গণহত্যাকারী স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের আগেই তার সরকারি বাসভবন গণভবনের নতুন নামকরণ করেছিল শিক্ষার্থীরা। গুগল ম্যাপে গণভবন লিখে সার্চ করলেই ভেসে উঠত ‘খা*কি মা*গির বাসভবন’। এটা যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়, সেটি দেখেন শেখ হাসিনাও। এরপর পলকের উপর রাগান্বিত হয়ে যান শেখ হাসিনা। তখন থেকেই মূলত দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে যান সজীব ওয়াজেদ জয়ের ‘করাপশন পার্টনার’ হিসেবে খ্যাত আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক।
গণভবন সংশ্লিষ্ট তৎকালীন একটি সূত্র প্রিয়দেশ নিউজকে জানায়, ইন্টারনেট ফিরে আসার পরও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন একপর্যায়ে অশ্লীল বাক্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা গণভবনের নামকরণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়। এটা শেখ হাসিনার নজরে আসলে তিনি প্রচণ্ড রাগান্বিত হয়ে যান। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলককে তলব করে তিনি এর ব্যাখ্যা চান। পলক জানান, গুগল ম্যাপ ওপেন সোর্স। এখানে যে কেউ যেকোন জায়গার নামকরণ করতে পারে। যেকোন জায়গা মিসিং থাকলে ওই জায়গা গুগল ম্যাপে যুক্ত করতে পারেন। তবে এতে শেখ হাসিনা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এত বছর এত প্রজেক্ট নিয়েও আইসিটি মন্ত্রণালয় কী কাজ করছে- রাগান্বিত অবস্থায় তিনি জানতে চান। এতে শেখ হাসিনার কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন জুনায়েদ আহমেদ পলক।
সূত্র জানায়, এ ঘটনার পর থেকে জুনায়েদ আহমেদ পলককে মিডিয়ায় কোনো ধরনের কথা বলতে নিষেধ করেন শেখ হাসিনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে জুনায়েদ আহমেদ পলক নিজ এলাকা নাটোরের সিংড়ায় চলে যান। তখন থেকেই তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত মিডিয়ার সামনে এককভাবে কথা বলতে থাকেন।
‘জুনায়েদ আহমেদ পলক নাটোরে গিয়ে ভগ্ন মনোরথে শিক্ষার্থীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। এতেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাকে ডেকে এনে ভৎর্সনা করেন। ওবায়দুল কাদেরের দাবি ছিল, এভাবে জনসম্মুখে ক্ষমাপ্রার্থনা করলে সারাদেশে নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে। তবে জুনায়েদ আহমেদ পলক প্রধানমন্ত্রীর ক্রোধের বিষয়টি বুঝতে পেরে একবার পদত্যাগপত্র নিয়ে এলেও তিনি সেটি গ্রহণ করেননি। শেখ হাসিনার ধারণা ছিল, একজনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করলে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে যাবে। সেজন্য তিনি পদত্যাগপত্র দেওয়ার বিষয়ে পলককে নিষেধ করেন।’
শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে গত ৬ আগস্ট দেশত্যাগের চেষ্টা করেন পলক। তবে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক হন তিনি। বিমানবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে আটক করলে পরবর্তীতে তাকে হেফাজতে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিমানবন্দরের একটি সূত্র তখন প্রিয়দেশকে জানায়, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি পাড়ি দেওয়ার জন্য তিনি বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। এর প্রায় ৮ দিন পর তাকে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার দেখায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে দফায় দফায় ইন্টারনেট বন্ধ রাখা নিয়ে তদন্তের মুখে রয়েছেন পলক। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, তার নির্দেশেই ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয় এবং সেবা থেকে বঞ্চিত হন দেশের মানুষ। এছাড়া ইন্টারনেট বন্ধ করে গণহত্যা চালাতে সহযোগিতা করার অভিযোগও রয়েছে। এমনকি ডাটা সেন্টারে সন্ত্রাসীদের হামলা হয়েছে, এর কারণে ইন্টারনেট বন্ধ রয়েছে বলেও নিজ নামে জনগণের মুঠোফোনে সরকারি মেসেজ পাঠিয়েছেন জুনায়েদ আহমেদ পলক। এতকিছু করলেও শেখ হাসিনার পতনের আগেই পতনের শিকার হন জুনায়েদ আহমেদ পলক।