খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে উদ্ভূত ভবিষ্যতের যে কোনো খাদ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশবাসীর প্রতি খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আজ অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে সভাপতিত্বকালে তিনি এ আহ্বান জানান।

কোভিড-পরবর্তী পরিস্থিতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ তিনটি আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে ২০২৩ সাল একটি ‘সঙ্কট বছর’ হতে পারে উল্লেখ করে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মন্ত্রিসভা খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যুতে একাধিক পর্যবেক্ষণ এবং নির্দেশনা জারি করে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকাতে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা আহ্বান জানায়।

বৈঠকের পর এখানে বাংলাদেশ সচিবালয়ে ব্রিফিংকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, বৈঠকে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যক্রমের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আগামী বছর সংকটের বছর হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
নির্দেশনা ও পর্যবেক্ষণের কথা বলতে গিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সবার আগে খদ্যে উৎপাদন সবচেয়ে বাড়াতে হবে, কারণ, যতই খাদ্য আমদানির কথা বলা হোক না কেন উদপাদন না হলে সমস্যা থাকবেই।

যদিও রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার সংকট থাকায়, যেসব দেশ ঋণ নিয়ে কাজ করে বা উচ্চ আমদানি রয়েছে তারা ফেডারেল রিজার্ভের হার বৃদ্ধির কারণে সমস্যায় পডছে, তিনি বলেন।
আনোয়ারুল আরো বলেন, এ কারণে, অর্থ প্রদানের সময় বেশি টাকা দিতে হচ্ছে এবং অর্থ গ্রহণের সময় টাকাটা কম নিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আর এজন্য, খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সকলকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং এর সম্ভাবনা রয়েছে।’

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দ্বিতীয়ত, অদক্ষ শ্রমিকের পরিবর্তে দক্ষ শ্রমিক বিদেশে পাঠাতে হবে। দক্ষতা শ্রমিকদের জন্য উচ্চ বেতনে কাজ করার সুযোগ নিয়ে আসবে। সংশ্লিষ্ট দেশের প্রয়োজন অনুসারে এই সুযোগ আরো বাড়বে এবং এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ শেষে যথাযথ প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ দেয়া হবে।

তিনি বলেন, তৃতীয়ত, রেমিটেন্স বাড়াতে কিছু দিকনির্দেশনা প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে বা হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখন থেকে রেমিটেন্স পাঠাতে পৃথক কোন ফি নেয়া হবে না। যে ব্যাংকে টাকা পাঠানো হবে, সেই ব্যাংকই এই বিষয়টি দেখবে এবং আরো কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, চতুর্থত, বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, আর এজন্য বিনিয়োগের শর্ত আরো কিছুটা সহজ করা যায় কিনা- তা দেখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই এই ইস্যুটি নিয়ে কয়েকবার আলোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি (বিডা)’র কয়েকটি শাখা খোলা হবে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ছাড়পত্রের জন্য কাউকে মিউনিপ্যালিটি বা সিটি কর্পোরেশনে যেতে হবে।

এছাড়াও, মন্ত্রিপরিষদ সব সময় খাবারের মজুদ ভাল অবস্থায় রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। এ ব্যাপারে বর্তমান খাদ্য মজুদ পরিস্থিতি অনেক ভাল আছে। বেসরকারি খাতকেও বিপুল পরিমাণ খাদ্য আমদানি করার অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং এই পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-কেও খাদ্য আমদানিও উপর থেকে কর হ্রাস করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এনবিআর অবিলম্বে এ নিয়ে আলোচনা ও বাস্তবায়ন করবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো বলেন, সকল অনাবাদি জমিতে চাষাবাদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।