নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: ওসি তদন্ত আরমান হোসেন। চট্টগ্রামের কোতয়ালী থানায় কর্মরত আছেন তিনি। ভোলার ভেলুমিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে তার উত্থান। সেখান থেকে স্থানীয় এক প্রভাবশালী মহলের সুপারিশ নিয়ে তিনি ভোলা সদর থানায় ওসি তদন্ত হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। থানা ভবন, বিশেষ করে থানার ওয়াশরুমই যেন পছন্দ তার। পুরো থানা ভবন এখন সিসি ক্যামেরার আওতাধীন থাকায় ওয়াশরুমে তিনি তার দাবিকৃত অবৈধ টাকা রেখে আসতে বলেন। এভাবেই তিনি বলতে গেলে টাকার কুমিরে পরিণত হয়েছেন।
এরপর থেকেই তিনি যেন আর ধরাকে সরা জ্ঞান করেন না। ভুক্তভোগীদের তিনি থানায় ডেকে এনে টাকা দাবি করতে থাকেন। টাকা দিতে না পারলে অকথ্য নির্যাতন করে হত্যা বা আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করেন। এছাড়াও তিনি বেপরোয়া হয়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরও খুন করেছেন।
চট্টগ্রামে এখনকার কর্মক্ষেত্র কোতয়ালী থানায় ওসি তদন্ত আরমানের বিরুদ্ধে আবারও আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ উঠেছে। থানায় ডেকে নিয়ে ‘মানসিক নির্যাতন’ করায় মিনহাজুল ইসলাম রাফি (২০) নামে এক তরুণ আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার (২০ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর লালখানবাজার টাংকির পাহাড় এলাকায় নিজবাসা থেকে ওই তরুণের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মিনহাজুল ইসলাম রাফি টাংকির পাহাড় এলাকার সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক মো. মামুনের ছেলে।
[caption id="attachment_18385" align="aligncenter" width="482"] ওসি তদন্ত আরমান হোসেন[/caption]
নিহত মিনহাজুল ইসলাম রাফির মা রানু বেগম জানান, এক তরুণীর প্রেম সংক্রান্ত অভিযোগের পর বুধবার কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরমান হোসেন ছেলেকে নিয়ে মা-বাবাকে থানায় যেতে বলেন। সন্ধ্যায় তারা থানায় যান। বেশ কিছুক্ষণ কক্ষে বসিয়ে রাখার পর রাফির মোবাইল নিয়ে নেন এবং তিনজনকে অপমানসূচক বিভিন্ন কথাবার্তা বলেন। আমি আর রাফির বাবা ওনার পা ধরে আধাঘণ্টা বসেছিলাম। তিনি দুই লাখ টাকা দাবি করেন। নয়তো ছেলেকে গ্রেফতার করে আদালতে চালান দেওয়া হবে বলে জানান। আমাদের কাছে ৫ হাজার টাকা আছে জানালে উনি ওনার কক্ষের বাথরুমে রেখে আসতে বলেন। সেখানে টাকা রেখে আসার পর আমাদের ছেড়ে দেন। বাকি টাকা ২৪ তারিখের মধ্যে দিতে বলেন। এরপর আমার ছেলে বাসায় গিয়ে আত্মহত্যা করে। ওসি তদন্ত আমার ছেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী। আমি আমার ছেলেকে হত্যার বিচার চাই।
ভোলা সদরে ওসি তদন্ত আরমানের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভোলায় থাকাকালীনও তিনি রাজনৈতিক নেতাকে খুন করেছেন। সেখানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পরই তাকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়। ভোলায় একটি খুনের মামলার আসামী আরমান। সেই মামলায় এখনও প্রায়ই তাকে ভোলায় গিয়ে হাজিরা দিতে যেতে হয়। এখন চট্টগ্রামে আসার পরও সেই একই কাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি।
[caption id="attachment_18388" align="aligncenter" width="760"] মিনহাজুল ইসলাম রাফি[/caption]
চট্টগ্রামে নিহত মিনহাজুল ইসলাম রাফির আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এক তরুণী থানায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল। সে ওই তরুণীর গোপন ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করেছিল। সেসব অনলাইনে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। অভিযোগ পেয়ে আদালতে অনুমতি নিয়ে তাকে ও তার মা-বাবাসহ থানায় ডেকে বিষয়টি সমাধানের বিষয়ে বলেছি। বাবা-মায়ের জিম্মায় তাকে দেওয়া হয়েছে। এরপর কী হয়েছে তা বলতে পারব না। তবে ভোলার খুনের মামলা এবং ভোলা সদর থানায় থাকাকালীন ওয়াশরুমে টাকা কেলেঙ্কা্রীর বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কিছু না বলেই লাইন কেটে দেন।
দ্বিতীয় পর্বে থাকছে: ঘুষ লেনদেনে ওসি তদন্ত আরমানের 'ওয়াশরুম মডেল'
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত