ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বা বিসিসিআই-এর নতুন প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন সেই দেশের জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও ক্রিকেট লেজেন্ড সৌরভ গাঙ্গুলি।
গত মধ্যরাতের পর মুম্বাইতে বোর্ডের বৈঠকে টানটান উত্তেজনা ও নাটকীয়তার মধ্যে তার নাম এই পদের জন্য চূড়ান্ত হয় – এবং আজ সোমবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে সৌরভই একমাত্র প্রার্থী হিসেবে ওই পদের জন্য ফর্ম জমা দিয়েছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে তীব্র জল্পনা শুরু হয়েছে, ক্ষমতাসীন বিজেপির হয়ে ভবিষ্যতে নির্বাচনী প্রচার করবেন এই প্রতিশ্রুতি দিয়েই কি সৌরভ বোর্ড প্রেসিডেন্টের পদ পেলেন?
এদিন সৌরভ নিজে অবশ্য এই ধরনের জল্পনা সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছেন, কিন্তু তার পরেও এই ইস্যুতে চর্চা থামছে না।
রোববার রাতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নতুন নেতৃত্ব চূড়ান্ত করার জন্য মুম্বাইতে যে বৈঠক বসেছিল, ঠিক তার চব্বিশ ঘন্টা আগেই দিল্লিতে ভারতের অত্যন্ত প্রভাবশালী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ-র সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি।
এদিন বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদে তার নাম চূড়ান্ত হওয়ার পর সৌরভ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে কোর্ট নিযুক্ত প্রশাসকদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভারতীয় বোর্ডে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনাই হবে তার অগ্রাধিকার।
তিনি বলেন, গত তিন বছর ধরে বোর্ডে যা ঘটেছে সেটা ছিল কার্যত একটা জরুরি অবস্থার মতো।
‘ফলে এখন বোর্ডের জন্য একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সময় – আর সেখানে আমার টিমকে নিয়ে আমি চেষ্টা করব একটা পরিবর্তন আনতে, যাতে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সবকিছু ঠিকঠাক করে ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনের পুরনো চেহারা ফিরিয়ে দিতে পারি’, বলেন গাঙ্গুলি।
বোর্ডে সৌরভ গাঙ্গুলির টিমে অন্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের মধ্যে আছেন সচিব জেয় শাহ, যিনি বিজেপি নেতা অমিত শাহর ছেলে।
কোষাধ্যক্ষ পদ পেয়েছেন অরুণ ধুমল, যার বড়ভাই অনুরাগ ঠাকুর বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বাবাও ছিলেন হিমাচলে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী।
বস্তুত নতুন বিসিসিআই নেতৃত্বে শাসক দল বিজেপির প্রাধান্য এতটাই স্পষ্ট, যে সৌরভ গাঙ্গুলিকেও কার্যত তার দায় নিতে হচ্ছে।
ভারতের ক্রিকেট সাংবাদিক বিক্রান্ত সিং বলছিলেন, এই টিম তৈরিতে সরকারের, বিশেষ করে অমিত শাহ বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে একটা বড় ভূমিকা ছিল সেই সিগনেচার কিন্তু স্পষ্ট।
‘আর এই কারণেই প্রশ্নটা উঠছে যে প্রেসিডেন্ট পদের বিনিময়ে বিজেপির সঙ্গে সৌরভ গাঙ্গুলির কোনও রফা হয়েছে কি না।
মনে রাখতে হবে, অমিত শাহর ছেলে জেয় শাহ কিন্তু নিজেই বোর্ডের নতুন সচিব হয়েছেন।’
সৌরভ নিজে অবশ্য দাবি করেছেন, রফা তো দূরের কথা তিনি বোর্ড প্রেসিডেন্টের পদ নিজে থেকে চানওনি, কারও সঙ্গে এ নিয়ে কোনও কথাও বলেননি।
‘মূলত গত রাত সাড়ে দশটা অবধি আমি জানতামই না যে জে শাহ-অরুণ ধুমলদের টিম নিয়ে আমাকেই বোর্ড প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করতে হবে’, বলেছেন তিনি।
এরপরও ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে, বিশেষ করে বাংলা খবরের কাগজগুলোতে লেখা হচ্ছে যে পশ্চিমবঙ্গে ২০২১-র নির্বাচনে বিজেপির হয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হবেন কিংবা তাদের হয়ে প্রচার করবেন – সৌরভের কাছ থেকে এই প্রতিশ্রুতিই চেয়েছিল বিজেপি।
সেটা সত্যি হোক বা মিথ্যে, বোর্ড প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তাকে টুইটারে প্রথম যারা অভিনন্দন জানিয়েছেন তাদের মধ্যেই ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা ব্যানার্জি।
সেই টুইট দেখার পর সৌরভ অবশ্য তাকেও পাল্টা ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং তিনি নিজে যে মুখ্যমন্ত্রী ‘মমতাদিদি’র ঘনিষ্ঠ সেটাও জানাতে ভোলেননি।
পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন, পরবর্তী বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে নাম চূড়ান্ত হয়ে গেলেও সৌরভ গাঙ্গুলি কিন্তু এখনই খোলসা করতে চাইছেন না যে ভবিষ্যতে তার রাজনীতির গতিপথ কী হতে পারে।
সৌজন্য: বিবিসি বাংলা