কলকাতায় গিয়ে এমপি আনোয়ারুল আজিম (আনার) এর খুন হওয়ার ঘটনায় ক্রমেই লোমহর্ষক বর্ণনা সামনে আসছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, কলকাতায় গ্রেপ্তার কসাই জিহাদ জানিয়েছে, ক্লোরোফর্ম মিশিয়ে অচেতন করে বালিশ চাপা দিয়ে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর কসাই জিহাদ এমপির চামড়া ছাড়িয়ে শরীরের হাড়-মাংস টুকরো করে একাধিক পলিথিনে ঢুকিয়েছে। পরে দুটো ট্রলিতে করে সেই টুকরোগুলো বিভিন্ন জলাশয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবিপি আনন্দ’র প্রতিবেদনে বলা হয়, নিউটাউনে বাংলাদেশের এমপির হত্যাকাণ্ডে সিআইডির কাছে চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে। খুনের ঘটনায় বনগাঁ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জাহিদ নামের এক কসাইকে। মুম্বাই থেকে তাকে মাস দুয়েক আগে কলকাতায় নিয়ে খুনের মূল মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহিন। এমপি আনার নিউটাউনের ফ্ল্যাটে ওঠার ১০ মিনিটের মধ্যেই জাহিদসহ অন্যরা প্রবেশ করেন। একপর্যায়ে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অচেতন করে এমপিকে হত্যা করেন। পরে চামড়া ছাড়িয়ে তার লাশ টুকরো করা হয়।
শুক্রবার বারাসত আদালতে জিহাদকে হাজির করানো হলে তাকে ঘিরে ধরেন সাংবাদিকেরা। একটাই প্রশ্ন উড়ে আসতে থাকে চারদিক থেকে, ‘কেন মারলে?’ জিহাদের মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। পুলিশের গাড়ি থেকে নেমে তিনি আদালতে ঢুকে যান। কোনও প্রশ্নের জবাব দেননি।
সিআইডি সূত্রে প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করার পর জিহাদকে ভাঙড়ের একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আজিমকে খুনের পর সেখানেই দেহাংশ ফেলা হয়েছে বলে জেরায় উঠে এসেছে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে সেখান থেকে কোনও দেহাংশই মেলেনি। তাই শুক্রবার জিহাদকে দেহাংশ উদ্ধারের প্রয়োজনেই হেফাজতে চেয়েছে সিআইডি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হানিট্র্যাপের শিকার হয়েছিলেন বাংলাদেশের সংসদ সদস্য। শিলাস্তি রহমান নামের এক মহিলাকে সামনে রেখে তাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছিল। নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নিউ টাউনের ওই আবাসনে। তারপর সেখানে তাকে খুন করা হয়। চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে দেহ কাটা হয় টুকরো টুকরো করে। হাড় এবং মাংস আলাদা করে তাতে হলুদ মাখান অভিযুক্তরা। যাতে বাইরে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলা যায়, রান্না করার জন্য মাংস নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেই দেহাংশ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত জানতে পেরেছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় গিয়ে বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন আনোয়ার উল আজিম আনার। এরপর থেকে আর তার খোঁজ মেলেনি। ফোন করলেও বারবার রিং হয়ে কেটে যায়। সাংসদের শেষ মোবাইল লোকেশন দেখাচ্ছিল ভারতের বিহারে। গত ১৪ মে থেকে তার ফোন বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, গত আট দিন ধরে নিখোঁজ থাকলেও তার ফোন থেকে পরিবারের সদস্যদের কাছে মেসেজ পাঠানো হয় যে সে নয়াদিল্লি চলে গেছে। এরপর জানা যায়, তিনি ১৩ মে কলকাতার নিউটাউনের একটি বাড়িতে যান, সেই বাড়িতেই তাকে খুন করা হয়।