চট্টগ্রাম ব্যুরো: থ্রি হুইলার অটোটেম্পো রেজিষ্ট্রেশন ও রুট পারমিটের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম অটোরিকশা অটোটেম্পো শ্রমিক লীগ (রেজিঃ নং চট্ট ১৪৬৯) এর সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ৮ ফেব্রুয়ারী চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার বরাবর থ্রি হুইলার অটোটেম্পোর মালিক ফারুক, জসিম ও সাদ্দাম- কথিত শ্রমিক লীগ নেতা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, থ্রি-হুইলার অটোটেম্পো ইঞ্জিঃ নং R7F 2887188 চ্যাসিস নং MBX 0000DFVG 480921, থ্রি-হুইলার অটোটেম্পো ইঞ্জিঃ নং BBZWHJ 48074, চ্যাসিস নং MB2A41AZXHWJ 80720 ও থ্রি-হুইলার অটোটেম্পো ইঞ্জিঃ নং R7F 28870000, চ্যাসিস নং MBX0000DRVG 480316 মডেলের গাড়ীগুলো চট্টগ্রাম বিআরটিএ থেকে রেজিষ্ট্রেশন ও রুট পারমিট করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ২০২২ সালে গাড়ি প্রতি ৪৫,০০০ টাকা করে মোট ১,৩৫,০০০ টাকা গ্রহণ করেন নজরুল ইসলাম। কিন্তু গাড়িগুলোর রেজিষ্ট্রেশন ও রুট পারমিট করে না দিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর রাহাত্তার পুল থেকে চকবাজার পর্যন্ত চট্টগ্রাম অটোরিকশা অটোটেম্পো শ্রমিক লীগ (রেজিঃ নং চট্ট ১৪৬৯) এর ব্যানারে রীট পিটিশন মামলা নং ৬৭৫৬/২০২২ এর আদেশের অধীনে এই থ্রি-হুইলার অটোটেম্পোগুলো কিছুদিন রাস্তায় চালানোর ব্যবস্থা করে দেন শ্রমিক নেতা নজরুল। কিন্তু গাড়িগুলো রাস্তায় চালাতে গিয়ে কথিত শ্রমিকলীগ নেতা নজরুল ইসলামের ভাই মোঃ সুমনসহ লাইনম্যান মনির হোসেন ওরফে মইন্যার মাধ্যমে প্রতিটি গাড়ীর ভর্তি ফি ৩০,০০০ টাকা ও দৈনিক চাঁদা ৩০০ টাকা করে মাসিক ৩,০০০ টাকা আদায় করেন। সর্বশেষ গত ২৮ জুলাই ২০২২ হাইকোর্ট রীট পিটিশন মামলা নং ৬৭৫৬/ ২০২২ আদেশ বাতিল হলে সিএমপি ট্রাফিক বিভাগ গাড়ীগুলো রাস্তায় চলাচল বন্ধ করে দেন। গাড়ি গুলো চলাচল বন্ধ হওয়ায় কথিত শ্রমিকলীগ নেতা নজরুল ইসলামের কাছে রেজিষ্ট্রেশন ও রুট পারমিটের জন্য দেওয়া টাকা ও গাড়ির ফাইল ফেরত চাইলে তা অস্বীকার করে তাদেরকে হত্যা করে লাশ গুম ও মিথ্যা মামলায় জেল খাটানোর হুমকি দিলে নিরুপায় হয়ে এই ৩ জন পরিবহন মালিক বাকলিয়া থানায় অভিযোগ দিতে গেলে গত ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ বিকাল ৪টায় শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক ৫নং ব্রীজের মুখে নজরুল ইসলাম, মোঃ সুমন, মইন্যা, কুত্তা রাশেদসহ অজ্ঞাত চার/পাঁচ জন হাজির হয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে থানায় অভিযোগ দিতে বাধা দেয়ায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ কমিশনার বরাবর আবেদন করেন ভুক্তভোগীরা।
আরেক ভুক্তভোগী চট্টগ্রাম অটোরিকশা-অটোটেম্পো শ্রমিক লীগের সভাপতি উজ্জল বিশ্বাস জানান, চট্টগ্রাম অটোরিকশা অটোটেম্পো শ্রমিক লীগের স্বঘোষিত সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খোকন পেশাদার একজন চাঁদাবাজ ও ধান্ধাবাজ শ্রেণির লোক। তার বিরুদ্ধে আমি একাধিক অভিযোগ দায়ের করেছি। তার নিজস্ব কিছু লোকজন নিয়ে সিন্ডিকেট গঠন করে বিভিন্ন দপ্তর থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ, বিআরটিএ কর্মকর্তা ও পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করা তার নেশা ও পেশা। শুধু তাই নয়, শ্রমিক লীগ নেতার সাইনর্বোডে পরিবহন মালিকদের মিথ্যা আশ্বাস ও তথ্য দিয়ে তাদের ব্যবহার করে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের চাপে রেখে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, রোড পারমিট, সিএনজি স্ক্র্যাপকরণ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে মালিকদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে আসছে এই নেতা। নজরুল ইসলাম খোকনের এই প্রতারণার ফাঁদে পরিবহন মালিকরা সর্বহারা তো হচ্ছেনই তার পাশাপাশি পরিবহন সেক্টরে অসন্তোষ চলছে। নজরুল ইসলাম খোকন নিজেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সর্ববৃহত্তম সংগঠন শ্রমিক লীগের নেতা দাবী করলেও ২০০৭ সালের জামায়াতে ইসলামীর শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
নজরুল ইসলাম খোকনের রোষানলের শিকার হওয়া নগরীর হালিশহর থানার উপ-পরিদর্শক সোহেল রানা বলেন, ‘আমাকে থানা থেকে নজরুল ইসলাম খোকনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগের তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে আইনানুগ যা আনুষ্ঠানিকতা দরকার, সবই করেছি। কিন্তু হঠাৎ নজরুল ইসলাম খোকন আমার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন পুলিশ কমিশনার মহোদয়ের কাছে। তার বিপরীতে আমিও একটি জিডি করি নজরুল ইসলাম খোকনের বিরুদ্ধে। নজরুল ইসলাম খোকনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মারধর, হুমকিসহ বেশ কয়েকটি মামলা আছে নগরীর বিভিন্ন থানায়।
নজরুল ইসলাম খোকন বলেন, এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। বিআরটিএ কর্মকর্তাদের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করায় তারা এখন ভাড়াটে লোকজন দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করছে।