কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্রসৈকতে ভেসে এলো মৃত পরপইস

জাফর আলম, কক্সবাজার; হেলাল উদ্দিন, টেকনাফ :

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে জোয়ারের সঙ্গে আবারও মরা পরপইস ভেসে এসেছে। পরপইসটির শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষত-বিক্ষত দাগের চিহ্ন রয়েছে।

রবিবার (১৩ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া সৈকতে সামুদ্রিক এই স্তন্যপায়ী প্রাণীর মৃতদেহ ভেসে আসে। এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হিমছড়ি এলাকায় দুটি মৃত পরপইস ভেসে এসেছিল।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম এবং বন বিভাগের শীলখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা শাফিউল ইসলাম প্রিয়দেশ নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তরিকুল ইসলাম বলেন, এটি ইন্দোপ্যাসিফিক ফিনলেস পরপইস হিসেবে পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম নিওফোকেনা ফোকেনয়েডস। দেখতে ইরাবতী ডলফিনের মতো পরপইস ছোট জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী। কিন্তু এদের পৃষ্ঠীয় পাখনা থাকে না। বাচ্চা অবস্থায় কালো রঙের হলেও বয়সের সঙ্গে রঙ বিবর্ণ হয়ে যায়। এটি ৫-৬ ফিট পর্যন্ত লম্বা হয়। এদের শরীর মজবুত এবং মাথা অনেকটা গোলাকার। এই প্রাণীটি অগভীর জল, জলাভূমি এবং মোহনা পছন্দ করে। এরা সাধারণত একাকী চলাফেলা করতে পছন্দ করে। মাঝেমধ্যে খাদ্য গ্রহণের সময় এদের ৫ থেকে ১২টি বা ৫০টির অধিক দলবদ্ধ অবস্থায় ঘুরতে দেখা যায়। মাছ, স্কুইড, চিংড়ি, অক্টোপাস এবং মাঝে মাঝে সামুদ্রিক উদ্ভিদও খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। সাধারণত বসন্তে বা গ্রীষ্মে প্রাণীটি বাচ্চা প্রসব করে। বাচ্চারা জন্মের পর মায়ের পিঠে লেগে থাকতে দেখা যায়।

তিনি জানান, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকায় পরপইস বিপন্ন প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত। ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির সর্বশেষ জরিপে বঙ্গোপসাগরে মোট ১৩ জাতের সিটাসিয়ান বা সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৮ প্রজাতির ডলফিন, ৪ প্রজাতির তিমি ও মাত্র এক প্রজাতির পরপইস রয়েছে।বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের কক্সবাজার সামুদ্রিক কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান বলেন, পরপইসটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মাছ ধরার জালে আটকা পড়ে, নৌকার সঙ্গে সংঘর্ষ কিংবা অন্য কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এটি মারা পড়েছে। শব্দ ও জলদূষণ এবং বাঁধ, পোতাশ্রয়সহ অন্যান্য নির্মাণ কাঠামোর কারণেও এদের জীবন হুমকিতে পড়েছে।

রেঞ্জ কর্মকর্তা শাফিউল ইসলাম বলেন, স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে বিষয়টি জেনেছেন। পরে বনবিভাগ লোকজন ডলফিনটি উদ্ধার করে মাটিচাপা দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে।

স্থানীয় লোকজনের বরাত দিয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা শাফিউল ইসলাম জানান, আজ দুপুরে জোয়ারের পানিতে ডলফিনটি ভেসে এসেছে।৭ফুট লম্বা ডলফিনটির শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষত রয়েছে। একদিন আগে ডলফিনটির মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্থানীয় জেলে আব্দুল হামিদ বলেন, কোনো কিছুর সঙ্গে আঘাত পেয়ে ডলফিনটি হয়তো মারা গেছে। অনেক সময় সমুদ্রে জেলেরা ছেঁড়া জাল ফেলে দেন। ছেঁড়া জালের সঙ্গেও আটকে এসব সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু হতে পারে। ছেঁড়া জাল, প্লাস্টিক সমুদ্রে ফেলা বন্ধে জেলেদের সচেতন করা দরকার। সমুদ্রের সম্পদ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। আর তা না করতে পারলে সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে থাকবে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কক্সবাজারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্র প্রধান ড. শফিকুর রহমান বলেন, আজ রোববার দুপুরে ভেসে আসা পোর্পোইসটি দেখতে ইরাবতী ডলফিনের মতো।জলজ স্তন্যপায়ী এ প্রাণী ইন্দোপ্যাসিফিক ফিনলেস পোর্পোইস হিসেবে পরিচিত।এর বৈজ্ঞানিক নাম নিওফোকেনা ফোকেনয়েডস। ফিনলেস পোর্পোইস একটি ছোট জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং দেখতে অনেকটা ইরাবতী ডলফিনের মত কিন্তু এদের পৃষ্ঠীয় পাখনা থাকে না। বাচ্চা অবস্থায় কালো রঙের হলেও বয়সের সাথে রঙ বিবর্ণ হয়ে যায়। এরা ৫-৬ফিট লম্বা হয়। এদের মজবুত শরীর টেপা ফ্লুকের মত এবং মাথা অনেকটা গোলাকার। এই প্রানীটি অগভীর জল, জলাভূমি এবং মোহনা পছন্দ করে। এদেরকে সাধারণত এশিয়ার ইয়াংজি নদীতে, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগরে পাওয়া যায়। প্রায়শই এদেরকে বাংলাদেশ, ভারত, চায়না, ইন্দোনেশিয়া, জাপান এবং কোরিয়ায় দেখা যায়।

ড. শফিকুর রহমান আরও বলেন, এরা সাধারণত একাকী চলাফেলা করতে পছন্দ করে কিন্তু মাঝেমধ্যে খাদ্য গ্রহণের সময় এদেরকে দলবব্ধ অবস্থায় দেখা যায় যা ৫-১২টি বা ৫০টির অধিক একত্রে দেখা যায়। এরা মাছ, স্কুইড, চিংড়ি, অক্টোপাস এবং মাঝে মাঝে সামুদ্রিক উদ্ভিদও খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। এরা সাধারণত বসন্তে বা গ্রীষ্মে বাচ্চা প্রসাব করে এবং বাচ্চারা জন্মের পর মায়ের পিঠে লেগে থাকতে দেখা যায়। এই উপকূলীয় প্রাণীর জন্য প্রধান হুমকি মাছ ধরার জালে আটকে পড়া, নৌকার সাথে সংঘর্ষ হওয়া, শব্দ ও জলদূষণ, বাধ, পোতাশ্রয় এবং অন্যান্য নির্মাণ কাঠামো।