কুমিল্লার গোমতী নদীর তীরে ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত হয় শাহ সুজা মসজিদ। ৩৬৪ বছরের ঐতিহ্যে লালিত তিন গম্বুজ মসজিদটি কুমিল্লার অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন। প্রতিদিন শত শত মানুষ এ মসজিদ দেখতে আসেন। নামাজ আদায় করেন।
ঐতিহাসিক গ্রন্থ রাজমালায় ইতিহাসবিদ কৈলাস চন্দ্র সিংহ উল্লেখ করেন, কুমিল্লা নগরের শাহ সুজা মসজিদ একটি ইষ্টক নির্মিত বৃহৎ মসজিদ। শাহ সুজা ত্রিপুরা রাজ্য জয় করে চিরস্মরণীয় হওয়ার জন্য এটি নির্মাণ করেন। একই গ্রন্থে আরও উল্লেখ আছে, ত্রিপুরার মহারাজা গোবিন্দ মাণিক্য বাংলার সুবাদারের নাম স্মরণীয় রাখার জন্য অনেক অর্থকড়ি ব্যয় করে এ মসজিদ নির্মাণ করেন। যেভাবেই নির্মিত হোক না কেন, এটি কুমিল্লার অন্যতম স্থাপত্যশৈলী।
সরেজমিনে দেখা যায়, মসজিদটিতে ছয়টি মিনার রয়েছে। দৈর্ঘ্য ৫৮ ফুট, প্রস্থ ২৮ ফুট। কিবলা প্রাচীরের পুরুত্ব ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি আর পূর্ব প্রাচীরের পুরুত্ব ৪ ফুট ২ ইঞ্চি। বারান্দার প্রস্থ ২৪ ফুট। তিনটি মেহরাব রয়েছে এতে। এ মসজিদের গম্বুজ নির্মাণে খিলান পদ্ধতি, দুই পাশের গম্বুজ নির্মাণে স্কুইঞ্চ ও পেনডেনটিভ উভয় পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন বলেন, স্কুইঞ্চ হলো গম্বুজ তৈরির ক্ষেত্রে অষ্টকোনাকার পর্যায়ে আনার জন্য যে স্থাপত্য বিন্যাস করা হয়, সেটি। অন্যদিকে পেনডেনটিভ হলো মসজিদের ভার ও গম্বুজ তৈরি করার পদ্ধতি।
কুমিল্লা জেলার ইতিহাস বই থেকে জানা যায়, শাহ সুজা মসজিদের গম্বুজের শীর্ষে পদ্ম ফুলের নকশা ও তার ওপরে রয়েছে কলসি। গম্বুজের চারদিকে রয়েছে পদ্ম পাপড়ির মারলন নকশা। মসজিদের খিলানগুলো চতুর্কেন্দ্রিক রীতিতে তৈরি। মসজিদের ফটক ধবধবে সাদা রঙের।
ইতিহাসবিদদের মতে, এ মসজিদের উদ্বোধনী খুতবা পড়েছিলেন সম্রাট শাহজাহানের আত্মীয় ও মোগল বংশের লোক কাজী মনসুরুল হক। বারবার এ মসজিদ সংস্কার হয়। ১৮৮২ সালে জনৈক ইমাম উদ্দিন এ মসজিদের বারান্দা নির্মাণ করেন।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ রায়হান আহমেদ বলেন, মসজিদটির দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ মুসল্লিদের মুগ্ধ করে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে নতুন নতুন মুসল্লি যুক্ত হন। এ মসজিদ মোগলটুলী এলাকাকে ভিন্নভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়।
২০১০ সালের ২৪ জানুয়ারি শাহ সুজা মসজিদ কমিটি দুটি ফলকে মসজিদের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। এতে পর্যটক ও নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিরা মসজিদের ইতিহাস জানতে পারেন।
মসজিদ কমিটির সভাপতি সফিকুল ইসলাম শিকদার বলেন, মসজিদটি কুমিল্লার অন্যতম ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক নিদর্শন। আমরা মসজিদের মূল নকশা ঠিক রেখেই সংস্কারকাজ করি। কোথাও কোনো দেয়াল ধসে গেলে কিংবা পলেস্তারা খসে পড়লে সংস্কার করি।
২০০৩ সাল থেকে এ মসজিদে নামাজ পড়ান খতিব মাওলানা মুফতি খিজির আহমদ কাসেমী। তিনি বলেন, প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে বহু মুসল্লি এখানে নামাজ পড়তে আসেন। জোহরের নামাজের সময় মুসল্লি বেশি আসেন। মসজিদে ১৮টি কাতারে সহস্রাধিক লোকের নামাজ পড়ার সুযোগ রয়েছে। জুমার নামাজে মুসল্লি ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
স্থানীয় ইতিহাসবিদ আহসানুল কবীর বলেন, শাহ সুজা প্রায় ২০ বছর এ অঞ্চলে রাজত্ব করেন। এ অঞ্চলকে মেহেলকুল বলা হতো। এখানে মসজিদ নির্মিত হওয়ায় মুসলমানদের নামাজের ব্যবস্থা হয়। এ মসজিদই শাহ সুজা মসজিদ, যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক বেশি।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত