বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিবেদক: পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদারের ‘মেসার্স হাওলাদার ব্রিকস’ নামে অবৈধ ইটভাটা গুড়িয়ে দিয়েছেন প্রশাসন। বৃহস্পতিবার দুপুরে দুমকি উপজেলার চরগরবদি এলাকায় অবস্থিত ওই ইটভাটায় অভিযান চালায় প্রশাসন। দুমকি উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনামিকা নজরুলের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে বুলডোজার দিয়ে ইটভাটার চিমনীর আংশিক ধ্বংস করে দেয়া হয়। বাকি স্থাপণা ১৫দিনের মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্র জানায়, অনুমোদনহীন ওই ইটভাটা বন্ধের জন্য বাউফল উপজেলার বগা ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের মো. জাকির হোসাইন নামে এক ব্যক্তি উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন। ১৮২২০/২০১৭ নম্বর ওই রিট পিটিশনের আদেশে ওই ইটভাটা অবৈধ ঘোষণা করে করে তা বন্ধের নির্দেশ দেন আদালত।
আদালতের নির্দেশে দুমকি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অনামিকা নজরুলের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ইটভাটা ভেঙে দেয়া হয়। এর আগেও দুই দফায় ওই ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ভাটার আংশিক ধ্বংস ও কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছিল। তবে রহস্যজনক ভাবে কয়েকদিন পরই ফের চালু হত।
স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার প্রায় আট বছর আগে দুমকি উপজেলার চরগরবদি এলাকায় পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে ‘মেসার্স হাওলাদার ব্রিকস’ নামে ইটভাটা স্থাপন করেন। তার ছেলে ও বগা ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান ওই ভাটা পরিচালনা করছিলেন। প্রশাসন একাধিকবার ওই ভাটা বন্ধ করে দিলেও ক্ষমতার প্রভাব ঘাটিয়ে ফের ভাটা চালু করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই ইটভাটা পরিচালনা করে আসছিলেন তারা।
এছাড়াও বিধি বহির্ভূতভাবে দুমকি এলাকায় অবস্থিত ইটভাটায় বাউফল এরিয়া অফিস থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে প্রায় সাড়ে ৪লাখ টাকা বিল পরিশোধ না করেই অবৈধ ইটভাটার ব্যবসা করছেন। বকেয়া পরিশোধে বার বার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও পরিশোধ না করায় গত বছর ৫মে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। বকেয়া পরিশোধে লাল নোটিশ দিয়েছেন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। সম্প্রতি বকেয়া ৪লাখ ৫৬ হাজার ৪২৪ টাকা বলি পরিশোধের জন্য পটুয়াখালী বিদ্যুৎ সমিতির বাউফল আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের পক্ষে পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড আদালতের অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন এ নোটিশ দেন। এ নোটিশের পরেও বকেয়া পরিশোধ না করা হলে আর্থিক ক্ষতিসহ আদালতে মামলা করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে উপজেলা চেয়াম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার জানান, ইটভাটাটি তার স্ত্রীর নামে ছিল। পরিচালনা করেন তার ছেলে। পরিবেশ মন্ত্রণালয় অনুমোদন না দেয়ায় নতুন নামে আবেদন করা হয়। গতকাল শুনানি ছিল। এখনো আদেশ দেয়নি। তারপরেও তড়িঘড়ি করে কোনো অভিযান চালানো হলো তা জানি না।
বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ঠিক বলতে পারবো না। আমি তো সব বিষয়ে খোঁজ রাখি না। ছেলে বলতে পারবে। তবে তার ছেলে মাহমুদ হাসানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
দুমকি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক অনামিকা নজরুল বলেন, আমরা আদালতের আদেশের চিঠি পেয়ে ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ভাটা ভেঙে দিয়েছি।