শৈলকুপায় মিথ্যা মামলা দিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ‘সন্ত্রাসী-মাদক ব্যবসায়ী’ শিমুল

64

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানার ১নং ত্রিবেণী ইউনিয়নের অন্তর্গত পদমদি গ্রামের পাড়া মহল্লায় দৌরাত্ম বেড়েছে বখাটে ও কিশোর গ্যাং এর। শৈলকুপা থানার একসময়ের চিহ্নিত অপরাধী ও পুলিশের ক্রসফায়ার লিস্টের কুখ্যাত সন্ত্রাসী পদমদি গ্রামের শিপুল ওরফে কাজী শিমুল এর নেতৃত্বে রয়েছেন। সে দীর্ঘদিন পলাতক থেকে এখন এলাকায় এসে নতুন করে আবার আতঙ্ক ছড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

এর অংশ হিসেবে তার পথের কাঁটা যারা, সেসব সম্মানিত ব্যক্তিদের কিশোর গ্যাং দিয়ে হামলা ও আক্রমণ করে উল্টো ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা করাচ্ছেন কাজী শিমুল। এ কাজে তার প্রধান সহযোগী, কিশোর গ্যাং লিডার ও এসব মামলার বাদী তার ভাতিজা কাজী রাজিব।

জানা যায়, ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা থানার ১নং ত্রিবেণী ইউনিয়নের পদমদি গ্রামের একজন চিহ্নিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এবং মাদক ব্যবসায়ী শিপলু ওরফে শিমুল। সে এলাকার নিরীহ মানুষের জমিজমা দখল সহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত। তার নামে শৈলকূপা থানায় আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে মামলা আছে। শৈলকুপা থানার নথিপত্র ঘাটলে এখনো তার অতীত কার্যকলাপের সুদীর্ঘ বিবরণ পাওয়া যায়। সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানের কারণে বেশ কিছুদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল কাজী শিমুল। এখন সে গ্রামে ফিরে এসেছে। পুরনো রূপে ফিরতে সে তার সাথে যুক্ত করেছে এলাকার কিছু বখাটে পথভ্রষ্ট কিশোর আর কিছু চাটুকারকে। শিমুল তার ভাতিজা কাজী রাজিবকে দিয়ে কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা প্রতিনিয়ত দুর্বিষহ করে তুলছে।

স্থানীয়রা জানান, দিনে দুপুরে এরা কাউকে ধরে মারছে, কারো জমি জোর করে দখল করে নিচ্ছে, কাউকে বা পথিমধ্যে অপমান করছে। আবার কাউকে বা মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। গ্রামের সাধারণ মানুষ এদের যন্ত্রণায় আজ অতিষ্ঠ এবং বিরক্ত। কিন্তু কেউ ভয়ে কোন প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। এদের যন্ত্রণায় ও সমাজবিরোধী কার্যকলাপে মান-সম্মানের ভয়ে এক প্রকার আতঙ্কে এই দিন কাটছে পদমদি গ্রামের অনেক সম্মানিত পরিবারের।

জানা যায়, সম্প্রতি কাজী শিমুল ও রাজিবের নেতৃত্বাধীন এই গ্যাংয়ের হামলার শিকার হয়েছেন সোনালী ব্যাংকের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। জোর করে পথিমধ্যে তার মোবাইল ও টাকা-পয়সা কেড়ে নিয়েছে। তবে সাবেক ওই ব্যাংকার সন্ত্রাসী গ্যাংয়ের সাথে কোনো ঝামেলায় জড়াতে চান না বলে আইনগত পদক্ষেপেও যাননি। এটাকে সুযোগ মনে করে আবারও চাঁদার দাবিতে আবারও ওই সাবেক ব্যাংকারকেই নানা ধরনের মানসিক নির্যাতন শুরু করে কাজী শিমুল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি ওই অপরাধীরা একটা ন্যূনতম মানহীন নামসর্বস্ব অনলাইন পোর্টালে ওই সাবেক ব্যাংকার ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় সংস্কৃতিকর্মী এবং তার স্বজনদের নিয়ে মিথ্যা খবর প্রকাশ করে।

সন্ত্রাসী বাহিনী চাঁদা না পেয়ে থানা পুলিশের নাম ব্যবহার করার অপচেষ্টা চালায়। মিথ্যা মামলার মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে চাঁদা আদায়ের করতে চায় সন্ত্রাসী বাহিনী। কিন্তু শৈলকুপা থানার ওসি এই সন্ত্রাসী বাহিনী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানায় মামলা নেননি। সেজন্য উল্টো ওসির বিরুদ্ধেও সেই ভুয়া নিউজে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে শিমুল বাহিনী। এরপরও বিভিন্নভাবে চাপপ্রয়োগ করতে থাকে শৈলকুপার অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী শিমুল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা।

এরই ধারাবাহিকতায় শেষ পর্যন্ত মামলা নিতে বাধ্য হন শৈলকুপা থানার ওসি। মামলা পর্যালোচনায় দেখা যায়, শিমুল বাহিনী মিথ্যা মামলার স্ক্রিপ্টে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। ওসির বিরুদ্ধে করা নিউজে শিমুল গ্যাং উল্লেখ করেছিল একরকম তথ্য, অথচ মামলার এজাহারে দিয়েছে পুরো উল্টো তথ্য।

স্থানীয়রা জানান, কাজী শিমুল এলাকায় আতঙ্কজনক সন্ত্রাসী। তার অত্যাচারে পুরো পদমদী এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। মাঝখানে কিছুদিন ভালো ছিলাম। ক্রসফায়ারের আসামী হওয়ায় সে পলাতক ছিল। এখন আবার ফিরে এসে অরাজকতা তৈরি করছে। ক্রসফায়ারের আসামী কিভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে ঘুরে বেড়ায় তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা আশা করি, সে এবং তার গ্যাং শিগগিরই আইনের আওতায় আসবে। এজন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।

শৈলকুপা থানার ওসি বলেন, বাদীপক্ষের মূল ভিকটিম খারাপ প্রকৃতির লোক। সে অস্ত্রধারী এবং মাদক ব্যবসায়ী। ক্রসফায়ারের আসামি হওয়ায় ২০১৫-১৬ সালের দিকে তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়েছিল। সে এলাকায় থাকে না, কুষ্টিয়ায় পালিয়ে থাকে। সেজন্য নিরীহ লোকদের নামে মামলা করতে আসায় প্রথমে মামলা নেইনি। পরে গতকাল মামলা নেওয়া হয়েছে। মামলার বাদী রাজিবও বেশিরভাগ সময় কুষ্টিয়া থাকে বলে শুনেছি। এজাহারের অভিযোগ তদন্ত করে এ বিষয়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, শিমুল বাহিনীর সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন সময় পত্র-পত্রিকায় নিউজ প্রকাশিত হয়েছে এবং এদের হামলা ও মিথ্যা মামলার শিকার ভুক্তভোগী অনেকে স্থানীয় পত্রিকায় প্রতিবাদলিপিও দিয়েছেন। কিন্তু এসব কোন কিছুই তাদের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না। কতিপয় রাজনৈতিক দুষ্টচক্রের পৃষ্ঠপোষকতায় এদের অপরাধ দিনের পর দিন মাত্রা ছাড়াচ্ছে। সদিচ্ছা থাকা সত্তেও দুষ্টচক্রের চাপের কারনে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারছে না বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।