সিলেটে জলাবদ্ধতার পানিনিষ্কাশনে সড়কের পাশে নালা কাটা নিয়ে দুই গ্রামবাসীর আড়াই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যও রয়েছেন। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ বেশ কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ছুড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে নয়জনকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে আহতদের নাম জানা সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, বুধবার বেলা দুইটার দিকে কুমারগাঁও-বাধাঘাট সড়কের পাশে নালা কাটা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সোনাতলা ও মইয়ারচর এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এর আগে জলাবদ্ধতার প্রতিবাদে বেলা ১১টার দিকে কুমারগাঁও-বাধাঘাট সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় লোকজন। এ সময় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করা হয়। বেলা দুইটার দিকে সড়ক মেরামতে নিয়োজিত কর্মীরা পানিনিষ্কাশনের জন্য সড়কের পাশে নালা কাটতে গেলে দুই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষে জড়ান তারা।
মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, দুই এলাকাবাসীর সংঘর্ষ থেমেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা আছে। সংঘর্ষ জড়িত ব্যক্তিদের ছত্রভঙ্গ করতে একাধিক কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে। তবে পরিমাণ কত হিসাব করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি সদস্যদের খবর দেওয়া হলেও তাদের সংঘর্ষ থামাতে মাঠে নামতে হয়নি। তারা আসার আগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের অধীন কুমারগাঁও-বাধাঘাট সড়কটি চার লেনের কাজ চলছে। এর কারণে সড়কের পাশে মাটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে। সড়কের পাশে অপরিকল্পিতভাবে মাটি না ফেলে পাকা নালা নির্মাণের দাবি ছিল স্থানীয় লোকজনের। এ ছাড়া মাটিগুলো সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে নেওয়ার দাবিও ছিলো তাদের। কিন্তু সেগুলো সরানো হয়নি। বুধবার ভোর থেকে সিলেটে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। এতে সড়ক জলমগ্ন হয়ে পড়লেও পানিনিষ্কাশনের পথ না থাকায় নিচু এলাকা মইয়ারচর, নয়া কুরুমখলা, নাজিরেরগাঁও এলাকায় পানি জমে বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ে।
এর প্রতিবাদে সিলেট সিটির নবগঠিত ৩৮ ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের মইয়ারচর, নয়া কুরুমখলা, নাজিরেরগাঁও এলাকার বাসিন্দারা কুমারগাঁও-বাধাঘাট সড়ক অবরোধ করেন। খবর পেয়ে বেলা দুইটার দিকে ঘটনাস্থলে যান সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ নেতা-কর্মীরা। তিনি বিক্ষুব্ধ লোকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। আর সন্ধ্যার দিকে মইয়াচর ও সোনাতলা এলাকায় গিয়ে এলাকাবাসীদের বুঝিয়ে সংঘর্ষ থামানোর উদ্যোগ নেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।
অন্যদিকে সোনাতলা এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে চলাচলে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। সোনাতলা বাজারেও সড়কের পাশের মাটি কেটে রাখায় বাজারে আসা লোকজন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বুধবার পানিনিষ্কাশনে সওজের কর্মীরা সড়কের পাশে নালা কাটতে গেলে সোনাতলা এলাকার বাসিন্দারা বাধা দেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তারা। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। সংঘর্ষ থামাতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ওই সড়কের কিছু এলাকা নিচু। সেখানে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। সড়কের নালার সঙ্গে ওই নিচু এলাকার পানিনিষ্কাশনের কাজ করা হলে সমাধান হয়ে যাবে এমনটিও মনে করছেন না তিনি। এরপরও এলাকাবাসীর দাবি অনুযায়ী, সোনাতলা বাজার এলাকায় পানিনিষ্কাশনের কাজ করতে গেলে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এতে সওজের কোনো যোগসূত্র নেই। সওজ পরে উভয় পক্ষের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেবে।