মনে করি, এমনটা তারা বলতে পারেন না। সাংবাদিকদের হাজির হওয়ার চিঠি তাদের এখতিয়ারের বাইরে।
পুলিশের অভ্যন্তরীণ অপরাধের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনারের দেওয়া চিঠির বিষয়ে তাদের তাদের বিভাগীয় তদন্ত হতেই পারে। সেই তদন্তে যদি অভিযুক্ত কর্মকর্তা দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে শাস্তি পাবেন। আর যদি নির্দোষ হন সে বিষয়েও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। কিন্তু পুলিশি অপরাধ সংক্রান্ত পুলিশ বিভাগের তদন্তে সাংবাদিকদের তলব করা এবং জিজ্ঞাসাবাদের পদক্ষেপ স্পষ্টতই প্রচলিত আইন ও রেওয়াজের পরিপন্থী। এ ধরণের চিঠি এক ধরণের মনস্তাত্বিক চাপ তৈরি করছে। যা স্বাধীন সংবাদ প্রবাহের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।
এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও এ ধরনের পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। আমরা ডিইউজে’র এমন অবস্থানকে স্বাগত জানাই। একইসঙ্গে এ ধরণের হয়রানী ও মনস্তাত্বিক চাপমূলক উদ্দেশ্যপূর্ণ চিঠি অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
পুলিশ এ বিষয়ে অবগত থাকার কথা যে, দেশের প্রচলিত আইনে সাংবাদিকদের কাছে তথ্যের সূত্র জানতে চাওয়ার কোনও অবকাশ নেই। কেননা, সূত্রের গোপনীয়তা রক্ষা করা একজন সাংবাদিকের মৌলিক ও পবিত্র দায়িত্বের অংশ হিসেবে স্বীকৃত। তাছাড়া সাংবাদিকদের কাজ হচ্ছে গোপনীয়তার বেড়াজাল ভেঙে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য জনগণকে অবহিত করা। এসব বিবেচনায় পুলিশ তাদের চিঠি অবিলম্বে বাতিল করবে বলেই আমাদের আশাবাদ।