উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুসারীদের অটোরিকশা চোর চক্র

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিবেদক: পটুয়াখালীতে চারটি অটোরিকশাসহ আন্তঃজেলা অটোরিকশা চোর চক্রের ৭ সদস্যকে প্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার রাতে বাউফল উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

পুলিশ সুপার জানান, গত ২২ জুন পটুয়াখালী পৌর শহরের কলাতলা এলাকায় বাইতুল ইমাম জামে মসজিদের সামনে থেকে নুরুজ্জামান খাঁ নামের এক ব্যাক্তির অটোরিকশা চুরি হয়। অটো রিকশা মালিক পটুয়াখালী সদর থানায় অভিযোগ দিলে অভিযানে নামে পুলিশ। রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে পটুয়াখালী সদর এলাকা থেকে হুমায়ুন কবির নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বাউফল উপজেলার বগা ইউনিয়নের বগা গ্রাম থেকে মো. লিমন মীর, আলাল সিকদার, শামিম, বানাজোড়া গ্রাম থেকে হাসান সিকদার, সদর ইউনিয়নের গোসিংগা গ্রাম থেকে হারুন মৃধা ও ভবোরঞ্জন বৈরাগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় ভবোরঞ্জন বৈরাগীর গ্যারেজ থেকে একটি, হারুন মৃধার গ্যারেজ থেকে দুই ও পটুয়াখালীর সদরের লাউকাঠি থেকে একটিসহ মোট চারটি অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অটোরিকশা চুরি করে আসছিল। চক্রের প্রধান হোতা লিমন মীর বগা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি। তার সহযোগী আলাল সিকদার একই ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন। বাকিরা যুবলীগের কর্মী। তারা সবাই বগা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদারের অনুসারী।

বগা ইউনিয়নের কয়েকটি সূত্র জানায়, লিমন মীর ও আলাল সিকদার উপজেলা চেয়ারম্যানের ছত্রছায়ায় বগা লঞ্চঘাট এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তুলেছেন। লিমন মীর বগা লঞ্চঘাটে অটোরিকশা স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ করেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বগা লঞ্চ ও ফেরি ঘাটে আসা অটো চালকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলেন লিমন মীর। টাকা না দিয়ে চালকদের মারধর নির্যাতন করেন লিমন বাহিনী। আর আলাল সিকদার নিয়ন্ত্রণ করেন বগা লঞ্চঘাট। পটুয়াখালী থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী লঞ্চ বগা ঘাট থেকে যাত্রী তুলেন। প্রতিদিন ৩থেকে ৫টি ডাবল ডেকার লঞ্চ বগা ঘাটে নোঙর করেন। এসব লঞ্চে কেবিন বাণিজ্য, ঘাটে যাত্রীদের কাছ থেকে মালের টাকার নামে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকার্মের মূল হোতা আলাল।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদার বলেন, লিমন মীর ও আলাল সিকদার আমার অনুসারী। তা ঠিক। তবে তারা কোনো চুরি ছিনতাই চাঁদাবাজির সাথে জড়িত না। আমি যতটুক জেনেছি গোসিংগা এলাকায় একটি চোরাই অটো বিক্রি হয়েছে। বিক্রির টাকা লেনদেনের সময় লিমন, আলালসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিল। এজন্য পুলিশ তাদেরও গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে।

পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, সংঘবদ্ধ এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অটোরিকশা চুরি করে আসছিল। একটি অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এ চক্রের ৭জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা অটোরিকশা চুরি ও চোরাই রিকশা বিক্রির টাকা ভোগবাটোয়ারা করে নিয়েছিল। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে সোপার্দ করা হয়েছে।