জাহাঙ্গীর আলম, জবি প্রতিনিধি: অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদকে দ্বিতীয় মেয়াদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ না দিতে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জে শিক্ষক সমিতির সভাপতি, কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য এবং সমিতির সদস্যবৃন্দের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগগুলো উপস্থাপন করেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. লুৎফর রহমান।
অভিযোগগুলো হলো:
১) কেরাণীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্পের মেয়াদ তিন বার বর্ধিত করা হয়েছে। প্রকল্পে মোট বরাদ্দ প্রায় ১৯২০ কোটি টাকা। প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ বাদে আরও প্রায় ১০০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হওয়ার কথা। মেয়াদ তিনবার বর্ধিত করার পর কাজ হয়েছে খুবই সামান্য পরিমাণে এবং এখনও অর্থের বিরাট অংশ অব্যয়িত রয়ে গেছে।
২) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পত্রনুসারে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে ত্রুটি বিচ্যুতির কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জবি কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছে। এর জন্য দায়ী ড. কামালউদ্দীন আহমদ।
৩) ক্রয় প্রক্রিয়ায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ। এ কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণে ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ আইন ও বিধিবিধান অনুসরনে ব্যর্থ হয়েছে এবং চরম অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক গঠিত প্যানেল রায় দিয়েছে। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। যার ফলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত মূল্যায়ন কমিটি বাতিল করে বিধি অনুসরণপূর্বক নতুন করে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠন করার নির্দেশনা দিয়েছে।
৪) প্রকল্পে লেকের কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে পড়েছে। অদক্ষতার কারণে লেকের বরাদ্য প্রায় ২৪ কোটি থেকে বাড়িয়ে প্রায় ৩৪ কোটি করা হয়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে। এতে সরকারের প্রায় ১০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে।
৫) লেকের কাজ দেয়া হয়েছে এডিএল গ্রুপকে। শোনা গেছে এটি যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরী পরিবারের। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে, সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার, নির্যাতন করেছে, তাদের কীভাবে কাজ দেয়া হল? এর জন্য দায়ী ড. কামালউদ্দীন আহমদ।
৬) বাউন্ডারি ওয়ালের কাজে অতিরিক্ত ব্যয়ে অডিট আপত্তি জানিয়েছে শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর।
৭) বারবার প্লান পরিবর্তন এর কারণে প্রকৌশল ভবন নির্মান কাজে প্রায় ১২ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে শোনা গেছে। বিষয়টি অধিকতর তদন্ত প্রয়োজন রয়েছে।
৮) এছাড়া কোষাধ্যক্ষ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট নিজে উপস্থাপন না করে অন্যকে দিয়ে বাজেট উপস্থাপনের অভিযোগ বার বার শোনা গেছে ।
৯) অর্থ দপ্তরের অনেক আর্থিক অনিয়মের খবর বিভিন্ন সময়ে পত্র পত্রিকায় উঠে এসেছে।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. লুৎফর রহমান বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাতে হচ্ছে যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সম্মানিত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ স্যারের সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কাজে এবং দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্পের কাজে নানা অনিয়মের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যম ও পত্র-পত্রিকায় উঠে এসেছে। আগামী ২৬ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কোষাধ্যক্ষের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। যিনি প্রায় ৫ বছর পূর্বেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন।
বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রেড-১ পদে ৩৬ জন, গ্রেড-২ পদে ৪৬ জন এবং গ্রেড-৩ পদে ৭৪ জন মিলে সর্বমোট ১৫৬ জন অধ্যাপক কর্মরত আছেন উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. লুৎফর রহমান আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকগণের মধ্য হতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত সৎ এবং প্রশাসনিক ও গবেষণায় অভিজ্ঞ শিক্ষকবৃন্দের মধ্য হতে যেকোনো একজনকে কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দানের জন্য সরকারের আশু দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।