এখলাস উদ্দিন নাঈম
পিলখানা হত্যাকাণ্ড আওয়ামী লীগ এবং ভারত মিলে ঘটিয়েছে উল্লেখ করে বাহিনীর নাম ‘বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর)’ পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়েছে ‘নির্যাতিত অসহায় বিডিআর পরিবার’। একইসাথে সেই ঘটনার পুনঃতদন্ত চেয়ে ন্যায়বিচার কামনা করেছে তারা।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানায় ‘নির্যাতিত অসহায় বিডিআর পরিবার’।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সবার মতই আমরাও এটাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড মনে করি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার পরিবারের সকল সদস্যদের হত্যার প্রতিশোধ এবং ২০০১ সালের ২৮ এপ্রিল কুড়িগ্রামের বড়াইবাড়ি যুদ্ধের প্রতিশোধ হিসেবে আগ্রাসী ভারত সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় ভিনদেশী ঘাতকদের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়ার উদ্দেশ্যে পিলখানায় দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাদের সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। দেশের জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি এড়াতে বিডিআর বিদ্রোহ হিসাবে নামকরণ করার চেষ্টা করা হয়, যা ছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রথম ধাপ।
‘‘১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পরিবার হত্যার শিকার হয়। শেখ মুজিব কর্তৃক প্রণীত বাকশালী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কিছু সেনা কর্মকর্তার মাধ্যমে। এই কারণে খুনি শেখ হাসিনা তখন থেকেই গৌরবময় সেনাবাহিনী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা অন্তরে পোষণ করতেন, তারই ফলশ্রুতিতে শেখ হাসিনা ও তার দলের রাজনৈতিক নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ ফজলে নূর তাপস, মির্জা আজম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনদের মাধ্যমে বিদেশি ঘাতকদের সহায়তায় এবং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র এর পরিকল্পনায় ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।
এছাড়া আপনারা তথা দেশের সমস্ত জনগণ অবগত আছেন যে ২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল কুড়িগ্রাম জেলার বড়াইবাড়ি সীমান্ত ফাঁড়ি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ আন্তর্জাতিক সীমারেখা লঙ্ঘন করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বড়াইবাড়ি সীমান্ত ফাঁড়িসহ আশেপাশের এলাকা দখল নিতে চায়। বিডিআরে নিয়োগ প্রাপ্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চৌকস সেনা কর্মকর্তা, তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত আ ল ম ফজলুর রহমান এবং তৎকালীন বিডিআর রংপুর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল শাকিল আহমেদ (পরবর্তীতে বিডিআরের মহাপরিচালক) এর সুযোগ্য নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় বলিয়ান হয়ে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বিডিআর জওয়ানরা ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফকে পরাজিত করেন এবং কিছুসংখ্যক সদস্যকে জীবিত অবস্থায় আটক করেন। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, তৎকালীন ভারতীয় মদদপুস্ট আওয়ামী সরকার গুরুত্বপূর্ণ এই কাজের জন্য বিডিআর এর প্রধান মেজর জেনারেল আ ল ম জলুর রহমানকে পুরস্কার দেওয়ার বদলে তিরস্কার হিসেবে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়। মূলত তখন থেকেই ভারতীয় নির্দেশনায় ও হাসিনার পরিবারের সদস্যদের হত্যার প্রতিশোধ এবং বড়াইবাড়ি যুদ্ধের প্রতিশোধ হিসেবে ঘটানো হয় ইতিহাসের ন্যাক্কারজনক হত্যাকাণ্ড।’’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস এবং আওয়ামী সরকার উক্ত ঘটনার পেছনে অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। হাজারীবাগের ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি তোরাব আলি নিম্ন আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হলেও সরকারের একান্ত ইচ্ছায় উচ্চ আদালত থেকে বেকসুর খালাস পায়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে শেখ ফজলে নূর তাপসরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে।
বক্তব্যে তারা আরও বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা, বিডিআর জাওয়ান ও সিভিলসহ ৭৪ জন শহীদ হয়েছেন। ওনাদের পরিবারকে সান্তনা দেবার মত ভাষা দেশ বা জাতির নেই। তাই এই হত্যাকাণ্ডের নির্ভরযোগ্য পুনরায় তদন্ত হওয়া দরকার এবং দ্রুত দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এর আগে অবশ্যই জেলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত সহ সকল নির্দোষ বিডিআর জাওয়ানকে নির্বাহী আদেশে মুক্ত করে পুনরায় চাকরিতে পুর্নবহাল করতে হবে।
বিডিআর পরিবার জানায়, কোন ন্যায়বিচার তারা পায়নি। এখন পর্যন্ত কাউকে জামিনও দেয়া হয়নি। স্বৈরাচারী শাসক হাসিনা বিচার বিভাগকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মনগড়া কাউকে ফাঁসি, কাউকে যাবজ্জীবন ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে কারাগারে আটক রেখেছে। সাজার মেয়াদ শেষ করে যাতে বিডিআর সদস্যরা কোন প্রতিবাদ ও সত্য উদঘাটন করতে না পারে সেজন্য বিস্ফোরক মামলার নামে আরেকটি মামলা দিয়ে বিগত ১৬ বছর যাবৎ কারাগারে আটক করে রেখেছে। আমরা চাই এই ঘটনার সঠিক, নির্ভরযোগ্য একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে সঠিক তদন্ত করা হোক।
৮ দফা দাবি
১. ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার আমলের প্রহসনমূলক সকল মামলা ও প্রহসনমূলক সকল রায় বাতিল করতে হবে।
২. ১৬ বছর যাবৎ কারাগারে থাকা নির্দোষ সকল বিডিআর সদস্যকে নিঃশর্ত কারামুক্তি দিতে হবে।
৩. হাইকোর্টের রীট অনুযায়ী দ্রুত পুনঃতদন্ত শুরু করতে হবে।
৪. নিরীহ বিডিআরদের রিমান্ডে নির্যাতনের ফলে মৃত্যুর সঠিক কারন উদঘাটন করে দোষীদের শাস্তি প্রদান করতে হবে।
৫. সকল বিডিআর সদস্যদের (আনুমানিক ১৮৫২০ জনকে) চাকরীতে পুনর্বহাল করতে হবে।
৬. সকল সেনা শহীদ, বিডিআর শহীদ ও ক্ষতিগ্রস্থ সকল বিডিআর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ (বেতন, ভাতা ও পেনশন) পূনর্বাসন করতে হবে।
৭. ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ রাইফেলস্ নাম পুনঃস্থাপন করতে হবে।
৮. ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারীকে শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা করতে হবে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত