জলবায়ু দুর্যোগের জন্য গ্লোবাল সাউথের চড়া মূল্য, তেল কোম্পানির মুনাফা বৃদ্ধি

জলবায়ু দুর্যোগ বাড়ছে এবং দেশগুলো তাদের জাতীয় নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) পূরণে পিছিয়ে পড়ছে—যা দেশগুলোর গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন—তা সত্ত্বেও বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলো চোখ ধাঁধানো বার্ষিক মুনাফার ঘোষণা দিয়েছে।

এক্সনমোবিল, শেল, বিপি, টোটালএনার্জিস ও ইএনআই—এই পাঁচটি বৃহত্তম আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানির ২০২৪ সালে মুনাফা প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এই বিপুল মুনাফার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে জীবাশ্ম জ্বালানির উত্তোলন ব্যাপক হারে বাড়ানো। তবে, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগের বদলে এই কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফা ব্যয় করেছে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ বিতরণ, স্টক বাইব্যাক, গ্রিনওয়াশিং প্রচারণা এবং জলবায়ু সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার পথে।

গ্রিনপিস মেনা অঞ্চলের “স্টপ ড্রিলিং, স্টার্ট পেইং” ক্যাম্পেইনের সমন্বয়ক কেঞ্জি আজমি এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন “আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলো প্রতিবছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মুনাফা করছে, যা জলবায়ু সংকটকে আরও তীব্র করছে। অন্যদিকে, মেনা অঞ্চলের স্থানীয় সম্প্রদায় তাদের জীবন ও জীবিকা হারাচ্ছে। ২০২৪ সালের আরব অঞ্চলের দুর্যোগ ঝুঁকি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এ অঞ্চলের তাপমাত্রা প্রতি দশকে ০.৫°সে. হারে বাড়ছে। এর ফলে দাবানল, পানি সংকট, ফসল নষ্ট ও ভয়াবহ বন্যার মতো ঘটনা বেড়েছে। ২০২৪ সালের বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে ইয়েমেনের ৫ লাখেরও বেশি মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

এদিকে, বিশ্বের বিভিন্ন সরকার তাদের জলবায়ু প্রতিশ্রুতি পূরণে শিথিলতা দেখাচ্ছে। ১৫৫টি দেশ ২০৩৫ সালের জন্য সংশোধিত এনডিসি জমা দিতে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত সময় নিয়েছে, যা জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন কাঠামো (ইউএনএফসিসিসি) সেক্রেটারিয়েটের কাছে বিলম্বিত হয়েছে। এই গড়িমসি পরোক্ষভাবে জীবাশ্ম জ্বালানির শিল্পকে লাভবান করছে, যারা নিষ্ক্রিয়তা ও নীতির ফাঁকফোকর ব্যবহার করে উত্তোলন, দূষণ ও মুনাফা অব্যাহত রেখেছে।

আজমি আরও যোগ করেন, “ধনী দেশগুলো গ্লোবাল সাউথের পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে রূপান্তর, জলবায়ু অভিযোজন ও জলবায়ু-সম্পর্কিত ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল দেওয়ায় গড়িমসি করছে। অথচ তারা অর্থের অভাবকে অজুহাত হিসেবে তুলে ধরছে।”
তিনি শেষ করেন, “নেতাদের এখনই জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বড় দূষণকারীদের কাছ থেকে জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করে জলবায়ু ঋণের দায় মোকাবিলা করতে হবে।”