বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অসুস্থ এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। দলমত নির্বিশেষে দেশের অধিকাংশ মানুষই তার সুস্থতাও চান। নব্বই পরবর্তী সময়ে প্রধান দুই নেত্রী খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনা নিজেদেরকে ওই আসনে বসাতে সক্ষম হয়েছেন। এজন্যই ওয়ান ইলেভেনের সময় মাইনাস টু ফর্মুলাও কার্যকর করতে চেয়েছিল তখনকার সেনা সমর্থিত ওয়ান ইলেভেন সরকার। তবে সেটি সফল হয়নি। এদেশের প্রেক্ষাপটে সেই চিন্তা সফল হওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনাও নেই।
অবশ্য খালেদা জিয়ার সৌভাগ্য অনেকটাই পরাহত বিগত ১৫ বছর ধরে। ওয়ান ইলেভেনে তার নিজের ও দলের যে শনির দশা শুরু হয়েছিল, সেটি এখনও কাটেনি। ওয়ান ইলেভেন শেষে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরও এখন পর্যন্ত চলমান তার প্রায় সব মামলা। এসব মামলায় একাধিক বছর জেলও খেটেছেন তিনি। মহামারি শুরুর পর বিশেষ বিবেচনায় তাকে জামিনে বাসায় থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। সেসময় থেকেই তিনি বাসায় জামিনে রয়েছেন। তবে সুস্বাস্থ্য আর তার তেমন একটা সঙ্গী হয়নি। আর্থ্রাইটিস, ডায়বেটিস, কিডনি ও লিভারসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন তিনি।
খালেদা জিয়া জ¦রে আক্রান্ত হয়েছেন। এখনকার জ¦র নিয়ে অবশ্য সেভাবে হেলাফেলা করার সুযোগ নেই। ডেঙ্গুও এখন বলতে গেলে মহামারি আকার ধারণ করেছে। এছাড়া আগের মহামারিও শঙ্কা জাগায়। সেজন্য বিএনপি খালেদা জিয়ার বিষয়ে ছাড় দিতে চায় না। এজন্য জ¦রে আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। অবশ্য দলের পক্ষ থেকে বহু আগে থেকেই বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে বলা হলেও সরকার এখন পর্যন্ত তাতে সায় দেয়নি। সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হচ্ছে, বিএনপি খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা নয়, বরং তার অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি করছে।
এমন প্রেক্ষাপটে আবারও হাসপাতালে ভর্তিও পর প্রশ্ন উঠছে: খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় বিএনপির লাভ হচ্ছে নাকি ক্ষতি? এই প্রশ্নের উত্তরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একমত যে, খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় বিএনপির লাভের পাল্লা-ই ভারী। প্রথমত, খালেদা জিয়া সুচিকিৎসা পাচ্ছেন। এতে তার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্বিতীয় লাভটা হচ্ছে রাজনৈতিক। খালেদা জিয়ার জামিনের শর্তই হচ্ছে তিনি সরাসরি রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এতে বাসায় থাকাকালীন তার সাথে দলের মহাসচিবসহ নেতৃবৃন্দ সাক্ষাত করতে গেলে বিষয়টি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বলেই বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু হাসপাতালে তার সাথে দেখা করতে গেলে সেই গুঞ্জনের সম্ভাবনা নেই। বরং দলের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক বিষয় নয়, বরং অসুস্থ রোগীকে দেখতে যাওয়ার বিষয়টিই সামনে আসবে। এতে চিকিৎসা ও রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা দুটোই সমানতালে চলবে। তৃতীয়ত, বিএনপি এখনকার আন্দোলন সংগ্রাম যেভাবে জমিয়ে তুলছে, সেই পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার পুরনো মামলাগুলো নতুন করে তাজা করার চেষ্টা করবে সরকার। তবে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে আবার নতুন করে মামলায় জড়ালে বিষয়টি ভালোভাবে নেবে না দেশের মানুষ এবং বিদেশিরাও। এদিক থেকেও খালেদা জিয়ার হাসপাতালে থাকার বিষয়টি বিএনপির জন্য লাভজনকই বটে।
তবে রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতি যাই হোক না কেন, খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে দেশবাসী। হোক সেটা তার নিজের দলের নেতাকর্মী, কিংবা বিরোধী মতাদর্শের কেউ। রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের বাইরেও সবাই চায় খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে আবার বাসায় ফিরে যাক।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত