প্রত্যক্ষদর্শী সহকর্মীর বয়ানে সাংবাদিক না‌দিম হত্যাকাণ্ড

জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমকে হত্যার ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তার সহকর্মী সাংবাদিক আল মুজাহিদ বাবু। বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর নেতৃত্বে এ হামলা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।

আল মুজাহিদ বাবু বলেন, ‘বুধবার (১৪ জুন) রাত দশটার দিকে বকশীগঞ্জ বাজার থেকে আমি ও লালন নামে একজন সাংবাদিক বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। এসময় নাদিম তার অফিস বন্ধ করে পাশের দোকানে পান খাচ্ছিলেন। আমাদের দেখে তিনি ডাক দেন। পরে আমরা দাঁড়াই। তখন সাংবাদিক লালন একটি ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে যান।’

তিনি বলেন, ‘সেসময় চেয়ারম্যানের দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা খারিজ হয়ে গেছে বলে জানান নাদিম। এসব কথা বলতে বলতে মোটরসাইকেলে করে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে পাটহাটি মোড়ের‌ সেই জায়গায় আমি একটু আগে চলে যাই ও নাদিম একটু পিছিয়ে পড়েন। পেছন থেকে নাদিম আমাকে মামা বলে ডাক দেন।’

‘এসময় আমি তাকিয়ে দেখি বাবু চেয়ারম্যানের ভাগ্নে ও সাধুরপাড়া ইউনিয়ন তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম, তাঁতী লীগের সদস্য মনির এবং ইমামসহ ৬/৭ জন নাদিমকে মারছেন। তারা মারতে মারতে নাদিমকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।’

‘এসময় চেয়ারম্যানের ছেলে রিফাত ইট দিয়ে নাদিমকে মাথায় আঘাত করে। পাশেই অন্ধকারে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু, মেম্বার আমর আলী ও মানিক মিয়া দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি নাদিমকে বাঁচাতে গেলে তারা আমাকে মারার হুমকি দেন। পরে আমি সাংবাদিক লালনকে ফোন দেই। ফোন দিলে তিনি দৌড়ে আসেন। লালনকে দেখে তারা নাদিমকে মারধর থামিয়ে চলে যান। পরে নাদিমকে উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।’

পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সবাই গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের টিম মাঠে থাকবে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিছুদিন আগে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান‌ মাহমুদ আলম বাবুকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। স্ত্রীর মর্যাদার পেতে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। ওই সংবাদ সম্মেলনের খবর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদ প্রকাশের ঘটনার জেরে গোলাম রব্বানী নাদিমসহ কয়েকজন সাংবাদিকের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন ইউপি চেয়ারম্যান। ওই মামলা বুধবার ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল খারিজ করে দেন। রাতে সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

নাদিমের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন রিফাত বলেন, সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর নেতৃত্বে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। চেয়ারম্যানের ছেলেসহ কয়েকজন নাদিমের ওপর হামলা করেন।