নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রভাব বিস্তার ও আড়ত দখলকে কেন্দ্র করে স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মাঝে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, গুলিবর্ষণ ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুজন গুলিবিদ্ধসহ উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের সাওঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহসড়ক সংলগ্ন সাওঘাট এলাকায় বিসমিল্লাহ আড়ত নিয়ে জাপান-বাংলাদেশ গ্রুপের চেয়ারম্যান সেলিম প্রধানের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ী মুজিবর রহমানের আড়ত নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল।
ব্যবসায়ী মজিবুর রহমানের দাবি, সেলিম প্রধানের মালিকানাধীন জমি তিনি ১০ বছরের জন্য চুক্তি ভিত্তিতে ভাড়া নেন। পরে সেখানে বালু ভরাট ও শেড নির্মাণ করে কাঁচাবাজারের আড়ত গড়ে তোলেন। বর্তমানে পেশি শক্তি খাটিয়ে আড়তটি বেদখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন সেলিম প্রধান।
সেলিম প্রধানের দাবি, ভুয়া চুক্তিনামা তৈরি করে জোরপূর্বক জমি দখল করে আড়ত গড়ে তোলেন মজিবুর রহমান।
এদিকে আড়তটি দখল করতে সেলিম প্রধানের পক্ষ নেয় জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মাসুদুর রহমান ও তার লোকজন। অপরদিকে, মজিবুর রহমান ও আড়তের ব্যবসায়ীদের পক্ষ নেয় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম ও তার লোকজন।
জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে আড়তের পাশে সেলিম প্রধানের বাড়িতে মাসুদুর রহমানের লোকজন অবস্থান নেন। এ সময় আড়তের পাশের সড়ক দিয়ে রফিকুল ইসলাম তার নেতাকর্মীদের নিয়ে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল বের করেন। সেলিম প্রধানের বাড়ির ভেতর থেকে ওই মিছিলে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। পরে উভয়পক্ষের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের লোকজন ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, গুলিবর্ষণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় কয়েকজনকে পিস্তল হাতে গুলি করতে দেখা গেছে।
সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতের মধ্যে রাজু ও স্বপন নামের দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ সময় সেলিম প্রধানের ব্যবহৃত একটি জিপ গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১০টি মোটরসাইকেলও পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে যৌথবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল করছিলাম। ওই মিছিলে অতর্কিতভাবে সন্ত্রাসীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ, গুলি ও হামলা করে।
জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। তবে শুনেছি আমার লোকজনের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে। গুলিবিদ্ধসহ অনেকে আহত হয়েছে।
এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) গ সার্কেল মেহেদী ইসলাম বলেন, সেলিম প্রধানের সঙ্গে মুজিবুর রহমানের বিসমিল্লাহ আড়ত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা চলছিল। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। যেহেতু এখানে গুলিবষর্ণের ঘটনা ঘটেছে, আমরা অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা চালাব। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আড়তের আসল মালিক কে সেটির জন্য আমরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হব।