কলকাতায় গিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম (আনার) নির্মমভাবে খুন হওয়ার ঘটনায় ভারতীয় মিডিয়ার খবরে এক আগারওয়ালের নাম উঠে এসেছে। ওই আগারওয়াল স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে জড়িত বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টিভি৯ বাংলা।
টিভি৯ এর প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি-জামায়াত আমলে আনোয়ারুলের নাম যখন মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায়, সেসময় তিনি পালিয়ে ভারতের নদীয়ার মাজদিয়ায় আশ্রয় নেন সুভাষ আগারওয়াল নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে। সেখানেই তার সাথে পরিচয় হয় বরানগরের গোপাল বিশ্বাসের সাথে। এই গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতেই তিনি উঠেছিলেন গত ১২ মে। এই সুভাষ আগারওয়াল, গোপাল বিশ্বাস এবং আনোয়ারুল আজিম দীর্ঘদিনের বন্ধু।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সুভাষ আগারওয়াল এবং গোপাল বিশ্বাসের বিরুদ্ধেও স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগ রয়েছে। এই চোরাচালানের পয়েন্টগুলো নিয়েই খুনের রহস্যজট খোলার দিকে এগুচ্ছে পুলিশ।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে এমপি আনার ভারতে গিয়ে প্রথমে যে কথিত বন্ধু ও স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে উঠেছিলেন, সেই গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ। ভারতীয় সূত্র বলছে, পুলিশ কমিশনারেট ও সেখানকার গোয়েন্দা পুলিশ আনারের বরানগরের বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়ি গিয়ে সব সত্য জানতে চাইছে। সিআইডির গোয়েন্দারা বরাহনগর ১৭/৩ মণ্ডলপাড়া রোডে গোপালের বাসভবনেও যান। এ্কইসাথে আগারওয়ালকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। গোপাল বিশ্বাস বা আগারওয়ালের সাথে বাংলাদেশের আর কোনো স্বর্ণ চোরাকারবারীর যোগসাজস রয়েছে কিনা- সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এমপি আনার খুনের ঘটনায় স্বর্ণ চোরাচালান সংক্রান্ত মোটিভ থাকতে পারে বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এর তদন্ত সংশ্লিষ্টরাও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন। একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, কলকাতায় স্বর্ণের ব্যবসা ছিল সংসদ সদস্য আনারের। এমপি আনার এবং আমেরিকা প্রবাসী এক মাস্টারমাইন্ড সীমান্তে স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডি কারবার নিয়ন্ত্রণ করতেন। চোরাই স্বর্ণের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। পাঁচ কোটি টাকার চুক্তিতে এই হত্যাকাণ্ড হয় বলে জানতে পেরেছে ডিবি।
এরই ধারাবাহিকতায় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের খুন হওয়ার ঘটনায় ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়া সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ভারতীয় গোয়েন্দারা। ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো অফিসার অন্তু কুমার ও জয়দীপসহ চারজন ভারতীয় পুলিশ ডিবি কার্যালয়ে গ্রেপ্তার সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। এছাড়াও খুনের ক্লু বের করতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এর তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গেও ভারতীয় গোয়েন্দা ও পুলিশ সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান প্রদান করছে। প্রয়োজনে বাংলাদেশের গোয়েন্দা ও তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ভারতে ঘটনাস্থলে যাবেন বলে জানা গেছে।
এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে ঢাকায় এখন পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- আনারের বন্ধু ও খুনের মাস্টারমাইন্ড আকতারুজ্জামান শাহীনের বান্ধবী শিলাস্তি রহমান, ভাড়াটে খুনি আমানুল্লাহ ওরফে খুলনার চরমপন্থি শিমুল ভুুঁইয়া এবং তানভীর ভুঁইয়া। অন্যদিকে ভারতেও কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সিয়াম এবং কসাই জিহাদ রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় গিয়ে বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন আনোয়ার উল আজিম আনার। এরপর থেকে আর তার খোঁজ মেলেনি। ফোন করলেও বারবার রিং হয়ে কেটে যায়। সাংসদের শেষ মোবাইল লোকেশন দেখাচ্ছিল ভারতের বিহারে। গত ১৪ মে থেকে তার ফোন বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, গত আট দিন ধরে নিখোঁজ থাকলেও তার ফোন থেকে পরিবারের সদস্যদের কাছে মেসেজ পাঠানো হয় যে সে নয়াদিল্লি চলে গেছে। এরপর জানা যায়, তিনি ১৩ মে কলকাতার নিউটাউনের একটি বাড়িতে যান, সেই বাড়িতেই তাকে খুন করা হয়।