স্বামীকে ভাই বলে সম্বোধন করা ইসলামের বিধান অনুযায়ী উচিত নয়। হাদিসে এ বিষয়ে পুরোপুরি নিষেধ রয়েছে। তেমনি স্ত্রীকে বোন বলেও ডাকার বিষয়ে ইসলামে সম্পূর্ণ নিষেধ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বৈবাহিক সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না।
স্বামীকে ভাই বলে সম্বোধন করা অনুচিত। তবে কেউ এমন বলে ফেললে এর কারণে বৈবাহিক সম্পর্কের কোনো ক্ষতি হবে না। (ফাতহুল কাদির ৪/৯১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫০৭; রদ্দুল মুহতার ৩/৪৭০)
এ বিষয়ে শায়েখ আহমাদুল্লাহ বলেন, স্বামীকে ভাই বা স্ত্রীকে বোন ডাকার বিষয়ে একটি হাদিসে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেই হাদিসের আলোকে বলা যায়, সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে না বা তালাক হয়ে যাবে না। তবে এটি ইসলামের বিধান অনুযায়ী না ডাকাই ভালো।
একই প্রশ্ন উত্তরে ড. আবুবকর মুহাম্মদ যাকারিয়া বলেন, স্বামীকে ভাই বললে সম্পর্ক হারাম হয়ে যাবে না, তবে এটা মাকরূহ। যদি আমরা দেখি যে কেউ স্বামীকে ভাই বলে ডেকেছে তাহলে আমাদের উচিত তাকে সচেতন করা।
স্বামীর নাম ধরে ডাকার বিষয়টি নির্ভর করে দেশীয় সংস্কৃতি ও রেওয়াজের ওপর। বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলে সাধারণত স্বামীর নাম ধরে ডাকাকে অসম্মানজনক ও বেয়াদবি মনে করা হয়, যদিও আরবদেশে স্বামীর নাম ধরে ডাকার প্রচলন ছিল। এ ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা হলো, রেওয়াজ থাকলে এবং প্রয়োজন হলে যেকোনো সময় স্বামীর নাম উচ্চারণ করা যাবে।
স্বামী-স্ত্রী একে অন্যকে সম্মানসূচক নাম ব্যবহার করে ডাকবে। বিশেষ করে স্ত্রী তার স্বামীকে সম্মান প্রদর্শন করব- এটাই স্বাভাবিক। তাই এ সম্পর্কে ফাতাওয়া শামিতে বর্ণিত আছে, ছেলে কর্তৃক তার বাবাকে এবং স্ত্রী কর্তৃক তার স্বামীকে নাম ধরে ডাকা মাকরূহ বা অপছন্দনীয়। ইবনে আবেদিন শামি (রহ.) ওই বক্তব্যের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘বরং এমন শব্দের মাধ্যমে ডাকা উচিত- যেটা সম্মান বোঝাবে। যেমন- হে আমার সর্দার, অমুকের বাবা ইত্যাদি অথবা সম্মানসূচক পেশার সঙ্গে সংযুক্ত করে ডাকবে। যেমন- ইমাম সাহেব, ডাক্তার সাহেব ইত্যাদি)। কেননা বাবা ও স্বামী- তাদের উভয়ের হক একটু বেশি। (রাদ্দুল মুহতার আলাদ দুররিল মুখতার : ০৬/৪১৮)
অন্যদিকে স্ত্রীকে বোন বা আপু বলে ডাকা মাকরুহ। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘এক ব্যক্তি নিজ স্ত্রীকে বলল, হে আমার বোন ‘ রাসুল (সা.) তা শুনে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সে কি তোমার বোন?’ তিনি তা অপছন্দ করেন এবং তাকে এভাবে ডাকতে নিষেধ করেন।’’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২২০৪)
স্বামী স্ত্রীকে বোন বলে সম্বোধনের মাধ্যমে এমন ইচ্ছা করে যে, আমার বোন যেমন আমার জন্য হারাম, তুমিও তেমনি আমার জন্য হারাম; তাহলে তা ‘জিহার’-এর অন্তর্ভুক্ত হবে। এমতাবস্থায় স্ত্রী-স্বামীর মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক বহাল থাকবে না যতক্ষণ না স্বামী ‘কাফ্ফারা’ আদায় করে।
আর জিহারের কাফ্ফারা হলো ধারাবাহিকভাবে দুই মাস রোজা রাখা বা ৬০ জন অসহায় ব্যক্তিকে খাওয়ানো। (সুরা মুজাদালাহ, আয়াত : ৩)
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যারা নিজেদের স্ত্রীদের ‘জিহার’ করে তারা যেন জেনে রাখে যে, তারা তাদের মা নয়, তাদের মা তো তারাই যারা তাদেরকে প্রসব করেছে, তারা তো কেবল অশালীন ও মিথ্যা কথা বলে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মার্জনাকারী।’’ (সুরা মুজাদালাহ, আয়াত : ২)
তাই এ ধরনের অহেতুক ঝামেলা এড়াতে স্ত্রীকে বোন সম্বোধন করা থেকে বিরত থাকাই নিরাপদ।