১২ কোটি টাকার ৭ সেতুতে নেই সংযোগ সড়ক

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিবেদক: পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় অভ্যন্তরীণ সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭টি আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এলজিইডির সাথে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের চুক্তি অনুযায়ী কাজের মেয়াদ দেড় বছর হলেও চার বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ। সেতুর মূল অবকাঠামোর কাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে এক বছরেও বেশি সময় ধরে। এতে সংযোগ সড়ক গুলো পরিনত হয়েছে মরণ ফাঁদে। ঠিকাদারের গাফিলতি কোটি কোটি টাকার সেতুর সুফল বঞ্চিত হচ্ছেন জনগণ। স্থানীয়রা বালু, মাটি ও বাঁশের সাকো বানিয়ে এসব সেতু পার হতে গিয়ে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।

চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে রাখার পরেও নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না এলজিইডি। প্রভাবশালী ওই ঠিকাদারের কাছে যেনো অসহায় এলজিইডি।

উপজেলা এলজিইিড সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে উপজেলার কনকদিয়া জিরো পয়েন্ট এলাকায় আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করে এলজিইডি। ১৮ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫দশমিক ৫ মিটার প্রস্থের সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সেতু নির্মাণে ২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালীর শাহিল এন্টার প্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি এলজিইডি। চুক্তিপত্র অনুযায়ী ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে প্রায় ৪ বছর পার হয়ে গেলেও মূল সেতুর রেলিং ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ হয়নি। দেড় বছরের বেশি সময় ধরে কাজ ফেলে রেখেছেন ঠিকাদার।

শুধু কনকদিয়া ইউনিয়নের জিলনা জিরো পয়েন্ট খালে সেতু নয়, উপজেলার নওমালা ইউনিয়ন, কেশবপুর, ধুলিয়া, মদরপুরা ও কাছিপাড়া ইউনিয়নে আরও ৬টি সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ না করে ফেলে রেখেছেন এ ঠিকাদার। একই অর্থবছরে ১২ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭টি সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করেন শাহিল এন্টারপ্রাইজ। তবে চুক্তিপত্র অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও কাজ ফেলে রেখেছেন ঠিকাদার।

সরেজমিনে কনকদিয়া জিলনা জিরো পয়েন্ট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেতুর মূল অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর রেলিং ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করেই কাজ ফেলে রেখে উধাও হয়ে গেছেন ঠিকাদারের লোকজন। স্থানীয়রা বাঁশের সাকো ও বালু মাটি ফেলে সেতুর পারাপার হচ্ছেন। সংযোগ সড়ক ও রেলিংয়ে থাকা লোহার রডে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। সম্প্রতি এক শিক্ষক গুরুতর আহত হয়ে বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়াও অসংখ্য মটরসাইকেল চালক ও পথচারী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইউনুস হাওলাদার বলেন, কনকদিয়া ইউনিয়নের জিলনা, আয়লা, কারখানা ও কালতা গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র পথ এ সেতু। এছাড়াও কাছিপাড়া ইউনিয়ন, সূর্যমনি, বাকেরগঞ্জ ও বরিশালে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এ সেতু। দীর্ঘদিন ধরে সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় এ পথে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে পথচারী ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা।

কনকদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহিন হাওলাদার জানান, ঠিকাদার খুবই প্রভাবশালী। ব্রিজ ছাড়াও ওই ঠিকাদার অনেক রাস্তা ফেলে রেখেছেন। জনগণের কাছে সরকারকে বিতর্কিত করতেই ঠিকাদার এই কাজগুলো করছেন না। স্থানীয় সংসদ সদস্য একাধিকবার নির্বাহী প্রকৌশলীকে বললেও তারা কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

একই ভাবে সেতুর সংযোগ সড়ক না থাকায় কেশবপুর, ধুলিয়া, নওমালা, কাছিপাড়া ও মদনপুরা ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। প্রায় ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।

ধুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মু. হুমায়ূন কবির বলেন, ধুলিয়ার সাথে উপজেলা শহরের যোগাযোগের একমাত্র সড় কালিশুরী- ধুলিয়া সড়ক। এ সড়কে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করেও ঠিকাদারের লোকজন চলে যায়। একই অবস্থা কালামিয়ার সড়কে সেতুর। প্রতিদিন এই দুই সেতুতে হাজার হাজার মানুষ ভোগিন্তর শিকার হচ্ছেন।

এলজিইডি ও স্থনীয় একটি সূত্র জানায়, পটুয়াখালীতে ঠিকাদারের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। ওই সিন্ডিকেটের অন্যতম প্রভাবশালী ঠিকাদার হলেন গিয়াস উদ্দিন। তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শাহিল এন্টারপ্রাইজ। প্রভাবশালী এ ঠিকাদারের কাছে এলজিইডি জিম্মি হয়ে পড়েছে। বাউফলসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প শেষ না করেই বছরের বছর ফেলে রাখেন এ ঠিকাদার। চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করলেও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন এলজিইিড। এ যেনো ঠিকাদারের কাছে অসহায় এলজিইডি।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শাহিল এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী মো.গিয়াস উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. সুলতান হোসেন জানান, ব্রিজগুলোর এ্যাপ্রোচ সড়ক না হওয়ার জনসাধারণের ভোগান্তি হচ্ছে এটা সত্য। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বহুবার বলা হয়েছে। সর্বশেষ গত মাসের ৬ তারিখ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

জেলা নিবার্হী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ লতিফ হোসেন বলেন, অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারপরেও তারা কাজ করছে না। ঠিকাদারের সাথে চুক্তি বাতিলের সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়ে টিঠি পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলে রিটেন্ডার করে অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা হবে।