ঠাকুরগাঁওয়ে গ্রাম্য সালিশ চলাকালীন সংঘর্ষে ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৪ জন আহত হয়েছেন। সোমবার (১০ আগস্ট) বিকেলে সদর উপজেলার ৪ নং বড়গাঁও ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, বড়গাঁও ইউনিয়নের আরাজী সরকার পাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হামিদের ছোট ছেলে মৃত সোহেলের সাথে দেবীপুর পঁয়সা ফেলা গ্রামের মজিবরের মেয়ে কুলসুমের বিয়ে হয়। গত এক মাস ১৫ দিন আগে সোহেল বজ্রপাতে মারা যান। তার মৃত্যুর পর থেকে স্ত্রী কুলসুম ও তাদের একমাত্র মেয়ে সন্তানের উপর শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে। এ বিষয়ে কুলসুমের পরিবার মৃত সোহেলের পরিবারের সাথে বসে সমঝোতা করার চেষ্টা করে। কুলসুম তার মেয়ের জন্য নিজ স্বামীর কেনা ৫টি গরু ও ১ বিঘা সম্পত্তি দাবি করে কিন্তু সোহেলের পরিবার রাজি না হয়ে হুমকি-ধামকি দেয়।
বিষয়টি সমাধানের জন্য মৃত সোহেলের পরিবার চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করে। অভিযোগের ভিত্তিতে উভয়পক্ষকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে আলোচনায় বসলে মৃত সোহেলের বড় ভাই জুয়েলের শ্বশুরবাড়ির লোকজন সালিশে আলোচনা চলাকালীন চেয়ারম্যানের উপর হামলা করে। এতে চেয়ারম্যান ও গ্রাম্য পুলিশসহ বেশকয়েকজন আহত হন।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য পরেশ জানান, হলরুমে আলোচনার সময় মৃত সোহেলের পরিবারের লোকজনের হামলায় চেয়ারম্যানসহ একজন গ্রাম্য পুলিশ ও ২ জন গুরুতর আহত হন।
মৃত সোহেলের স্ত্রী কুলসুম জানান, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে শশুরবাড়ির লোকজন আমার উপর বিভিন্নভাবে অমানবিক নির্যাতন করে। আমার মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য আমার যৌতুকের টাকা দিয়ে কেনা ৫টি গরু ও ১ বিঘা জমি দাবি করি। একপর্যায়ে তারা রাজি হলেও পরে তারা দিতে অস্বীকার করে। বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে সালিশে বসলে তারা কোনো কিছু দিতে পারবে না বলে চেয়ারম্যানকে জানায়। কিন্তু চেয়ারম্যান এর প্রতিবাদ করতে গেলে আমার স্বামীর ভাই জুয়েলের শশুরবাড়ির আত্মীয় ফুপা, শ্বশুর খলিলুর রহমান ও তার ছেলে ফিরোজ, রিফাজ, শ্বশুর আবু মেম্বর ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা চেয়ারম্যানের উপর হামলা চালায় এবং আমাকে মারধর করে। আমি এর বিচার চাই।
হামলার বিষয়ে ৪ নং বড়গাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাত কুমার সিং বলেন, আরাজী সরকার পাড়া গ্রামের মজিবরের ছেলে মৃত সোহেলের পরিবারের সাথে তাঁর স্ত্রী কুলসুমের পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে পরিষদের হলরুমে সালিশে বসা হয়। এ সময় দুপরের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আমি আহত হই।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানা ওসি তানভীরুল ইসলাম প্রিয়দেশকে জানান, ঘটনাস্থল থেকে উত্তেজিত জনতার হাত থেকে সেভ করার জন্য ৫ জনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চেয়ারম্যানের উপর হামলার ঘটনাটি এলাকায় মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়। এ সময় মৃত সোহেলের পরিবারের উপর স্থানীয়রা চড়াও হয় এবং পুলিশের হাত থেকে কয়েকজনকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। দেখা যায় উত্তেজিত জনতা হামলাকারীদের মারধর করে।