গণভবন স্টাইলে লুট হয়েছে মোল্লা কলেজ

গণভবন স্টাইলে লুট করা হয়েছে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের জিনিসপত্র। বিভিন্ন টেলিভিশনের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কলেজের চেয়ার-টেবিল, কম্পিউটার, রাউটারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র অনেকে নিয়ে যাচ্ছেন।

ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকাল থেকে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হতে থাকেন। সেখান থেকে হাজারো শিক্ষার্থী ডেমরার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। এরপর মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে পৌঁছানোর পর সেখানে ব্যাপক তাণ্ডব চালান তারা। মাইকিং করে কলেজটিতে ভাঙচুর চালানো হয়।

এদিকে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলার ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী এবং বেশ কয়েকজন শিক্ষক আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) মোল্লা কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ সামীর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি করেছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষের এই দাবির সত্যতার ব্যাপারে স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ঘটনায় কেউ মারা যায়নি।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উল্লিখিত ঘটনায় দুই জন নিহত হয়েছেন মর্মে অনেকেই অপপ্রচার চালাচ্ছেন, যা মোটেই সঠিক নয়। সংশ্লিষ্ট সকলকে এরূপ অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলো।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ গভীর শোক ও ক্ষোভের সঙ্গে জানাচ্ছে যে, আজ আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে। তথাকথিত সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বহিরাগত একদল সন্ত্রাসী প্রবেশ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এ হামলায় তিন শিক্ষার্থী নির্মমভাবে প্রাণ হারায় এবং শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর, যাদের মধ্যে কয়েকজনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ হামলায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের কিছু ছাত্র নামধারী ব্যক্তি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের মদদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। হামলাকারীদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী নয়, বরং সন্ত্রাসী কার্যক্রমে লিপ্ত ব্যক্তি।

এতে বলা হয়, হামলাকারীরা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, সম্পদ ও শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত মালামাল লুট করেছে। এ ছাড়া কলেজ ভবনের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে তারা অধ্যক্ষের কার্যালয়সহ বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর করে। কলেজ কর্তৃপক্ষ বারবার প্রশাসনের স্থানীয় ও সর্বোচ্চ পর্যায়ে সহযোগিতার আবেদন করলেও এ পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমরা ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে আহ্বান জানাই : ১. হামলার প্রকৃত দোষীদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান। ২. শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে কলেজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার। ৩. লুটকৃত সম্পদ উদ্ধার ও ক্ষতিগ্রস্ত নথি পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

এতে আরও বলা হয়, আমরা সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের উদ্দেশে বলছি, এই ন্যক্কারজনক ঘটনার পরও আমাদের সবাইকে ধৈর্য ও সংহতি বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

কলেজটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ সামীর  বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলাকালীন সময় এসে আঘাত করা হয়েছে। নিহতের প্রকৃত সংখ্যা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে সময় লাগবে। আপাতত ৩ জন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। আমাদের কলেজ ড্রেস পরা ছিল। তাদের পরিচয় পাইনি। অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে এটা দেখতে হবে। নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। কারণ আমাদের শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।’

মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ নয়ন গণমাধ্যমকে জানান, মারা যাওয়ার খবরটি আমি নিশ্চিত নই। তবে প্রচুর ছেলে কলেজে এসে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ সময় বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রের সঙ্গে পিস্তল দিয়ে গুলি চালায়। এতে অনেকেই হতাহত হয়।

প্রসঙ্গত, গতকাল রোববার ভুল চিকিৎসায় অভিজিৎ হাওলাদার নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগের জের ধরে পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালান মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। আগের দিনের হামলার জের ধরে আজ মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালানো হয়।