সাদের হোসেন বুলু: ঢাকার দোহার উপজেলার মৈনটঘাটসহ আশে পাশের এলাকাগুলো পদ্মা নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। গত কয়েক দিনে পদ্মার ভাঙ্গনে মিনি ক্সবাজারখ্যাত মৈনটঘাটের প্রায় ১শ দোকান, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। যেকোন সময় ঢাকা গুলিস্থানগামী দ্রুত ও যমুনা পরিবহনের বাস কাউন্টারটি পদ্মায় বিলীন হয়ে যাবে বলেও মনে করছেন স্থানীয়রা। অস্তিত্বের মুখে মিনি কক্সবাজার নামক বিনোদন কেন্দ্র।
হঠাৎ পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারণে এ ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। নদীর তীরবর্তী অসংখ্য নিচু জমি পদ্মার পানিতে তলিয়ে গেছে। এর ফলে স্থানীয় জনসাধারণ ও মাহমুদপুর ইউনিয়নের লোকজনের মধ্যে ভাঙ্গন আতংক বিরাজ করছে। বাহ্রাঘাট থেকে মৈনট মিনি কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার ব্যাপী এ ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙ্গন শুরু হয়। এবছরও চলমান মৌসুমে ভাঙ্গনের প্রার্দুভাব শুরু হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি পদ্মার ভাঙ্গণ রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা পদ্মার গর্ভে বিলিীন হয়ে যাবে। এতে করে অসংখ্য লোক গৃহহীন হয়ে পড়বে। বৃদ্ধি পাবে দারিদ্রতা ও ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা। পাশে অবস্থিত মাহমুদপুর আবাসন কেন্দ্র, শেখ রাসেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ও ঝুঁকির মুখে। এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো হুমকির মুখে পড়েছে এবং আতংকে দিন কাটছে এলাকার সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মিনি কক্সবাজার এলাকার মৈনটঘাটে অবস্থিত লঞ্চ টার্মিনাল ও প্রায় ১শ’ ভ্রাম্যমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দোকান পাট গত কয়েক দিনে পদ্মার নদীর গর্ভে চলে গেছে। এছাড়া পুরুলিয়া, দেওভোগ. ইারায়নপুর, চরকুসুমহাটীসহ মাহমুদপুর ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী কৃষিজমি ,ঘরবাড়ি ও ধর্মীর প্রতিষ্ঠান নদীতে ভাঙ্গতে শুরু করেছে। মৈনটঘাট এলাকার ৫০বছর বয়স্ক এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী চোখের পানি ঝড়াতে ঝড়াতে বলেন, মৈনটঘটে দোকান করে কোন মতে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাবন করতাম। এ বছর পদ্মার ভাঙ্গনে হয়ত আর ব্যবসা করতে পারবো না। যে কোন মহূর্তে আমার দোকান নদী গর্ভে চলে যাবে।
এছাড়া মৈনটঘাটে ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত দিন দিনে দোকান ঘরটি ৩ বার সরিয়েছি। জানি না আবার কী হবে। এভাবে ভাঙ্গতে থাকলে আর ব্যবসা করতে পারবো না। গত বুধবার সন্ধ্যায় নদীর পাড়ের ভাসমান রেস্টুরেণ্ট জল জোসনা সকল স্থাপনাসহ স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এতে তাদের প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে আব্দুল জলিল জানান।
স্থানীয় বৃদ্ধ শফিউদ্দিন বলেন, তাদের কোন জমি বা জায়গা নাই, অল্প একটু বাড়ী ভিটে ছিল নদী গর্ভে চলে গেছে। বর্তমান বাড়ীটি চলে গেলে আমাদের আর কিছুই থাকবে না। এ কথা বলতে বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
ভাঙ্গন এলাকা ইতিমধ্যে পরিদর্শন করেন দোহার উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন, নির্বাহী কর্মকর্তা মোবাশ্বের আলম ও পৌর মেয়র আলমাছ উদ্দিন। এসময় দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোবাশ্বের আলম বলেন, পদ্মার ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ণ বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে জরুরী ভিত্তিতে সেনাবাহিনী কাজ করছে। ইতিমধ্যে দুইশত আশি কেজি ওজনের জিও ব্যাগ ভাঙ্গণরোধে ফেলা হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন সার্বক্ষণিক নজর রাখছে। যেকোন জরুরী অবস্থায় প্রশাসন জনসাধারনের পাশে আছে বলেও জানান তিনি।