আ.লীগ হিন্দুদেরকে সংখ্যালঘু উপাধি দিয়েছে, জামায়াত বলছে জন্মসূত্রে নাগরিক: হিন্দু নেতৃবৃন্দ

হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ‌‘আওয়ামী লীগ হিন্দুদেরকে সংখ্যালঘু উপাধি দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, কেউ সংখ্যালঘু নয় সবাই জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক। সকলের মর্যাদা ও অধিকার সমান। যে দল আমাদেরকে নাগরিক হিসেবে সম্মান দেখিয়েছে। আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে আমরা সেই দলের পক্ষ থাকবো। কেউ কেউ অতীতে প্রচার করেছে আমরা নির্দিষ্ট একটি দলের। কিন্তু না, যারা আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে আমরা তাদের দলের নয়।’

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হিন্দু ধর্মালম্বীদের সাথে জামায়াতে ইসলামীর মতবিনিময়কালে তারা এসব কথা বলেন।

হিন্দু নেতৃবৃন্দ বলেন, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনকালের চেয়ে গত দুই মাসে হিন্দু সম্প্রদায় বেশি ভালো ও নিরাপদে রয়েছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাউফলসহ সারাদেশেই হিন্দুদের উপর হামলা ও লুটপাটের চক্রান্ত করা হয়েছে। সেই চক্রান্তের সাথে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা ছিল। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী সবার আগে হিন্দুদের নিরাপত্তায় তাদের বাড়ি-ঘর, মন্দির পাহারা দিয়েছে। পরবর্তী অন্যান্য দলও তাদের মনোভাব পরিবর্তন করে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। কোনো অপপ্রচারে হিন্দু সমাজ আর বিভ্রান্ত হবে না।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি, বাউফল উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, মহাগ্রন্থ আল কুরআন কেবলমাত্র মুসলমানদের জন্য নয়, পুরো মানব জাতির জন্য রচিত হয়েছে। যেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি, প্রতিবেশীর কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেশী মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান সহ যেকোনো জাতি-গোষ্ঠী প্রতিবেশী রয়েছে তাদের হক নষ্ট না করার কঠোরভাবে নির্দেশনা রয়েছে কুরআনে। এই কুরআনই কেবল শান্তির কথা বলে, শান্তি বজায় রাখে। সমাজে কুরআনের বিধান কায়েম হলে ধর্মের বৈষম্য থাকবে না।

বাউফল পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বাবু অধির চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পটুয়াখালী জেলা আমীর অধ্যাপক শাহ আলম, বাউফল উপজেলা আমীর মাওলানা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, বাউফল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল। হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জিতেন্দ্র নাথ, অতুল চন্দ্র পাল সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

ড. মাসুদ বলেন, যারা মসজিদে যেতে বাঁধা দিয়েছে, মসজিদে তালা মেরেছে, মসজিদে ভিতরে মানুষকে রক্তাক্ত করেছে, তারাই মন্দির ভেঙ্গেছে, মন্দির লুটপাট করেছে, হিন্দুদের দোকান দখল দিয়েছে, হিন্দুদের উপর অত্যাচার চালিয়ে নিজের তৈরি দালাল মিডিয়ার মাধ্যমে সেই দায় চাপিয়ে দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী সহ ইসলাম পন্থীদের উপর। অথচ জামায়াতে ইসলামী বারবার প্রমান দিয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর হাতে দেশের, সমাজের সকল মানুষ নিরাপদ এবং সকল মানুষ নাগরিকের মর্যাদার অধিকারী। কেউ সংখ্যালঘু নয়। মুসলমানরা যদি তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করতে ভিন্ন ধর্মের সাথে মতবিনিময় করে সহযোগিতা চাইতে না হয়, তাহলে হিন্দু ধর্মের মানুষ কেন তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করতে মুসলমানদের সাথে মতবিনিময় করে সহযোগিতা ও নিরাপত্তা চাইতে হবে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, তারমানে কিছু ঘাপলা আছে! জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা দায়িত্ব পেলে এসব ঘাপলা বুড়িগঙ্গায় ছুঁড়ে ফেলা হবে। সমাজে হিন্দু-মুসলিম সহ সকল ধর্মের লোকজন পরস্পর ভাই-ভাই, ভাই-বোন হিসেবে শান্তিতে বসবাস করবে।