নির্বাচন নিয়ে সরকারের বক্তব্য সন্দেহ-সংশয়ের উদ্রেক করে: তারেক রহমান

নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বক্তব্য সন্দেহ-সংশয়ের উদ্রেক করে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

আজ শুক্রবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেআরএফ) রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। সরকারের কাছে আরও বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকাও প্রত্যাশা করেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, গণ-অভ্যুত্থান সফলকারী জনগণের সামনে অন্তর্বর্তী সরকারের সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে। জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন রকম বক্তব্য এসেছে। এমন একটি কাঙ্ক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে সরকারের বক্তব্যের গরমিল জনগণের মনে নানা ধরনের সন্দেহ-সংশয়ের উদ্রেক করে।

সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও দায়িত্বশীল, গণমুখী ও কার্যকর দেখতে চায়। কারণ, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং জনগণের সরাসরি ভোটে একটি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনোই বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্যেই গণতন্ত্রকামী জনগণ বর্তমান সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। জনগণের নিঃশর্ত সমর্থনের প্রতি নিঃশর্ত মূল্য দেওয়া এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্ব।

এ সময় সরকারের সংস্কার উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র ও রাজনীতি সঠিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। সংস্কার কার্যক্রম অবশ্যই একটি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। আমি বরাবরই সংস্কারের পক্ষে। তবে সংস্কার একটি ধারাবাহিক এবং চলমান প্রক্রিয়া। কখনো কখনো এটি সময়সাপেক্ষ। তবে যেকোনো সংস্কার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশীদারত্ব সৃষ্টি না হলে সেই সংস্কার শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ফল আনে না।

তিনি আরও বলেন, ‘গণহত্যাকারী পলাতক স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া ১৫ বছরের জঞ্জাল দূর করে রাষ্ট্রকে জনগণের প্রত্যাশিত গণতন্ত্রের পথে ফেরাতে একটি সরকারের জন্য আড়াই মাস হয়তো যথেষ্ট সময় নয়। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের করণীয় নির্ধারণে এবং অগ্রাধিকার ইস্যু ঠিক করার জন্য হয়তো আড়াই মাস কম সময়ও নয়। আমি আগেও বলেছি—অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অ্যাজেন্ডা সেটিংয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ধারণে ব্যর্থ হলে সেটি প্রত্যাশিত গণতন্ত্র উত্তরণের পথে অনাকাঙ্ক্ষিত বাধার কারণ হয়ে উঠতে পারে।’

সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্বৈরাচার সরকারের সুবিধাভোগীরা ঘরে-বাইরে, প্রশাসনে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে চায়। ষড়যন্ত্রের বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলতে না পারলে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের অর্জন বিপন্ন হবে। রাষ্ট্রকে জনগণের প্রত্যাশিত কাজ করতে হবে।’

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সমালোচনা করে তারেক রহমান বলেন, ‘বর্তমানে দেশে কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের মানুষ, নিম্ন মধ্যবিত্ত এমনকি অনেক মধ্যবিত্ত ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, বিক্রেতা সবাই এক দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখোমুখি। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য অনেকেরই ক্রয়সীমার বাইরে। জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও জনগণের আয় সেভাবে বাড়েনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই—জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আরও বাস্তব এবং কঠোর পদক্ষেপ নিন। মানুষকে আধপেটা রেখে কোনো ভালো কথাই গেলানো সম্ভব নয়। বছরের পর বছর ধরে মাফিয়া চক্রের বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কাজটি হয়তো একটু কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিষদের আকার হয়তো বাড়ানো যেতে পারে।’

এ সময় জেআরএফের ওভারসিজ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ও তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমানও ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। অনুষ্ঠানে গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ১০ নিহতের পরিবার এবং ১০ আহতকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়।