এস এম সাইফুল ইসলাম কবির: বাগেরহাটের হযরত খান জাহান (র.) এর মাজারের দিঘিতে থাকা পুরুষ কুমিরটি (স্থানীয় খাদেমরা মাদ্রাজি বলে ডাকে) মারা গেছে। বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) বিকালে মাজারের দিঘির দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় কুমিরটির মরদেহ ভাসতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, উপজেলা প্রশাসন, মাজার কর্তৃপক্ষ ও খাদেমসহ দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন দিঘীর ঘাটে। সন্ধ্যায় দিঘির উত্তর পাড়ে কুমিরটিকে তোলা হয়।
কুমিরটির মৃত্যুর কারণ জানতে ময়না তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন খুলনা বিভাগীয় প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ লুৎফর রহমান।
তিনি জানান, কুমিরটি প্রায় তিন বছর আগে দুইবার অসুস্থ হয়েছিলো। তখন দিঘী থেকে উঠিয়ে কুমিরটিকে ১৫ দিন চিকিৎসা দেয়া হয়। তখন কুমিরটির নিউরোলজিকাল ও নার্ভে কিছু সমস্যা ধরা পরে। সে সময় চিৎকিসায় কুমিরটি প্রায় সুস্থ্য হয়ে গিয়েছিলো। আমরা প্রাথমিক ভাবে ধারণা করছি ওই অসুস্থতার কারণেই কমিটির মৃত্যু হয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত করা হলে কুমিরটির মৃত্যুর প্রকৃত কারন জানা যাবে।
অন্যদিকে, কুমিরটিকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবী করছেন মাজারের খাদেমরা। তারা বলছেন, কোন অসৎ উদ্দেশ্যে কুমিরটিকে হত্যা করা হতে পারে। মাজারের প্রধান খাদেম শের আলী ফকির বলেন, ‘কুমির আটকে রেখে মানুষের কাছ থেকে পয়সা নেয়া হতো। প্রায় ৭-৮ মাস ধরে মোস্তাফা ফকিরের পুকুরে আটকানো ছিল কুমিরটি। বেশি দিন কুমির এক জায়গায় থাকতে পারে না। আমরা এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগও করেছি। এই কুমির মেরে ফেলা হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।’
কুমিরটির মৃত্যুর বিষয়ে জানার জন্য মোস্তফা ফকিরের বাড়িতে গেলে তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। এ সময় তার স্ত্রী শাকিলা বেগম বলেন, ‘দুপুরে দিঘিতে আমার ননদ কুমিরটির মরদেহ ভাসছে দেখে আমাকে জানান। কীভাবে কুমিরটি মারা গেছে সেই বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। কুমিরটি এতদিন আমার স্বামীর দায়িত্বে ছিল। তিনি কয়েকদিন আগে কুষ্টিয়ায় গেছেন।’
বাগেরহাট মডেল থানার ওসি কেএম আজিজুল ইসলাম বলেন, এখানে মাদ্রাজ থেকে আনা দুটি কুমির ছিল। একটি বড় আরেকটি একটি ছোট। বড় কুমিরটি মারা গেছে। এখানে খাদেমদের অভিযোগ আছে। কুমিরের ময়নাতদন্ত করা হবে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, খ্রিষ্টীয় ১৪ শতকের প্রথম দিকে নিজের শাসনামলে হযরত খানজাহান মিঠা পানি সংরক্ষণের জন্য “খাঞ্জেলি” দিঘিতে কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড় নামে দুটি কুমির ছাড়েন। সেই থেকে কুমির এই মাজারের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। এখানকার কুমির দেখতে দেশ-বিদেশের হাজারো দর্শণার্থী আসেন বাগেরহাটে। ২০১৫ সালে ৫ ফেব্রুয়ারী মাসে ঐতিহ্যবাহী হয়রত খান জাহান (র.) এর মাজারের দিঘির শতবর্ষী কুমিরের শেষ বংশধর ধলাপাহাড় মারা যায়। এরপর ভারতের মাদ্রাজ ক্রোকোডাইল ব্যাংক থেকে দুটি কুমির এনে ছাড়া হয় মাজারে।