বাল্যবিবাহে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি সত্ত্বেও দেশে বাল্যবিবাহের আধিক্য থাকা হতাশাব্যাঞ্জক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও ইউনিসেফের মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০১৯ প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮ বছরের কম বয়সে বাল্যবিবাহের হার ২০০৬ সালে ৬৪ শতাংশ, ২০১২ সালে ৫২ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে ৫১ শতাংশ ছিল। সেই হিসাবে দেশে এখন ৪ কোটি ১৫ লাখ মেয়ে ও নারী বিবাহিত এবং সন্তানের মা। বাল্যবিবাহ কেবল একটি মেয়ের জীবনকেই ধ্বংস করে না, উত্তর প্রজন্মকেও তার দায় বহন করতে হয়।
গত ১০ বছরে বাল্যবিবাহ কমার যে হার দেখা যাচ্ছে, সে হার দ্বিগুণ হলেও ২০৩০ সালে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার হবে প্রায় ৩০ শতাংশ। অথচ সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা হলো ২০৩০ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ সম্পূর্ণ নির্মূল করা। ইউএনএফপিএর প্রতিনিধি ক্রিস্টিন ব্লুখুস বলেছেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ শতাংশ হারে বাল্যবিবাহ কমছে। এই হারে কমলে বাংলাদেশ থেকে বাল্যবিবাহ দূর করতে সময় লাগবে ২১৫ বছর।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি বলেছেন, সরকারের একার পক্ষে বাল্যবিবাহ নির্মূল করা সম্ভব নয়। তার এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত না করেও প্রশ্ন করতে চাই, সরকার কি তার লক্ষ্য পূরণে সচেষ্ট? আরও অনেক সমস্যার মতো বাল্যবিবাহ রোধেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একধরনের আত্মসন্তুষ্টি লক্ষ করা যাচ্ছে। না হলে বাল্যবিবাহ রোধে আমরা এতটা পিছিয়ে থাকব কেন? সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কেউ কেউ করোনাকালের উদাহরণ টানেন। কিন্তু করোনার প্রকোপ তো দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের ওপরই পড়েছিল। তারা উত্তরণ ঘটাতে পারলে আমরা কেন পারলাম না? বাল্যবিবাহ রোধে বহুমাত্রিক পদক্ষেপ নেওয়া এবং সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে যুক্ত করার বিকল্প নেই। বাল্যবিবাহ রোধ আন্দোলনটি শুরু হতে হবে পরিবার থেকেই। কোনো অভিভাবক যাতে ১৮ বছরের আগে মেয়েকে বিয়ে দিতে না পারেন, সে বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন, কাজি, জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষকদের সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। একই সঙ্গে যারা আইনভঙ্গ করে বাল্যবিবাহ দেবেন, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
বাল্যবিবাহের কারণে এলাকায় কেউ শাস্তি পেলে অন্যরা এই কাজ করতে সাহস পাবেন না। আমরা আশা করি, বাল্যবিবাহ রোধে সরকার আরও সতর্ক হবে এবং এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত