ছয় ঘণ্টা পর শাহবাগ ছাড়লেন কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা

নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে ছয় ঘণ্টা পর রাজধানী ঢাকার শাহবাগ মোড় ছেড়েছেন সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল প্রতিবাদে ও ২০১৮ সালের কোটা পরিপত্র বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে শিক্ষার্থীরা শাহবাগের রাস্তা ছাড়েন। একইসময়ে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা।

কর্মসূচির মধ্যে আগামীকাল শুক্রবার সারাদেশে কোটা বাতিলের পক্ষে অনলাইনে ও অফলাইনে জনসংযোগ ও সমন্বয়, শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও রোববার সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধী আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম এ ঘোষণা দেন।

বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদযাত্রা নিয়ে এসে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ অবরোধ করেন। এসময় ‘১৮ এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘১৮ এর পরিপত্র, বহাল করতে হবে’, ‘সংবিধানের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’ সহ শিক্ষার্থীদের নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়।

এদিকে শিক্ষার্থীদের ছয় ঘণ্টার অবরোধের কারনে শাহবাগ থেকে সায়েন্স ল্যাব, মিরপুর সড়ক, গুলিস্তান, মৎস্যভবন, শাহবাগ থেকে ফার্মগেটগামী সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। এসব এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যান চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীদের অনেকেই হেঁটে গন্তব্যস্থলের দিকে রওনা হয়।

কোটা বাতিলের দাবির পক্ষে আন্দোলনকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রেজওয়ান আহমেদ সময়ের আলোকে বলেন, কোটা ব্যবস্থা কার্যত বাংলাদেশের কোটাবিহীন সাধারণ মানুষদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে রূপান্তর করে দিয়েছে। বর্তমানে অনগ্রসর নয় এমন বহু জনগোষ্ঠী কে কোটা সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্র জন্ম হয়েছিল বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে। কিন্তু এতো বছর পেরিয়ে গেলেও এই বৈষম্য আমরা দূর করতে পারিনি।

এর আগে সকাল ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে মিছিল নিয়ে সংগঠিত হন শিক্ষার্থীরা।

তবে এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ উঠে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হল ও কবি জসীম উদ্‌দীন হল গেটে তালা দেওয়া হয়। এ কথা ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে এসে সূর্যসেন হলে আটকা পড়া শিক্ষার্থীদের বের করে নিয়ে আসে।

শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবিতে এ আন্দোলন করছেন। দাবিগুলো হলো- ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা; পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ছাড়া); সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোয় মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা