টান-টান উত্তেজনার সিরিজে শেষ হাসি ইংল্যান্ডের

4

পাকিস্তানের বিপক্ষে টান-টান উত্তেজনাপূর্ণ টি-টোয়েন্টি সিরিজে শেষ হাসি হাসলো ইংল্যান্ডই। সিরিজে কখনও ইংল্যান্ড এগিয়ে গেলেও আবার দারুন লড়াইয়ে সমতা ফেরায় পাকিস্তান। আবার পাকিস্তান লিড নিলে, লড়াইয়ে ফিরে ইংল্যান্ড। তাই পেন্ডুলামের মত দুলতে থাকা সাত ম্যাচের সিরিজটি শেষ পর্যন্ত ৪-৩ ব্যবধানে জিতলো ইংল্যান্ড।

১৭ বছর পর পাকিস্তানে খেলতে এসে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের নজির গড়লো জশ বাটলার-জনি বেয়ারস্টো-বেন স্টোকসবিহীন ইংল্যান্ড।

গতরাতে সিরিজের সপ্তম ও শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ড ৬৭ রানের ব্যবধানে হারায় পাকিস্তানকে। টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে রান বিবেচনায় এটিই ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়।

প্রথম ছয় ম্যাচ শেষে ৩-৩ সমতা থাকায়, পাকিস্তান-ইংল্যান্ড সিরিজের সপ্তম ও শেষটি রুপ নেয় অঘোষিত ফাইনালে।
লাহোরে অঘোষিত ফাইনালে তিনটি পরিবর্তন এনে টস জিতে প্রথমে বোলিং করতে নামে পাকিস্তান। ব্যাট হাতে নেমে দলকে দারুন সূচনা এনে দেন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার ফিল সল্ট ও অ্যালেক্স হেলস। ৪ ওভারে ৩৯ রান তোলেন তারা।
পঞ্চম ওভারেই বিদায় ঘটে ইংল্যান্ডের দুই ওপেনারের। ওভারের প্রথম বলে হেলসকে ১৮ রানে লেগ বিফোর আউট করেন পেসার মোহাম্মদ হাসনাইন। আর নামের পাশে ২০ রান রেখে রান আউট হন আগের ম্যাচের হিরো সল্ট। দু’জনের ইনিংসেই ৩টি করে চার ছিলো।

একই রানে ৩ বলের ব্যবধানে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেন ডেভিড মালান ও বেন ডাকেট। জুটি বেঁেধই দ্রুত রান তুলতে থাকেন তারা। ৯ ওভার শেষে দলের রান ৯৭তে নিয়ে যান মালান-ডাকেট।

তবে দশম ওভারে রান আউটের ফাঁদে পড়ে কাটা পড়েন ডাকেট। ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৯ বলে ৩০ রান করেন তিনি । তৃতীয় উইকেটে ৩১ বলে ৬২ রান যোগ করেন মালান-ডাকেট জুটি।

ডাকেটের বিদায়ের রান তোলায় ভাটা পড়ে ইংল্যান্ডের। পরের ১৭ বলে মাত্র ১টি ওভার বাউন্ডারি পায় ইংলিশরা। এরমাঝে ব্যক্তিগত ৩১ রানে পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজমের হাতে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান মালান।

জীবন পেয়ে আর পেছন ফিরে তাকাননি মালান। চার নম্বরে নামা হ্যারি ব্রুককে নিয়ে রানের গতি বাড়িয়ে ১৫ ওভার শেষে স্কোরশিট ১৪৯ নিয়ে যান মালঅন।

১৬তম ওভারে আবারও ক্যাচ ফেলেন বাবর। এবার ২৩ রানে জীবন পান ব্রুক। ১৭তম ওভারের তৃতীয় বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ১৩তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান মালান। এজন্য ৩৪ বল খেলতে হয় তাকে।

শেষ ৪ ওভারে ভয়ংকর রুপ নেন মালান ও ব্রুক। এসময় ৫৫ রান তুলেন তারা। ১৭তম ওভারে ১৪, ১৮তম ওভারে ১৪, ১৯তম ওভারে ৭ রান ও মোহাম্মদ ওয়াসিমের করা শেষ ওভারে ২০ রান তুলেন মালান-ব্রুক। তাতেই ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ২০৯ রানের বড় সংগ্রহ পায় ইংল্যান্ড।

চতুর্থ উইকেটে ৬১ বলে অবিচ্ছিন্ন ১০৮ রান যোগ করেন মালান ও ব্রুক। যার মধ্যে ৩২ বলে ৫২ রান অবদান ছিলো মালানের। আর ২৯ বলে ৪৬ রান আসে ব্রুকের ব্যাট থেকে।

শেষ পর্যন্ত ৮টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৭ বলে অনবদ্য ৭৮ রান করেন মালান। ব্রুকের ৪৬ রানের ইনিংসে ১টি চার ও ৪টি ছক্কা ছিলো। পাকিস্তানের হাসনাইন ৩২ রানে ১ উইকেট নেন।

জয়ের জন্য ১০ রানের বড় টার্গেট পায় পাকিস্তান। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ২০০ রানের টার্গেট তাড়া করে ম্যাচ জিতেছিলো পাকরা। সেই সুখস্মৃতি নিয়ে নিজেদের ইনিংস শুরু করে শুরুতেই বড়সড় ধাক্কা খায় পাকিস্তান।

প্রথম ৮ বলের মধ্যে প্যাভিলিয়নে ফিরেন দলের দুই সেরা ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজম। প্রথম ওভারের শেষ বলে ৪ রান করা বাবরকে বিদায় দেন পেসার ক্রিস ওকস। আর দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে দারুন এক ডেলিভারিতে রিজওয়ানকে বোল্ড করেন পেসার রিচ টপলি। দ্বিপক্ষীয় সিরিজে সর্বোচ্চ রানের বিশ^রেকর্ড গড়া রিজওয়ান আজ থামেন ১ রানে।

৫ রানে বাবর-রিজওয়ানকে হারানোর ধাক্কায় খাদের কিনারায় পড়ে যায় পাকিস্তান। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন তিন নম্বরে নামা শান মাসুদ। তৃতীয় উইকেটে ইফতেখার আহমেদকে নিয়ে ২৩ বলে ২৮ ও চতুর্থ উইকেটে খুশদিল শাহর সাথে দলকে ৪৩ বলে ৫৩ রান এনে দেন মাসুদ।

ইফতেখার ১৯ ও খুশদিল ২৭ রানে ফিরলেও, অন্যপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন মাসুদ। পরের দিকে ব্যাটাররা মাসুদের সাথে বড় জুটি বা দ্রুত রান তুলতে পারেননি। এতে ১৫ ওভার শেষেই পাকিস্তানের হার সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এ পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ৯৯।

শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪২ রান করে ম্যাচ ও সিরিজ হারে পাকিস্তান। ৪৩ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৬ রান করেন মাসুদ। ইংল্যান্ডের ওকস ৩টি ও ডেভিড উইলি ২টি উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন মালান। আর সর্বমোট ২৩৮ রান করে সিরিজ সেরা হন ব্রুক। সিরিজে সর্বোচ্চ ৩১৬ রান করেও, খালি হাতে ফিরতে হয় রিজওয়ানকে।