পার্বত্য এলাকার সংঘাত সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা জানা গেল

চোর সন্দেহে এক বাঙালি যুবককে পিটিয়ে মেরে ফেলার পর সংঘাতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পার্বত্য এলাকা। খাগড়াছড়িতে এ ঘটনা ঘটলেও পাশ্ববর্তী জেলা রাঙামাটিতেও এর রেশ ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে দেওয়া বিবৃতিতে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি পরিদর্শনে যাবেন বলে জানা গেছে।

নিহত ৪
খাগড়াছড়িতে সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৯ জন। এদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। তাদের চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে।

নিহতরা হলেন- জুনান চাকমা (২০), ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) ও রুবেল (৩০)। জুনান চাকমা ও রুবেলের বাড়ি খাগড়াছড়ি সদরে এবং ধনঞ্জয় চাকমার বাড়ি দীঘিনালায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে (আনুমানিক সাড়ে ১০টা) জেলা শহরের নারানখাইয়া, স্বনির্ভর এলাকায় ব্যাপক গুলির শব্দ শোনা যায়। এসময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে রাতে ১২ জনকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়। চারজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে।

তবে কাদের মধ্যে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেনি।

অন্যদিকে খাগড়াছড়ির ঘটনায় রাঙামাটিতে ছড়িয়ে পড়া সংঘাতে একজন নিহত হয়েছেন। রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, সংঘাতে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬ থেকে ৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এছাড়া একজন মারা গেছেন। তবে তার নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

জানা যায়, শহরের জিমনেসিয়াম চত্বর থেকে কয়েক হাজার পাহাড়ির একটি মিছিলে ইটপাটকেল নিক্ষেপের অভিযোগ তুলে বাঙালিদের বেশ কিছু দোকানপাটে হামলা চালানো হয়। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালের দিকে এ ঘটনা ঘটে। রাস্তায় চলাচলকারী বাস, ট্রাক, ট্যাক্সিতেও হামলা করা হয়। শহরের হ্যাপির মোড়কে কেন্দ্র করে এর দুদিকে অবস্থান নেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন ও বাঙালিরা।

১৪৪ ধারা জারি
পার্বত্য এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় সংঘাত নিরসনের লক্ষ্যে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সহিদুজ্জামান এবং রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মো. মোশাররফ হোসেন খান এ বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে খাগড়াছড়িতে আজ শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

পরিদর্শনে যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
পার্বত্য এলাকার ঘটনায় আগামীকাল শনিবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি পরিদর্শন করবেন। এই প্রতিনিধি দলে থাকছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এবং প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী।

প্রধান উপদেষ্টার মিডিয়া উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করে জানানো হয়, খাগড়াছড়ি ও আজ রাঙামাটিতে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে আন্তরিকভাবে কাজ করছে সরকার। গত বুধবার এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি ও পরবর্তীতে তার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলমান হামলা, আক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনায় সরকার গভীরভাবে দুঃখিত এবং ব্যথিত। সরকারের পক্ষ থেকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সকল বাহিনীকে সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে এবং পার্বত্য তিন জেলায় বসবাসকারী সকল জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে শান্তি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি নিশ্চিতকরণে সরকার বদ্ধপরিকর।

শাহবাগ মোড় অবরোধ
খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যরা।

শুক্রবার বেলা পৌনে ১২টার পর এ অবরোধ শুরু হয়। এতে শাহবাগ এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এর আগে সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন তারা। দীঘিনালায় বাঙালি-পাহাড়ি সংঘর্ষের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও সামরিকায়ন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা।