বাউফলে বিতর্কিত ছাত্রলীগ যুগের অবসান

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিবেদক: নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সমালোচিত পটুয়াখালী বাউফল উপজেলা ছাত্রলীগ। দীর্ঘ এক যুগ ধরে দল উপদলে বিভক্ত সংগঠনটি। প্রায়ই ঘটে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। অবশেষে স্বস্তি ফিরেছে ছাত্রলীগে। প্রায় ১২বছর পর গত সোমবার রাতে (১০ জুলাই) উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করেন জেলা ছাত্রলীগ।

জেলা সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ ঘোষণা দেয়া হয়। একই সাথে নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত দপ্তরে জমা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। কমিটি বিলুপ্ত করায় গতকাল আনন্দ মিছিল করেছে ছাত্রলীগের একাংশ।

দলীয় সূত্র জানায়, গত ১ যুগ ধরে বাউফলে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। স্থানীয় এমপি ও পৌর মেয়র দ্বন্দ্বের কারণে ছাত্রলীগের রাজনীতি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ২০১১ সালে ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে মাহমুদ হাসান রুবেলকে সভাপতি ও মশিউর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়।

পরে মশিউরকে বাদ দিয়ে সামসুল কবির নিশাতকে করা হয় সাধারণ সম্পাদক। এই কমিটি স্থানীয় এমপির অনুসারী হিসেবে পরিচিত। পরের বছর সাইদুর রহমান হাসানকে সভাপতি ও রাহাত মাহমুদ জামশেদকে সাধারণ সম্পাদক করে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করে জেলা ছাত্রলীগ। যা পৌর মেয়র অনুসারী হিসেবে পরিচিত। দুই পক্ষ পৃথক পৃথক
কর্মসূচি পালন শুরু করে। দেখা দেয় দ্বন্দ্বেদ্বর। এ নিয়ে ঘটে অসংখ্য রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। তৈরি হয় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি। স্থবির হয়ে পড়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। পৌরসভা, সরকারি কলেজ ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের ইউনিট গুলোতে পাল্টা-পাল্টি কমিটি গঠন করে উভয় পক্ষ। ২০১৯ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের আলামিন ত্বোহাকে সভাপতি ও তানজিল অভিকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে নতুন কমিটি ঘোষণা করে জেলা ছাত্রলীগের

তৎকালীন সভাপতি হাসান সিকদার ও সাধারন সম্পাদক ওমর ফারুক। ওই কমিটি নিয়ে শুরু হয় নাটকীয়তা। কমিটি ঘোষণার পর জেলা সাধারন সম্পাদক ওমর ফারুক অস্বীকার করেন তিনি কমিটিতে স্বাক্ষর করেনি। একদিন পর ওই কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তারপরেও নিজেদের সভাপতি/সম্পাদক পরিচিয় দিয়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে থাকতে ত্বোহা- অভি। তারাও স্থানীয় এমপির অনুসারী। ছাত্ররাজনীতির ইতি টানে রুবলে- নিশাত কমিটি।
এতে করে এমপি অনুসারী ত্বোহা- অভি ও পৌর মেয়র অনুসারী হাসান-জামশেদ পক্ষের মধ্যে নতুন করে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ছাত্রলীগের দুপক্ষের ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে ঘটে সংঘাত। ওই ঘটনার জেরে মেয়র অনুসারীদের হামলায় গুরতর আহত হন পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম ফারুক। এছাড়াও কয়েক ভাগে বিভক্ত ছাত্রলীগের নেতা জড়িয়ে পড়েন মাদক ব্যবসা, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে।

অবশেষ উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে স্বস্তি ফিরেছে। নতুন কমিটিতে পদ-পদবী পেতে ইতিমধ্যে দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করেছেন পদপ্রত্যাশীরা। স্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত লবিং তদবির শুরু করেছেন তারা।

তথ্য বলছে, উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে সভাপতি/সম্পাদক পদে এমপি অনুসারীদের মধ্যে আলোচনায় শীর্ষ রয়েছেন সাবেক পৌর ছাত্রলীগের সদস্য সচিব ইবনে ফারুক সৌমিক, মেহদেী হাসান ইনান, জেলা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি মো. সজিব, নাজিরপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম রাকিব, নাজিরপুর ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ
মো. রোমান, আদাবাড়িয়া ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রহমান, কালাইয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেদোয়ান ইসলাম শাকিল, ছাত্রলীগ নেতা মো. সাকিবুল ইসলাম (সাকিব)। অপরদিকে পৌর মেয়র অনুসারীদের মধ্যে আলোচনায় শীর্ষে রয়েছেন বাউফল উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আরিফ হোসেন, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইউসুফ রানা ও ছাত্রলীগ নেতা রুদ্র। এছাড়াও উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি/সম্পাদক পদে অর্ধশত পদপ্রত্যাশী রয়েছেন। পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী বিবাহিত, অছাত্র, মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

তৃণমূল ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন। নির্বাচনে শেখ হাসিনা মনোনীত প্রার্থী পক্ষে কাজ করার বিকল্প নেই। আওয়ামীলীগকে আবারও ক্ষমতায় আনতে ছাত্রলীগকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করতে হবে। সেক্ষেত্রে সকল দ্বন্দ্ব বাদ দিয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করবে, আওয়ামী পরিবারের সন্তান,
নেশা মুক্ত ক্লিন ইমেজ এমন নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে হবে।

পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. তানভীর হাসান আরিফ বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বাউফল উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে। একই সাথে নতুন কমিটির জন্য সিভি আহ্বান করা হয়েছে। যেহেতু সামনে জাতীয় নির্বাচন সেক্ষেত্রে জেলা ছাত্রলীগ অধিকতর যাচাই বাচাই শেষে যোগ্য, নেশা মুক্ত, অবিবাহিত এবং যাদের ছাত্রত্ব আছে তাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। আর ছাত্রলীগের গ্রুপিংয়ের কোনো ঠাই নেই। ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে
বিশ্বাসী। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে ছাত্রলীগ কাজ করবে।