চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে রাঙ্গুনিয়ায় কোরবানি গরু বিক্রি করে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার রাজানগরের রানিরহাট বাজার থেকে যুবককে নিজের টর্চার সেল খ্যাত গুদামে আটকে হাতুড়ি দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ১নং ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার শাহেদুল ইসলাম (৩৫) প্রকাশ শাহেদ মেম্বারের বিরুদ্ধে।
নির্যাতনের ১ম ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৭ জুন রাত ৯টায় ও দ্বিতীয় বার নির্যাতনের ঘটনা ঘটে সোমবার ৩ জুলাই। আজ বুধবার (৫ জুলাই) এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার খোরশেদ (২৪) বাদী হয়ে চট্টগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ( সি আর মামলা নং ২৬১/২৩) একটি মামলা করেন।
নির্যাতনের শিকার মো. খোরশেদ উপজেলার ১নং রাজানগর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ভরণছড়ি এলাকার টিলাপাড়া গ্রামের আবদুস সালামের ছেলে।
মামলার এজাহারে মো. খোরশেদ বলেন, আসামী মেম্বার শাহেদ আমার কাছে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা পাওনা হয়। পাওনা টাকা পরিশোধ নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে বৈঠক বসলে পরিষদের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করি। বাকী টাকা ধীরে ধীরে পরিশোধ করার মর্মে চেয়ারম্যান নির্দেশ প্রদান করেন। এদিকে চেয়ারম্যান পবিত্র হজ্ব পালনে দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পর আসামী পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে চাপ সৃষ্টি করেন। উপায় না দেখে আমি আগামী ৭ তারিখ টাকা পরিশোধের সময় নিই। কিন্তু ৭ তারিখের পূর্বেই গত ২৭ জুন রাতে গরু বিক্রি করে বাড়ি ফেরার পথে রানীরহাট বাজারের উত্তর পাশে বগাবিলি রোডস্থ আসামীর দোকানের সামনে আমাকে পথরোধ করে গালিগালাজ করেন।
অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, গালিগালাজের প্রতিবাদ করলে আসামী আমাকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেন। এক পর্যায়ে শার্টের কলার ধরে সেখান থেকে টেনে-হিঁচড়ে বাজারের ভেতর আসামীর টর্চার সেল খ্যাত ফার্নিচারের গুদামে আটকে রাখে। এসময় আমার পকেটে থাকা গরু বিক্রির ৫৪ হাজার ৫’শ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে ‘তোকে মেরে ইছামতী নদীতে তোর লাশ ফেলে দিলে কিছুই হবে না আমার’ বলে হাতুড়ি ও গাছের বাটাম দিয়ে কয়েক দফায় মারধর ও নির্যাতন চালান। পরে এলাকার লোকজন খবর পেয়ে সেখান থেকে আমাকে উদ্ধার করে কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
ভুক্তভূগী অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করেন, হাসপাতালে দুইদিন চিকিৎসা নেয়ার পরে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করি। এবং থানায় অভিযোগ দায়ের করার অপরাধে গত ৩ জুলাই আমাকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে গাছের বাটাম দিয়ে দ্বিতীয় দফায় বেধড়ক মারধর করেন। এখন আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
নির্যাতনকারী ইউপি সদস্য মো. শাহেদ মেম্বার একই ইউনিয়নের ভরণছড়ি এলাকার পটিয়া পাড়া গ্রামের মো. শফি সওদাগরের ছেলে।
অন্যদিকে এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, শাহেদ মেম্বার ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কারণে অকারণে এলাকার নিরীহ মানুষকে নির্যাতন করছে। কিছুদিন আগে ডাব চুরির অপবাদ দিয়ে মসজিদের টিলার দুলালের ছেলে রিমনকেও মারধর করেছে। কেউ তার কুকর্মের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করলেই সে ঐ ব্যাক্তিকে তার টর্চার সেলে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায় । এছাড়াও মেম্বার শাহেদের বিরুদ্ধে পাহাড় কাটা, গাছ কেটে বন উজাড়, ছড়া ভরাট করে জায়গা দখল, মাটি কাটার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক দেড় টাকা জরিমানাসহ ইয়াবা, ফেনসিডিল সেবন ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকারও অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী এডিশনাল পিপি এ্যাড: মো. আবু মনছুর বলেন, ভিকটীম মো. খোরশেদ বাদী হয়ে চট্টগ্রাম চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যার সি আর মামলা নং ২৬১/২৩। মামলা দায়েরের পর আদালত শুনানীন্তে আসামীর বিরুদ্ধে ডাব্লিউ/এ (ওয়ারেন্ট অব এরেস্ট) ইস্যু করেন।
এ বিষয়ে বারবার চেষ্টা করেও অভিযুক্ত মেম্বারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।