দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পরপরই নড়েচড়ে বসেছে সব পক্ষ। সেই ধারাবাহিকতায় এখন নির্বাচনী সংলাপ নিয়ে কথা হচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা আমির হোসেন আমুর একটি বক্তব্য থেকেই সংলাপের বিষয়ে কথা শুরু হয়েছে। তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সাথে আলোচনায় বসা যেতে পারে। সেখানে দেখা যাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে বাধাগুলো কোথায়। অন্য কোনো অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা প্রতিহত করা হবে বলেও জানান আমু।
এরপর থেকেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলে যাচ্ছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, এমন কোনো আলোচনা দলীয় ফোরামে হয়নি। এটা নিতান্তই আমির হোসেন আমুর ব্যক্তিগত মন্তব্য। পরে অবশ্য আমির হোসেন আমুও নিজের বক্তব্য পাল্টেছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আপাতত বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপের কথা ভাবছে না সরকার। আমরা এই মুহূর্তে কোনো সংলাপের কথা ভাবছি না। শেষবারের কথা মনে আছে? বিএনপির সঙ্গে সংলাপের ফল কী ছিল!
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু’র বক্তব্যটি তার ব্যক্তিগত মন্তব্য। এ বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় ফোরামে কোনো আলোচনা হয়নি, এমনকি ১৪ দলেও আলোচনা হয়নি।
হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি একটি রাজনেতিক দল, তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেই পারে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য তা নয়, তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচন ভণ্ডুল করে দেশে একটি বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করা। কিন্তু নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণই হলো মুখ্য বিষয়। জনগণ যদি ব্যাপকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তালেই সেটি জনগণের অংশগ্রহণমূলক একটি ভালো নির্বাচন।
অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী সাধারণ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুর সংলাপের বক্তব্যকে তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। বিএনপির সঙ্গে সংলাপে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের পরস্পরবিরোধী মন্তব্যও প্রকাশ করেছে যে সরকার এখন কেমন অস্থির হয়ে পড়েছে।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিলেও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় তাদের মধ্যে একদফা সংলাপ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের বক্তব্য, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নতুন ভিসানীতি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিদের সাথে দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেছেন। সেখানেই তিন দলের মধ্যে বৈঠক বা সংলাপ হয়ে গেছে। এখন জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সংলাপের চাপও আসলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেই দেওয়া হচ্ছে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাথে ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে দলটির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত, বিএনপি নেতাদের মধ্যে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, জাতীয় পার্টি নেতাদের মধ্যে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল অংশ নিয়েছেন।
তবে নির্বাচনী সংলাপ হলে সেটা সব পক্ষের জন্যই ভালো হবে বলে একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মতপ্রকাশ করেছেন। নাহলে কোনো অনির্বাচিত শক্তি ক্ষমতায় চলে আসতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত